জৈব আবহবিকার(Biological Weathering)
আবহবিকার প্রক্রিয়াকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-যান্ত্রিক আবহবিকার ও রাসায়নিক আবহবিকার। অনেকে আরো একপ্রকার আবহবিকারের কথা বলেছেন। তা হল জৈবিক আবহবিকার। অর্থাৎ জীব বা উদ্ভিদ ও প্রাণী যখন আবহবিকার ঘটায়, তখন তাকে জৈবিক আবহবিকার বলে। কিন্তু এটি আবহবিকারের মূল কোনো ভাগ নয়। কারণ জৈবিক আবহবিকার যান্ত্রিক কিংবা রাসায়নিক যে-কোনো প্রক্রিয়ায় হতে পারে।
1. জৈব-যান্ত্রিক আবহবিকার (Bio-Mechanical Weathering): উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়া অনেক সময় যান্ত্রিক আবহবিকারে ঘটে। শিলার ফাটলের মধ্য দিয়ে উদ্ভিদের শিকড় ভূ-অভ্যন্তরে অনেক গভীরতা পর্যন্ত সহজেই যেতে পারে। এই শিকড়গুলি ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে শিলা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে এবং বৃহৎ শিলাখণ্ডের মধ্যে ফাটলের সৃষ্টি করে। এছাড়া গাছ কাটা, পশুচারণ প্রভৃতির মাধ্যমে মৃত্তিকার ক্ষয় হার বেড়ে গিয়ে বিভিন্ন শিলাস্তর ভেঙে পরোক্ষভাবে আবহবিকারকে ত্বরান্বিত করে।
একইভাবে উদ্ভিদের মতো প্রাণী ও কীটপতঙ্গ তাদের বসবাস নির্মাণের উদ্দেশ্যে শিলায় গর্ত করে যান্ত্রিক আবহবিকারকে সাহায্য করে। কেঁচো, উইপোকা, পিঁপড়ে, খরগোশ, প্রেইরি কুকুর প্রভৃতি প্রাণীরা মাটিতে গর্ত করে শিলাস্তরকে দুর্বল করে দেয়। ফলে শিলাস্তর ভেঙে যায়। আবার ভূপৃষ্ঠের ওপর রাস্তাঘাট সহ বাড়িঘর নগর বন্দর প্রভৃতি সৃষ্টির কারণে শিলাস্তর দুর্বল হয়ে আবহবিকারকে ত্বরান্বিত করে।
2. জৈব-রাসায়নিক আবহবিকার (Bio-Chemical Weathering): আর্দ্র জলবায়ুতে উদ্ভিদের পাতা, ডালপালা পচে যে জৈব হিউমিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয় এই অ্যাসিড ফেল্ডম্পার জাতীয় শিলার খনিজকে বিয়োজিত করে শিলাকে ভেঙে দেয়, যা প্রত্যক্ষভাবে রাসায়নিক আবহবিকারকে সাহায্য করে। আবার বিভিন্ন মৃত উদ্ভিদ প্রাণী কিংবা কীটপতঙ্গোর দেহ থেকে নিঃসৃত রসের মাধ্যমে শিলার আবহবিকার ঘটে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া থেকে যে বিভিন্ন ধরনের জৈব অম্ল তৈরি হয়, যথা-ল্যাকটিক ও অ্যাসিটিক অ্যাসিড এরাও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।