প্রধান ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ প্রদর্শনকারী মানচিত্র অঙ্কন (drawing of map showing broad physiographical divisions)
টপোমানচিত্র থেকে প্রদর্শিত অঞ্চলটির ভূপ্রকৃতি বর্ণনা করার সময় প্রধান ভূপ্রাকৃতিক বিভাগগুলি কোথায় কীভাবে বন্টিত হয়েছে তা দেখানোর জন্য টপোমানচিত্রটির ক্ষুদ্র প্রতিরূপ অঙ্কন করা প্রয়োজন। নিম্নলিখিতভাবে প্রস্তুত করা হয়। যেমন-
① কোনো টপোমানচিত্রকে সমান আয়তন বিশিষ্ট মানচিত্র খাতায় অঙ্কন করে প্রধান ভূপ্রাকৃতিক বিভাগগুলিকে সেই মানচিত্রে দেখানো বাস্তবক্ষেত্রে অসম্ভব। ফলে সরবরাহকৃত টপোমানচিত্রটিকে আনুপাতিক হারে ছোটো করতে হবে।
②টপোমানচিত্রকে স্কেল অনুসারে আনুপাতিক হারে ছোটো দুটি পদ্ধতিতে করা যায়। যথা-
(a) সরবরাহকৃত টপোমানচিত্রটি 1: 50,000 স্কেলসূচক ভগ্নাংশের হয়ে থাকে এবং এইরূপ মানচিত্রের অক্ষাংশগত ও দ্রাঘিমাগত বিস্তার 15' 15' হয়। সমগ্র মানচিত্রটি 5'x 5' অক্ষাংশগত ও দ্রাঘিমাগত বিস্তারের ৭টি গ্রিড ভাগ করা।
এরূপ একটি অক্ষাংশগত ও দ্রাঘিমাগত বিস্তার যুক্ত গ্রিড বেছে নতে হবে। বেছে নেওয়া গ্রিডটির সমান দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের প্রকৃত পরিমাপ অনুসারে খাতায় একটি গ্রিড অঙ্কন করতে হবে। এই গ্রিডের দৈর্ঘ্য বরাবর ও প্রস্থ বরাবর সমান মাপের তিনটি করে ভাগ করা হল। অর্থাৎ খাতায় অঙ্কিত গ্রিডটি সমান মাপের 9 টি ভাগে বিভক্ত হবে এবং খাতায় অঙ্কিত গ্রিডটির স্কেলসূচক ভগ্নাংশ বা R.F. মূল মানচিত্রের সমান হবে।
(b) আগের পদ্ধতি ছাড়াও টপোমানচিত্রটির আয়তন চোটো করে অর্থাৎ ক্ষুদ্র স্কেলের টপোমানচিত্র অঙ্কন করেও ভূপ্রাকৃতিক বিভাগগুলিকে প্রদর্শন করা যেতে পারে। এই পদ্ধতি কয়েকটি ধাপে সম্পূর্ণ করা যায়। যেমন-
Step-: প্রথমে টপোমানচিত্রটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ স্কেলের সাহায্যে মেপে (সেমিতে) নিয়ে তাকে 2 সেমিতে 1 কিমি বা 1 সেমিতে 0.5 কিমি (টপোমানচিত্রের স্কেল) ধরে ভূমি ভাগের দূরত্ব পরিণত করতে হবে। ধরা যাক এক্ষেত্রে প্রমাণ চিত্রটির উত্তর দক্ষিণ দূরত্ব 54.6 সেমি এবং পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্ব 50.6 সেমি। সুতরাং মানচিত্রের কেল অনুসারে উত্তর দক্ষিণ ভূমি ভাগের প্রকৃত দূরত্ব হবে যথাক্রম 27.3 কিমি এবং 25.3 কিমি।
প্রাকৃতিক বিভাগ (physiography division):
ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অঞ্চলটি খুবই ব্যবচ্ছিন্ন প্রকৃতির। মধ্যভাগে ও দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে উপবৃত্তাকারে প্রসারিত রয়েছে অপেক্ষাকৃত নিম্ন সমতল ভূমি। এখানে সর্বাধিক উচ্চতা 783 মিটার ও সর্বনিম্ন উচ্চতা 220 মিটার, আপেক্ষিক উচ্চতার পার্থক্য 563 মিটার, দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বদিকে আঞ্চলিক ঢাল। কানু, কাদকাই, জাপলা প্রভৃতি নদী দ্বারা ব্যবচ্ছিন্ন। অন্যদিকে অপেগাকৃত উচ্চ ঢালযুক্ত ও বন্ধুর ভূমিভাগ নদী উপত্যকার মধ্যবর্তী অংশে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বদিকে শৈলশিরার আকারে প্রসারিত হয়েছে।
