মাপচিত্রের প্রকারভেদ (types of cartograms)
পরিসংখ্যানকে চিত্রে রূপায়ন বা প্রদর্শন করার বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। এই পদ্ধতিগুলির মধ্যে প্রধান কয়েকটি পদ্ধতি হল-
রেখা লেখচিত্র বা লাইন গ্রাফ (line graph)-যেমন-
[1] Simple line graph [2] Polygraph
[3]Band graph [4] Climograph
[5]Hythergraph [6] Ergograph
স্তম্ভ লেখচিত্র বা স্তন্ত-চিত্র (Bar graph or Bar diagram)- যেমন,
[i] Simple bar graph,
[ii] Comparative bargraph,
[iii] Compound bar graph,
[iv] Pyramid graph
বিন্দু মানচিত্র বা বিন্দু চিত্র (dot map or dot diagram)
বিন্দু মানচিত্রের ধারণা (concept of dot map)
ভৌগলিক উপাদান (রাশিতথ্য) বন্টনের (distribution) প্রকৃতি বিক্ষিপ্ত (random) বা এলোমেলো হলে বিন্দু মানচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ বা প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু ভৌগোলিক উপাদানের (রাশিতথ্য) বন্টন প্রকৃতি সমান (squal) হলে কোরোপ্লেথ মানচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। বিন্দু বা হল একটি প্রতীক চিহ্ন। বিন্দু বা ডট-এর সাহায্যে বিশেষ সংখ্যার পরিমাপ দেখানো হয়। বণ্টন মানচিত্র তৈরিতে বিন্দু বা ডট মানচিত্র বিশেষ উপযোগী। এই প্রতীক চিহ্নের সাহায্যে কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর অবস্থান (যেমন- গ্রাম, মৌজা, শহর, নগর, মন্দির, মসজিদ, বন্দর, স্টেশন ইত্যাদি) দেখানো হয় তেমনি গ্রামীণ জনসংখ্যা, কৃষিজমি, কৃষি উৎপাদন ইত্যাদি Ba প্রকৃতির বণ্টনগত অবস্থান এই ধরনের মানচিত্র প্রস্তুত করা হয়। এটি একটি মাত্রাহীন মাপচিত্র বা কার্টোগ্রাম যার শুধু অবস্থান আছে।
সংজ্ঞা (definition)
(1)বিন্দর মাধ্যমে কোনো মাপচিত্র অঙ্কিত হলে তাকে বিন্দু মানচিত্র (dot map) বলে।
(2)বিন্দু বা ডট চিহ্নের সাহায্যে বন্টন মানচিত্র গঠিত হলে তাকে বিন্দু মানচিত্র (dot map) বলে।
(3)বিন্দু বা ডট্ চিহ্নের সাহায্যে ভৌগোলিক বিষয়ের পরিমাণ বা গুণগত অবস্থান দেখানো হয় তখন তাকে বিন্দু মানচিত্র (dot map) বলে।
বিন্দু মানচিত্রের প্রকারভেদ (types of dot map)
বিন্দু বা ডট মানচিত্র প্রধানত দু-ধরনের হয়, যথা-
① গুণগত বিন্দু মানচিত্র
② সংখ্যাগত বিন্দু মানচিত্র
(1)গুণগত বিন্দু মানচিত্র (qualitative dot map)
সংজ্ঞা: ভৌগোলিক উপাদানের সঠিক অবস্থান দেখাতে বিন্দুর সাহায্যে যে মানচিত্র প্রস্তুত করা হয় তাকে গুণগত বিন্দু মানচিত্র বলে।
উদাহরণ
① ভারতের রাজধানী শহরগুলির অবস্থান সংক্রান্ত মানচিত্র।
② ভারতের উপকূলীয় বন্দরগুলির অবস্থান সংক্রান্ত মানচিত্র।
বৈশিষ্ট্য
① কোনো বস্তু বা উপাদানের কেবলমাত্র সঠিক অবস্থান নির্দেশ করে এই মানচিত্র।
② এই মানচিত্র বস্তুর অবস্থানগত গুণ তুলে ধরে।
(2)সংখ্যাগত বিন্দু মানচিত্র (quantitative dot map)
সংজ্ঞা: সম-আয়তনবিশিষ্ট নির্দিষ্ট মানের বিন্দুর সাহায্যে কোনো বস্তুর বটর দেখাতে যে মানচিত্র প্রস্তুত করা হয় তাকে সংখ্যাগত বিন্দু মানচিত্র বলে।
উদাহরণ
① ভারতবর্ষের গ্রামীণ জনসংখ্যার বন্টন সংক্রান্ত মানচিত্র।
② ভারতবর্ষের গবাদি পশুর বন্টন সংক্রান্ত মানচিত্র।
বিন্দু মানচিত্রের বৈশিষ্ট্য (characteristics of dot map)
(1)এটি একটি বন্টনগত মাপচিত্র। এ থেকে উপাদানের গুল সম্পর্কে ধারণা করা যায় না।
(2)এটি একটি মাত্রাহীন মাপচিত্র। যার শুধু অবস্থান আছে।
(3)বিন্দগুলির আয়তন (আকৃতি) সমান হয় এবং অসমভাবে বন্টিত হয়।
