খনিজের বৈশিষ্ট্য (characteristics of mineral)
খনিজের কতকগুলি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আছে। এই বৈশিষ্ট্য খারা খনিজকে সহজেই শনাক্ত করা যায়। খনিজের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-রং, কাঠিন্য, ফাটল, দ্যুতি, গন্ধ, আপেক্ষিক গুরুত্ব। এছাড়া রাসায়নিক গঠন অনুসারেও সহজে খনিজ শনাক্ত করা যায়। এখানে ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নির্বাচিত কয়েকটি খনিজের শনাক্তকরণ সম্বন্ধে আলোচনা করা হল।
1. খনিজের ভৌত বৈশিষ্ট্য(physical characteristics of mineral)
অধিকাংশ খনিজ কেলাসিত বা স্ফটিকাকার অর্থাৎ খনিজের পরমাণুগুলো একটি বিশেষ জ্যামিতিক আকারে সজ্জিত। স্ফটিক কঠিন পদার্থ এবং এর উপরিভাগ কয়েকটি মসৃণ সমতলক্ষেত্র দ্বারা সীমাবদ্ধ প্রিজম, ঘনক বা কিউব, অষ্টতল বা চতুস্তলক যে-কোনও একটি জ্যামিতিক আকার ধারণ করে। খনিতের পার্থক্য হিসেবে স্ফটিকের জামিতিক গঠনের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়, এই পার্থক্যই খনিতকে চিনতে সহায়তা করে। যেমন, কোয়ার্টজ স্ফটিকের আকৃতি পিরামিডের মতো এবং স্ফটিক ষড়ভুজাকৃতি। হীরক এবং ম্যাগনেটাইটের কেলাসের আকৃতি অষ্টতল বিশিষ্ট।
আকৃতি (form): খনিজের আকৃতি ও গঠন বিভিন্ন প্রকারের। কোনো খনিজ স্ফটিকাকার, কোনোটি কন্য বিশিষ্ট, কোনোটি স্তম্ভাকৃতি, কোনোটি তস্তুর মতো, আবার কোনোটি অভ্রময়।
② সম্ভেদ (cleavage): সম্ভেদ বা চিড়-খাওয়ার ধরন থেকে ও খনিজের পরিচয় পাওয়া যায়। বিভিন্ন খনিজের সঙ্গেদ বিভিন্নভাবে হয়। অভ্রের সম্ভেদ মাত্র একটি দিকে হয়ে থাকে এবং এর জন্য অভ্রের স্তরগুলিকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে খুব সূক্ষ্ম স্তরে পরিণত করা যায়। গ্যালিনার সঙ্গেদ সমমাত্রিক (cubical)। ফেলসম্পারের সম্ভেদ একটি অপরটির সমকোণে অর্থাৎ সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে থাকে।
③ বর্ণ (colour): বর্ণ দেখে খনিজ চিনতে পারা যায়। লৌহআকরিক ম্যাগনেটাইটের বর্ণ কালো, তামার আকরিক চালকোপাইরাইটেনা বর্ণ সোনালি পীত, সীসার আকরিক গ্যালিনার বর্ণ সীসার মতো ধূসর। অনেক সময় বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে বা খনিজের গঠনের পার্থক্যের ফলে এর আদি বর্ণ পরিবর্তিত হয়।
④ খনিজ চূর্ণের বর্ণ (colour of powder or streak):খনিজ চূর্ণের বর্ণ দেখে অনেক সময় খনিজকে চিনতে পারা যায়। এক টুকরো অমসৃণ (unglazed) সাদা পার্সলেন (porcelain)-এর উপর কোনও খনিজের সাহায্যে কষ বা দাগ (streak) কাটলে সেই খনিজটির সূক্ষ্ম চূর্ণ পর্সিলেনের গায়ে লেগে যায়। সেই চূর্ণের বর্ণ থেকে খনিজটি চেনা যায়। যেমন, ম্যাগনেটাইট পর্সিলেনের উপর কালো দাগ কাটে, লিগনাইট বাদামি বর্ণের এবং হেমাটাইট লালচে বর্ণের।
⑤ খনিজের দ্যুতি বা উজ্জ্বলতা (lustre): দ্যুতি বা উজ্জ্বলতা থেকে খনিজের পরিচয় পাওয়া যায়। খনিজের উজ্জ্বলতা নানা প্রকারের হয়। পাইরাইটের দ্যুতি ধাতুর মতো, কোয়ার্টজের দ্যুতি কাঁচের মতো, সেস্ক লিরাইটের উজ্জ্বলতা রজনের মতো, আঁশযুক্ত জিপসামের উজ্জ্বলতা রেশমের মতো। আবার কোনো কোনো খনিজের দ্যুতি বা উজ্জ্বলতা হীরার মতো।
⑥ আপেক্ষিক গুরুত্ব (specific gravity): অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মতো আপেক্ষিক গুরুত্ব একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এটি ও খনিজ চিনতে সাহায্য করে। খনিজের আপেক্ষিক গুরুত্ব 1.5 থেকে 21.00 পর্যন্ত হলেও (প্লাটিনাম 21.46)। অধিকাংশ খনিজের আপেক্ষিক গুরুত্ব 2.0 থেকে 7.0-এর মধ্যে থাকে।
