welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

রাসায়নিক আবহবিকার(Chemical Weathering)



ধারণা (Concept)

রাসায়নিক আবহবিকারে শিলায় রাসায়নিক পরিবর্তন হয় এবং শিলায় নতুন খনিজের উদ্ভব হয়। রাসায়নিক আবহবিকারে জলের ভূমিকা প্রধান। বায়ুর অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, জল প্রভৃতি শিলার খনিজের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে বিয়োজিত করে, ফলে শিলা ভেঙে যায়। একে রাসায়নিক আবহবিকার বলে।

যে সমস্ত শিলায় নানা খনিজের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় এবং খনিজগুলি সহজে দ্রবণীয় হয়, সেই শিলাগুলি রাসায়নিক আবহবিকারকে প্রভাবিত করে। বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকারের মধ্যে তারতম্য লক্ষ করা যায়। সাধারণত উয় আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার অধিক লক্ষ করা যায়। রাসায়নিক আবহবিকারে প্রধান খনিজগুলি বিয়োজিত হয়, অপ্রধান খনিজগুলি রূপান্তরিত হয়। ফলে শিলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। সেগুলি হল-(a) শিলাতে বিভিন্ন খনিজ সহ উপাদানের পরিমাণ বাড়তে থাকে। (b) শিলায় পীড়ন ও টানের উদ্ভব হয়। (c) শিলায় কম আপেক্ষিক গুরুত্বের খনিজের উদ্ভব হয়। (d) শিলায় বিয়োজিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের সূক্ষ্ম কণার সৃষ্টি করে। (e) শিলায় স্থায়ী খনিজের সৃষ্টি হয়। (f) শিলায় অবস্থানরত উপাদানগুলি গতিশীল প্রকৃতির হয়। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদান যথা-অক্সিজেন (O_{2}) কার্বন ডাই-অক্সাইড (C*O_{2}) জল (H_{2}*O) প্রভৃতি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে।

বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক আবহবিকার (Types of Chemical Weathering)

1. অঙ্গারযোজন (Carbonation): শিলার মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন খনিজের সঙ্গে বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইড বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে শিলায় যে আবহবিকার ঘটায়, তাকে অঙ্গারযোজন বলে। বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে বৃষ্টির জল C*O_{2} - র সঙ্গে দ্রবীভূত হয়ে মৃদু কার্বনিক অ্যাসিড (H_{2}*C*O_{3}) দ্রবণ তৈরি করে। এই দ্রবণ চুনাপাথর জাতীয় শিলার ওপর পড়লে ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেট তৈরি করে, যা সহজেই দ্রবীভূত হয়। তখন শিলা বিকারগ্রস্ত হয়ে দ্রুত অপসারিত হয়। নীচে সমীকরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হল-

C*O_{2} + H_{2}*O = H_{2}*C*O_{3} (কার্বনিক অ্যাসিড)

CaCO₃ (চুনাপাথর) + H₂CO₃ Ca (HCO3)2 (ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেট)

এই কার্বনিক অ্যাসিডযুক্ত জল বিভিন্ন শিলার সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়। এই প্রক্রিয়াতে প্রধানত খনিজ পদার্থের সাথে কার্বনেট বা বাই কার্বনেট আয়ন বিক্রিয়া করে। ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি খনিজ সমৃদ্ধ শিলার সঙ্গে কার্বনিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় কার্বনেট সৃষ্টিকারী শিলাটি দ্রুত আবহবিকারগ্রস্ত হয়। জলের মধ্যে এই অ্যাসিডের উপস্থিতির জন্য ধাতব পরিবর্তন ঘটিয়ে রাসায়নিক আবহবিকারে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম কার্বনেট বা চুনাপাথর বিশুদ্ধ জলে দ্রবীভূত হয় না। কিন্তু যখন কার্বনিক অ্যাসিডযুক্ত জল এর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে চুনাপাথর ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেটে পরিণত হয়। তা তখন সহজেই জলীয় দ্রবণে অপসারিত হয়।

2. জলযোজন (Hydration): রাসায়নিক আবহবিকারের এটি একটি উল্লেখযোগ্য ধরন। রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় খনিজের সাথে জল যুক্ত হয়ে খনিজের যে পরিবর্তন হয়ে থাকে, তাকে জলযোজন বলে। অনেক সময় শিলার মধ্যস্থ খনিজ পদার্থের সঙ্গে জল অণু সরাসরি যুক্ত হয়; এক্ষেত্রে জল শোষণের ফলে খনিজ পদার্থগুলি ফুলে ফেঁপে ওঠে ও সেই সঙ্গে তার আয়তন বেড়ে যায় তখন শিলার কিছু বিশেষ খনিজ অন্য নতুন খনিজে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম সালফেট জিপসামে পরিণত হয়।