উচ্চতার তারতম্যের ভিত্তিতে এই অঞ্চলটিকে তিনটি অংশে বিভত্ত (করা যায়। যথা-
① প্রকৃত মালভূমি (plateau proper)
② মালভূমির প্রান্তদেশ (plateau fringe)
③ ক্ষয়প্রাপ্ত সমভূমি (erosional plain)
প্রকৃত মালভূমি (plateau proper):
400 মিটারের অধিক উচ্চতায় এই ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগটি সংকীর্ণ ও বিক্ষিপ্ত শৈলশিরার আকারে অবস্থিত। শৈলশিরার বিভিন্নাংশে অবস্থিত বিভিন্ন উচ্চতার পাহাড় ও পর্বত এই মালভূমির অন্যতম ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। বাদাম পাহাড় এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এটি একটি শঙ্কু আকৃতির পাহাড় যার উচ্চতা 783 মিটার। এছাড়া বামনী পাহাড় (577 মি.) বুধিপাট পাহাড় (612 মি.) বুবাহিরানা (593 মি) উল্লেখযোগ্য। পাহাড়গুলির পানেটাল খুবই খাড়াই। ঊর্ধ্বাংশে এ ঢাল উত্তম আকৃতির হলেও নিম্নাংশে বা পাদদেশীয় অংশে এমেশঃ অবতল আকৃতির ধারণ করেছে। শঙ্কু আকৃতির পাহাড় ছাড়াও সমতল মস্তক বিশিষ্ট কল্ (col) প্রভৃতি ভূমিরূপ লক্ষ্য করা যায়। শঙ্কু বা সমতল মস্তক বিশিষ্ট পাহাড় ও উচ্চভূমি থেকে অসংখ্য কেন্দ্র বিমুখ নদী বিন্যাসের উদ্ভব হয়েছে।
মালভূমির প্রান্তদেশ (pleateau fringe):প্রকৃত মালভূমি অঞ্চলের প্রান্তদেশে সংকীর্ণ বলয়ের আকারে এই ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগটি অবস্থিত। এর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উচ্চতা যথাক্রমে 400 মিটার ও 320 মিটার। এই অংশটি কানু, জাপলা, কাদকাই প্রভৃতি নদীর 1400 উপনদীগুলি দ্বারা ভীষণভাবে ব্যবচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থিত বেশ কতকগুলি স্বল্পোচ্চ পাহাড়, অবশিষ্ট পাহাড়, নোল, স্যাল, বদভূমি, প্রস্তরময় ভূমি প্রভৃতি এই অংশের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বহন করে। এই অংশের ভূমির স্থানীয় ঢাল দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত প্রধান প্রধান নদী উপত্যকার দিকে এবং অবতল আকৃতির।
ক্ষয়প্রাপ্ত সমভূমি (erosional plain):
ক্ষয়প্রাপ্ত সমভূমি অঞ্চল প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ স্থান জুড়ে প্রসারিত এই ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলটি প্রধান প্রধান যেমন, কানু, কাদকাই, বিলমুদ্রা, জাপলা প্রভৃতি নদী উপত্যকায় বিস্তৃত। এই অংশের সংকীর্ণ অংশ নদীগুলির উৎস অংশের দিকে প্রসারিত। এখানকার আঞ্চলিক ঢাল দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে। তবে স্থানীয়ভাবে ঢালের তারতম্য লক্ষিত হয়। এখানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উচ্চতা যথাক্রমে 320 মিটার ও 260 মিটার। সমোচ্চ পাড় বিশিষ্ট নদী উপত্যকা, প্রস্তরময় ভূমি, বদভূমি প্রভৃতি এই অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। এছাড়া 275 মিটার, 274 মিটার প্রভৃতি উচ্চতার অবশিষ্ট পাহাড় ও লক্ষ্য করা যায়।