⑦কাঠিন্য (Hardness): কোনো খনিজ তার ক্ষয়কে কতটা প্রতিরোধ করতে পারে সেই শক্তিই হল তার কাঠিন্য।সাধারণ ক্ষেত্রে অবঘর্ষ প্রতিরোধী ক্ষমতাকেই কাঠিন্য বলে।কোন খনিজ কত কঠিন তা থেকে অনেক সময় খনিজ চিনতে ⑨ পারা যায়। কোনো কোনো খনিজ খুবই কঠিন, কোনওটি মাঝারি রকমের, আবার কোনওটির কাঠিন্য খুব অল্প। এই কাঠিন্যের তারতম্য পরিমাপের একটি তালিকা আছে। একে মোহোর তালিকা বা স্কেল বলে। যে খনিজের উপর নখের সাহায্যে দাগ কাটা যায়, তার কাঠিন্যের মাপ 1 থেকে 2-এর মধ্যে হয়। যেগুলির উপর তামার পয়সা দিয়ে দাগ কাটা যায়।
তাদের কাঠিন্য হল 3 যে খনিজের উপর দাগ কাহতে ইস্পাতের ছরির প্রয়োজন হয়, তাদের কাঠিন্য ৪-এর মধ্যে হয়। হীরকের কাঠিন্য 10 এবং এটাই সবচেয়ে কঠিন ধনিজ। এই কাঠিন্য 10টি প্রমাণ মানের কাঠিন্য সূচক (standard hardness scale) খনিজের সাপেক্ষে করা হয়। এই সূচক স্কেলটিকে মোহ কাঠিন্য সূচক বলে। নীচে খনিজের কাঠিন্য নিরুপণের জন্য মোহোর স্কেলটি দেওয়া হল-
মোহ কাঠিন্য সূচক স্কেল (Mohs' hardness scale)কাঠিন্য খনিজ ব্যবহারিক পরীক্ষা পদ্ধতি
1.শ্যাল্ক (কোমলতল)সহজে নখের সাহায্যে দাগ কাটা যায়।
2.জিপসাম জোরের সাথে নখের সাহায্যে। দাগ কাটা যায়।
3.ক্যালসাইত
4.ফ্ররাইত ফ্লোরস্পার
5.অ্যাপেটাইট লোহার ছুরি দিয়ে দাগ কাটা যায়।
6.অর্থোক্লেজ মাইক্রোক্রাইন লোহার ছুরি দিয়ে দাগ মাইক্রোক্লাইন কাটা যায়।
7.কোয়ার্টাজত কাচের ওপর দাগ পড়ে।
8.টোপাজত
9.কোরানডাম
10. হিরা (কঠিনতম)কচ কাটা যায়।
স্বাদ (taste): জলে দ্রাব্য খনিজের একটি নির্দিষ্ট স্বাস থাকে। যদিও এই বৈশিষ্ট্য খনিজ শনাক্তকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে না; তথাপি পৃথিবীতে কতকগুলি খনিজ আছে যাদের স্বাদ লবণাক্ত (সাধারণ লবণ) এবংকতকগুলি খনিজের স্বাদ ক্ষারীয় (সোডা)
গন্থ (odour): নির্বতি গন্ধ থেকে খনিজকে চেনা যায় যেমন- আর্সেনিক যৌগ থেকে রসুনের এবং পাইরাইট থেকে গন্ধকের গন্ধ পাওয়া যায়।
দ্রবণীয়তা (solubility): খনিজের দ্রবণীয়তা খনিজ শনাক্তকরণে বিশেষ সাহায্য করে। যেমন- চুনাপদের ডলোমাইট ইত্যাদি।
অনুভূতি (feel): স্পর্শ অনুভূতির সাহায্যে অনেক সময় এনিজ শনাক্তকরণ সম্ভব। কতকগুলি খনিজ মসৃন, কতকগুলি খসখসে। আবার কতকগুলি গ্রিজের (grease) ন্যায় হড়হড়ে।
চুম্বকত্ব (magnetism): লৌহমিশ্রিত খনিজ পদার্থ চুম্বকের দ্বারা আকৃষ্ট হয়। যেমন- হেমাটাইট চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয়।
2. খনিজের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য(chemical characteristics of mineral)
সোনিক সংযুক্তি (Chemical Composition) অধিকাংশ নিজের একটি বিশিষ্ট রাসায়নিক গঠন বর্তমান, যা নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংকেতের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ আমরা কোয়ার্টজ-এর কথা উল্লেখ করতে পারি। এটি একটি অতি সাধারণ খনিজ এবং এর রাসায়নিক সংকেত হচ্ছে SIO, (সিলিকন ডাই-অক্সাইড) অর্থাৎ একটি সিলিকন পরমাণু দু'টি অক্সিজেন পরমাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে কোয়ার্টজ সৃষ্টি করে। এইরূপ অন্যান্য খনিজেরও নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংযুক্তি রয়েছে। খনিজের রাসায়নিক গঠন এর সাহায্যে সহজেই শনাক্ত করা যায়। যেমন- ক্যালসিয়াম কার্বনেট সমৃদ্ধ খনিজ বা শিলায় লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড প্রয়োগ করলে সহজেই বিক্রিয়া করে (বুদবুদ ওঠে) CO, নির্গত হয়, যা খনিজ বা শিলা চিনতে সাহায্য করে।