welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ক্ষয়ের নিম্নসীমা(Base Level Erosion)

ক্ষয়ের নিম্নসীমা(Base Level Erosion)



ক্ষয়ের নিম্নসীমার ধারণা (Concept of Base Level Erosion)

1. W. Powell 1875 সালে ক্ষয়ের শেষ সীমা ধারণাটি উপস্থাপন করেন। সমুদ্র জলের উচ্চসীমাকে সমুদ্রতল (base level) হিসেবে ধরা হয়। কারণ পৃথিবীব্যাপী সমুদ্র জলের তেমন ওঠানামা করে না বা লক্ষ করা যায় না। যে সমস্ত নদী সমুদ্রে সবসময় পতিত হয় তারা সমুদ্রের জলতলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্ষয়কাজ করে। পার্বত্য অঞ্চলে ঢাল খুব বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক কারণে নদীর ক্ষয়কার্য অধিক লক্ষ করা যায়। আবার সমভূমি অঞ্চলে ভূমির ঢাল বসে যাওয়ায় নদীর ক্ষয়কার্য কমে যায়। কিন্তু নদী যখন উপকূল অঞ্চলে পৌঁছে যায় তখন নদী আর ক্ষয় করতে পারে না, কারণ নদী ক্ষয়ের শেষ সীমায় পৌঁছায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের সাথে সমতা রেখে নদী তার দৈর্ঘ্য বরাবর পার্শ্বচিত্রটি ওপরের দিকে মসৃণ করতে থাকে। তাই সমুদ্র পৃষ্ঠকে নদীর ক্ষয়ের শেষসীমা বলে। অর্থাৎ নদীগর্ভে সর্বনিম্ন উল্লম্ব গভীরতা পর্যন্ত যতটা নদী তার ক্ষয়কার্য চালাতে পারে তাকে নদীর ভূমিক্ষয়ের নিম্ন সীমাতল বলে। ক্ষয়ের শেষসীমা তিন ধরনের যথা- (a) স্থায়ী ক্ষয়ের শেষসীমা (সমুদ্র পৃষ্ঠকে বোঝায়)। (b) অস্থায়ী ক্ষয়ের শেষ সীমা (হ্রদ কিংবা কঠিন ও কোমল শিলাস্তরকে বোঝায়), (c) স্থানীয় নিম্ন ক্ষয়সীমা (প্রধান নদীর সাথে যেখানে উপনদী মিলিত হয়)।

শ্রেণিবিভাগ (Classification)

আমেরিকার ভূতত্ত্ববিদ জন ওয়েসলি পাওয়েল (J. W. Powell) ক্ষয়ের নিম্নসীমাকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। এই ভাগগুলি হল-

1. স্থানীয় নিম্নসীমা (Local Base Level): কোনো নদী যখন অন্য কোনো বড়ো নদীতে এসে মিলিত হয় বা হ্রদে এসে পড়ে তখন ওই বড় নদী বা হ্রদের জলতলই হল নিম্নক্ষয়ের শেষসীমা। এই কারণে একে স্থানীয় নিম্নসীমা বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যমুনা, শোন, গণ্ডক, কোশী, মহানন্দা ইত্যাদি উপনদী যখন গঙ্গা নদীতে এসে মিলিত হয় তখন গল্যার জলতল হল স্থানীয় নিম্নক্ষয়সীমা।

2. সাময়িক নিম্নসীমা (Temporary Base Level): কোনো নদীর গতিপথে যদি কঠিন শিলা অবস্থান করে তবে নদী ওই কঠিন শিলাস্তরকে আর ক্ষয় করতে পারে না। সেইসময় ওই কঠিন শিলাস্তরটি হল ক্ষয়ের শেষ সীমা। তবে পরবর্তীকালে নদীতে জলপ্রবাহ বৃদ্ধি পেলে নদীর ক্ষয় ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। ফলে নদী তখন ওই কঠিন শিলাস্তরকে ক্ষয় করতে সক্ষম হয়। ক্ষয়ের এই নিম্নসীমাকে সাময়িক নিম্নসীমা বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে নদীগুলির গতিপথে এই ধরনের ক্ষয়ের নিম্নসীমা দেখা যায়।

3. স্থায়ী নিম্নসীমা বা সর্বশেষ নিম্নসীমা (Permanent Base Level or Ground Base Level): ক্ষয়ের স্থায়ী নিম্নসীমা বা ক্ষয়ের সর্বশেষ নিম্নসীমা বলতে সমুদ্রপৃষ্ঠকে বোঝায়। অর্থাৎ নদী যেখানে সমুদ্রে মিলিত হয় সেটাই হল ক্ষয়ের স্থায়ী নিম্নসীমা।