CaSO, (ক্যালসিয়াম সালফেট)+ 2H2O = CaSO4, 2H₂O (জিপসাম) এক্ষেত্রে খনিজের আয়তন প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায় এবং পীড়নের সৃষ্টি হয়। ফলে খনিজের কণাগুলির মধ্যে সংঘবদ্ধতা আলাদা হয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক কম্পন হ্রাস পাওয়ায় গৌণ খনিজগুলি নমনীয় হয়ে পড়ে, সেই সঙ্গে নতুন খনিজের সৃষ্টি হয়।

আবার অনেক খনিজের জল শোষণ করার ক্ষমতা অধিক থাকার ফলে তারা বায়ুমণ্ডল থেকে অধিক জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে আয়তনে বৃদ্ধি পায় এবং নতুন খনিজ তৈরি করে। এতে চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিলার মধ্যে যে টান ও পীড়নের সৃষ্টি হয়, তাতে শিলাটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হেমাটাইট জলের সঙ্গেঙ্গ বিক্রিয়া করে লিমোনাইটে পরিণত হয়।

2Fe₂O₃ (হেমাটাইট)+ 3H2O=2Fe2O3, 3H2O (লিমোনাইট)

3. জারণ (Oxidation): কোনো খনিজ পদার্থের সাথে অক্সিজেনের রাসায়নিক সংযোগের ফলে অক্সাইড সৃষ্টির পদ্ধতিকে জারণ বলে। অক্সিজেন জল, কার্বনিক অ্যাসিডের মতো বিভিন্ন খনিজ পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করতে পারেনা। কিন্তু যেসব শিলায় সালফাইড, কার্বনেট কিংবা সিলিকেট যৌগ অবস্থান করে, সেই সমস্ত শিলার সাথে অক্সিজেন সহজেই বিক্রিয়া করে থাকে। অর্থাৎ লৌহ যৌগ শিলার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিলার যে অংশে লোহার পরিমাণ অধিক সেই অংশে লোহার সাথে O₂ যুক্ত হওয়ায় সেই অংশে হলুদ বা বাদামি রং দেখতে পাওয়া যায়। এই রাসায়নিক আবহবিকার প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনই মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। তবে বৃষ্টির জল কিংবা বায়ুর জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে দ্রুত জারণ হয়। এই প্রক্রিয়ায় লোহা সমৃদ্ধ খনিজের সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন (O₂) বিক্রিয়া করে। সাধারণত এক্ষেত্রে লোহার কঠিন ফেরাস অক্সাইড (FeO) বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতার সহযোগে কোমল ফেরিক অক্সাইডে (2Fe₂O₃, 3H₂O) রূপান্তরিত হয় এবং শিলা দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়।

 4FeO +3H2O+O2=2Fe2O3, 3H2O 

(ফেরাস অক্সাইড)       (লিমোনাইট)

লোহা যখন ফেরাস অক্সাইড রূপে অবস্থান করে, তখন এটি কঠিন হয়, কিন্তু জারণ-এর ফলে এটি ফেরিক অক্সাইডে পরিণত হয় এবং সহজেই ভেঙে যায়। তাই লৌহজাত দ্রব্য সহজে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যায়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ভূ-অভ্যন্তরে অবস্থানরত লৌহপিন্ডের বর্ণ নীলাভ বা কালচে হলেও ভূপৃষ্ঠে আসার পর লাল রঙে পরিণত হয়। অর্থাৎ ফেরাস অক্সাইড থেকে ফেরিক অক্সাইডে পরিণত হয়।জারণ প্রক্রিয়ার বিপরীত হল বিজারণ প্রক্রিয়া। সাধারণত বায়ুপ্রবাহীন জলমগ্ন পরিবেশে এই প্রক্রিয়া কার্যকরী হয়, এই ধরনের বিক্রিয়ার প্রভাবে জারিত লোহা থেকে অক্সিজেন বিযুক্ত হয়। এজন্য খনিজের রং সবুজ অথবা ধূসর হয়ে যায়। বিজারণ প্রক্রিয়ায় শিলায় অবস্থিত খনিজগুলি নরম হয়ে সহজে বিয়োজিত হয়।