(4)বিন্দুগুলির নির্দিষ্ট মান আছে এবং বিন্দুগুলি নিনিং প্রশাসনিক এলাকার মধ্যে বন্টিত।
(5)গ্রামীণ জনসংখ্যা বন্টনে এটি ব্যবহৃত হয়।
(6)বিন্দুর মানের ওপর বিন্দুর সংখ্যা নির্ভর করে।
বিন্দু বা ডটের স্কেল নির্বাচন (selection of the scale of dots)
সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে বিন্দু মানচিত্রের বিন্দুর স্কেল অর্থাৎ ডট-এর মান নির্বাচন করা হয়। যথা-
ঐচ্ছিক পদ্ধতি (arbitary method)
① এই পদ্ধতিতে রাশি তথ্যের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মান দেখে অর্থাৎ রাশিতথ্যের বিস্তার বেশি হলে ইচ্ছামতো ডট স্কেল নির্বাচন করা হয়।
② এই পদ্ধতিতে এমনভাবে ডট স্কেল নির্বাচন করা হয় যাতে বিন্দুগুলির সংখ্যা খুব কম বা খুব বেশি না হয়।
③ এই পদ্ধতিতে বস্তুর বন্টনের প্রকৃতিকে মানচিত্রে সঠিকভাবে দেখানো যায় না। তাই এই পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা কম।
নির্দিষ্ট সংখ্যা পদ্ধতি (fixed-number method)
① এই পদ্ধতিতে রাশিতথ্যের সর্বোচ্চ মানের জন্য বিন্দুর সংখ্যা একশ (100) ধরে স্কেল নির্বাচন করা হয়। যেমন-রাশিতথ্যে কোনো প্রশাসনিক এলাকার (ব্লক) সর্বোচ্চ গ্রামীণ জনসংখ্যা 60,000। তাহলে একটি ডটের মান হবে (60,000 + 100) 600 গ্রামীণ জনসংখ্যা। অর্থাৎ! ডট = 600 গ্রামীণ জনসংখ্যা।
- 1টি ডটের মান বা স্কেল 60,000+100= 600 গ্রামীণ জনসংখ্যা সুতরাং, ডটের সংখ্যা গ্রামীণ জনসংখ্যা +6001
ঘনত্ব নির্ভর পদ্ধতি (density-based method)
(1)এই পদ্ধতিতে রাশিতথ্যের সর্বাধিক মানের পরিবর্তে সর্বাধিক ঘনত্বকে বিবেচনা করে ডট স্কেল অর্থাৎ ডটের মান নির্বাচন করা হয়।
(2)এই পদ্ধতিতে মানচিত্রে সর্বাধিক ঘনত্ব বিশিষ্ট প্রশাসনিক একক (যেমন- ব্লক)-এর ক্ষেত্রমান নির্ণয় করে ডটের স্কেল নির্ণয় করা হয়।
(3)এই পদ্ধতিতে বিন্দু মানচিত্র গঠন অনেক বেশি সহজ, নির্ভুল ও যুক্তিযুক্ত
(4)এই পদ্ধতিতে প্রতিবর্গ সেমিতে সর্বাধিক ঘনত্ব বিশিষ্ট প্রশাসনিক এককের মোট বিন্দুর সংখ্যা 60টিকে আদর্শ (ideal) ধরা হয়।
ঘনত্ব নির্ভর ডট মানচিত্র অঙ্কন (drawing dot map depend on density)
ঘনত্ব নির্ভর পদ্ধতিতে চারটি ধাপ অনুকরণ করলে ডট মানচিত্র বা মানচিত্র. অঙ্কন সহজ হয়। এই ধাপ গুলি হল-
ধাপ- ঘনত্বের নির্ণয়: বস্তু বা উপাদানের ঘনত্ব নির্ণয় কর।
যেমন-জনঘনত্ব=ব্লকের মোট গ্রামীণ জনসংখ্যা/ব্লকের ক্ষেত্রফল =জনঘনত্ব (অতি বর্গ কিমি)
ধাপ-মানচিত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয়: মানচিত্রের সর্বাধিক ঘনত্ব বিশিষ্ট প্রশাসনিক এককের ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর। যেমন-ক্ষেত্রফল=সর্বাধিক ঘনত্ব যুক্ত প্রশাসনিক এককের ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল×মানচিত্রের ক্ষেত্রে বর্গ।
মানচিত্রের ক্ষেত্রফল বর্গ সেমিতে নির্ণয় করা অবশ্যক।
ধাপ-বিন্দুর সংখ্যা নির্ণয়: প্রতি বর্গ সেমিতে বিন্দুর সংখ্যা নির্ণয় কর।
যেমন-সর্বাধিক ঘনত্ব যুক্ত প্রশাসনিক এককের মোট বিন্দু সংখ্যা=মানচিত্রের এ প্রশাসনিক এককের ক্ষেত্রফল (বর্গসেমি)×60
সুতরাং, সর্বাধিক ঘনত্ব যুক্ত প্রশাসনিক এককের মোট বিন্দু সংখ্যা=ঐ প্রশাসনিক এককের মোট গ্রামীণ জনসংখ্যা।
ধাপ- বিন্দুর স্কেল নির্ণয়: বিন্দুবাও ডটেরমান বাস্কেল নির্ণয় করা।
°1 বিন্দুর স্কেল=সর্বদীপ ঘনত্ব যুক্ত প্রশাসনিক লেখকের মোট গ্রামীণ জনসংখ্যা÷সর্বাধিক ঘনত্ব যুক্ত প্রশাসনিক লেখকের মোট বিন্দু সংখ্যা।