ক্ষয়ের নিম্নসীমার ঋণাত্মক পরিবর্তন(Negative Change of the Base Level)

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বা ভূমিভাগের উত্থান ও অবনমনের জন্য ক্ষয়ের নিম্নসীমার পরিবর্তন ঘটতে পারে, অর্থাৎ মহাদেশীয় ভূমিভাগ ভূগাঠনিক কারণে উত্থিত হলে বা সমুদ্রের জল তুষার বা বরফ হিসাবে জমে থাকলে সমুদ্রপৃষ্ঠ নীচু হয়ে যেতে পারে। ফলে ক্ষয়ের নিম্নসীমার ঋণাত্মক পরিবর্তন ঘটে। ক্ষয়ের নিম্নসীমার ঋণাত্মক পরিবর্তনের ফলাফলগুলি নীচে আলোচনা করা হল।

1. অরচক্রে বিশ্ব (Interuption in Cycle of Erosion): সমুদ্রতল অর্থাৎ ক্ষয়ের নিম্নসীমা নীচে নেমে গেলে নটীয় করচক্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেইসঙ্গে নদীর গতিবেগ বাড়ে। ফলে নদী বার্ধক্য পর্যায় থেকে পরিণত পর্যায়ে, আধার পরিণত পর্যায় থেকে যৌবন পর্যায়ে পৌঁছায়। ফলে নদীর ক্ষয়চক্রের স্থায়িত্বকাল বৃদ্ধি পায়।

2. পূনযৌবন লাড (Rejuvination): সমুদ্রতলের পতন ঘটলে মন্ত্রী উপত্যকার চাল বৃদ্ধি পায়। ফলে নদী পুনরায় তার ক্ষয় ক্ষমতা ফিরে পায়। অর্থাৎ নদী পুনর্যৌবন লাভ করে। নদীর পুনর্যৌবন লাভের ফলে নদী উপত্যকায় নিক পয়েন্ট, জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।

3. ভূমিরূপের বৈসাদৃশ্য (Topographic Discordance): ক্ষয়ের নিম্নসীমার ঋণাত্মক পরিবর্তনের ফলে নদী উপত্যকায় ভূমিরূপের বৈসাদৃশ্য দেখা যায়। অর্থাৎ নদী উপত্যকার নিম্নাংশে যৌবন পর্যায়ে গঠিত ভূমিরূপ এবং উপত্যকার উর্ধ্বাংশে বার্ধক্য পর্যায়ে গঠিত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নদী উপত্যকার নিম্নাংশে নিক বিন্দু ও জলায়পাতের সৃষ্টি হয়।

4. বহুচক্রীয় ভূমিরূপের সৃষ্টি (Origin of Polycyclic Relief): ক্ষয়ের নিম্নসীমার গুণাত্মক পরিবর্তনের ফলে একদিকে যেমন ক্ষয়চক্র বাধা পায়, অন্যদিকে আবার নদী পুনর্যৌবন লাভ করে। ফলে একটি ক্ষয়চক্রের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ অঞ্চলে ক্ষয়চক্র শেষ হওয়ার আগে সেই অঞ্চলের ভূমি রূপগুলি অন্য ক্ষয়চক্রের দ্বারা প্রভাবিত ও রূপান্তরিত হয়। ফলস্বরূপ বহুচক্রীয় ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। ভারতের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে এরূপ ভূমিরূপ দেখা যায়।

5. নদীর দৈর্ঘ্য বরাবর পার্শ্বচিত্রের ভাঙন (Break in Longitudinal Profile): সমুদ্রতলের পতনের ফলে নদী পুনর্যৌবন লাভ করলে নদী তার পুরোনো উপত্যকাকে নতুন করে ক্ষয় করতে থাকে। ফলে মোহনা অঞ্চল থেকে উপত্যকা মস্তকমুখী ক্ষয়ের দ্বারা নতুন উপত্যকা উৎসের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। যে বিন্দুতে পুরোনো উপত্যকা ও নতুন উপতাকা মিলিত হয় তাকে নিক্ বিন্দু বলে।

এই নিক্ বিন্দুতে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়, এক্ষেত্রে নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত সামগ্রিক পর্যায়িত ঢাল দেখা যায় না। নিক্ পয়েন্ট উর্ধ্বাংশে উপত্যকার একটি অংশ এবং নিক পয়েন্টের নিম্নাংশে উপত্যকা অন্য অংশটি অবস্থান করে। আর পুনর্যৌবন লাভের ফলে নদীর নিম্নক্ষয় বৃদ্ধি পায়। ফলে পুরোনো উপত্যকার মধ্যে কিছুটা পুরোনো উপত্যকার অংশ দাঁড়িয়ে থাকে। একে নদী মঞ্চ বলে।