4. আর্দ্র বিশ্লেষণ (Hydrolysis): শিলার খনিজে জলের বিক্রিয়াকে আর্দ্র বিশ্লেষণ বলে। এক্ষেত্রে খনিজ ও জলের অণুর একসঙ্গে মিশে যে আকরিক পুনর্গঠন করে, তাকে আর্দ্র বিশ্লেষণ বলে। এক্ষেত্রে জল ও খনিজের অণুর একসঙ্গে বিয়োজন বিক্রিয়া ঘটায়। উদ্বুতা বৃদ্ধি পেলে জলের অণুগুলি সংশ্লিষ্ট স্থান থেকে আয়ন অনুসারে আলাদা হতে থাকে। এই ভাবে শিলাস্তরের বিয়োজন ঘটে। কিন্তু জল অণু খনিজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হয়ে ভেঙে তৈরি হওয়া হাইড্রক্সিল (OH-) আয়রণ খনিজের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। তাই একে আর্দ্র বিশ্লেষণ বলে। ফেল্ডস্পার এই প্রক্রিয়ায় কেওলিন খনিজে রূপান্তরিত হয়।

2KAISI3O+3H2O(HOH) Al, Si,O5(OH)2+2KOH+4SiO2 

(ফেল্ডস্পার) (কেওলিন)

এই পুকুরিয়ার মাধ্যমে জলের অনু ভেঙে ধনাত্মক হাইড্রোজেনের আয়ন (H±) ও ঋণাত্মক হাইডোক্সিল আয়ন উৎপন্ন হাইড্রোক্সিল আয়ন শিলার মধ্যস্থিত খনিজ সাথে বিক্রয়া করে শিলার রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। এই পুকুরিয়ায় মূলত যে সমস্ত শিলা ফেণ্ড স্পারের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, সেখানে বিশেষভাবে কার্যকরী হয়। এই প্রক্রিয়ায় ফেণ্ড স্পার সমৃদ্ধ প্রায়ো লাইট কিংবা গ্রানাইট শিলা আয়নের বৃদ্ধি পায় ফলে শিলাটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা রূপান্তরিত হয়। এইজন্য এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভূতাত্মিক ও মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। সাধারণ আর্ধ ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এই ধরনের রাসায়নিক অববাহিকা লক্ষ্য করা যায়। 

5. দ্রবণ (Solution): শিলায় রাসায়নিক আবহবিকারের প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রবণ প্রক্রিয়া লক্ষ করা যায়। বৃষ্টির জল ও বায়ুমণ্ডল থেকে CO, শোষণ করে মৃদু অ্যাসিডে পরিণত হয়। এই অ্যাসিড সমৃদ্ধ জল শিলায় দারণ ও ফাটলের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় শিলা মধ্যস্থ খনিজকে সহজে দ্রবীভূত করে এবং শিলা গরম হয়ে বিয়োজিত হয়। সাধারণত লবণ জিপসাম, ক্যালসিয়াম, ডলোমাইট প্রভৃতি কার্বনেট ও বাই কার্বনেট জাতীয় খনিজ খুব তাড়াতাড়ি জলে দ্রবীভূত হয়।

CaCO3+ H₂O +CO₂Ca (HCO3)2

(ক্যালসিয়াম কার্বনেট জল কার্বন ডাই-অক্সাইড ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেট)আবার বিশুদ্ধ জলের অনেক খনিজ পদার্থ দ্রবীভূত হয়। অনেক খনিজ আবার আম্লিক জলের অল্প বিস্তর দ্রব্য। তখন খনিজ গুলি জলে গলে যায়। অর্থাৎ খনিজের রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন হয়। হেলাইড, জিপসাম কমিটি খনিজের এই ঘটনাগুলি লক্ষ্য করা যায়। 


ড.ও.লেহম্যান (1963) এর মতে রিলেশন হলো একটি জটিল প্রক্রিয়া। সাধারণত ধাতব ক্যাটাাইন হাইড্রোকার্বন অনুতে মিশে যৌথভাবে এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। প্রকৃতপক্ষে চিলেট কথার অর্থ হলো সম্বন্ধিত যৌগ যেখানে একটি কেন্দ্রীয় ধাতব আয়ন একটি জৈব অণুতে আকর্ষিত হয়। ফলে জৈব যৌগের মধ্যে ঘাতক খনিজের আয়ন অচিরেই যুক্ত হয়। এটি চিলেশন বলে। সাধারণত এই প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে অধ্রবণীয় খনিজ হতে ধাতব আয়ন বিযুক্ত হতে পারো। আবার C.D.Ollier- র মতে বলায় গঠনের জৈব পদার্থের ধাতব আয়ন ধারণের প্রক্রিয়াকে চিলেশন বলে। এই প্রক্রিয়াটির সাহায্যে উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করার ফলে রাসায়নিক অববাহিকা সংঘটিত হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01