ক্ষয়ের নিম্নসীমার ধনাত্মক পরিবর্ত(Positive Change in the Base Level)

সমুদ্রে বরফ গলনের ফলে বা ভূগাঠনিক কারণে অবনমন মহাসাগরীয় ভূভাগের তুলনায় মহাদেশীয় ভূ-ভাগের অধিক ঘটলে ক্ষয়ের নিম্নসীমার পরিবর্তন ঘটে এবং সমুদ্রতলের উত্থান ঘটে। একে ক্ষয়ের নিম্নসীমার ধনাত্মক পরিবর্তন বলে। ক্ষয়ের নিম্নসীমার ধনাত্মক পরিবর্তনের ফলাফল নীচে আলোচনা করা হল-

1. ক্ষয়চক্রে বাধা (Interption in Cycle of Erosion): ক্ষয়ের নিম্নসীমার ধনাত্মক পরিবর্তনের ফলে ক্ষয়চক্রে বিঘ্ন ঘটে। অর্থাৎ ক্ষয়চক্রের বৃত্তটি দ্রুত সম্পূর্ণ হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে ক্ষয়চক্রটি শেষ হয়ে যায়।

2. সমুদ্র উপকূল ও মোহনা সৃষ্টি (Forumation of Coast and River Mouth): ক্ষয়ের নিম্নসীমার ধনাত্মক পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতলের উত্থান ঘটে। ফলে সমুদ্রের যে স্থানে নদীগুলি সমুদ্রে মেশে সেই স্থানের উপত্যকাগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। উচ্চস্থান থেকে বয়ে আনা ক্ষয়ীভূত পদার্থগুলিকে নদীগুলি আর সমুদ্রে নিক্ষেপ করতে পারে না বরং তা ওই জলমগ্ন উপত্যকায় জমা করে। ফলে সেখানে রিয়া উপকূল গড়ে ওঠে এবং ওই সংলগ্ন নিম্নভূমিগুলি মোহনারূপে অবস্থান করে। এই ধরনের উপকূল ও মোহনা দক্ষিণ-পশ্চিম আয়ারল্যান্ড ও উত্তর-পশ্চিম স্পেনের ফিনিমস্তেরে অঞ্চলে দেখা যায়।

3. নদী মোহনা ভরাট (Filling of River Mouth): রিয়া উপকূলের স্থায়িত্ব নির্ভর করে নদী উৎস থেকে বয়ে আনা ক্ষয়ীভূত পদার্থের সঞ্চয়ের উপর। নদীর প্রবাহপথে কোমল শিলা অবস্থান করলে নদী দ্রুত সেই কোমল শিলা ক্ষয় করে এবং অনেক পরিমাণ ক্ষয়ীভূত পদার্থ বহন করে নদী মোহনায় নিয়ে আসে। এখন সমুদ্রতলের উত্থান ঘটলে নদী বাহিত বিশাল পরিমাণ পলি নদী মোহনায় সঞ্চয় করবে এবং ফলস্বরূপ মোহনা ভরাট হয়ে যাবে।


4. প্লাবনভূমির সৃষ্টি (Formation of Flood Plain): ক্ষয়ের নিম্নসীমার ধনাত্মক পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতলের উত্থান ঘটে এবং সেইসঙ্গে নদীর নিম্ন ক্ষয় ও পরিবহন ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে নদী বাহিত পদার্থসমূহ নদীবক্ষে ধীরে ধীরে সঞ্চিত হয় এবং নদীর গভীরতা হ্রাস পায়। ফলে কোনো কারণে নদীর জলতল বাড়লে অগভীর নদী সেই জল ধারণ করতে পারে না। ফলস্বরূপ নদীর দুধার প্লাবিত হয় এবং প্লাবনভূমির সৃষ্টি হয়।

5. সমুদ্রে দ্বীপের সৃষ্টি ও বৃদ্ধি (Origin and Development of Sea Islands): ক্ষয়ের নিম্নসীমার ধনাত্মক পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতলের উত্থান ঘটলে উপকূল অঞ্চলে একটা বিশাল অংশ জলের নীচের নিমজ্জিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে উপকূল অংশের অপেক্ষাকৃত উঁচু ভূমিভাগগুলি জলের উপর দ্বীপের ন্যায় জেগে থাকে, আবার ক্ষয়ের নিম্নসীমার ধনাত্মক পরিবর্তনের ফলে নদীর বহন ক্ষমতা কমে যায়। ফলে নদী মোহনায় নদী বাহিত পদার্থসমূহ সঞ্চিত হয়ে দ্বীপের সৃষ্টি করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01