মানচিত্র (Cartograms)
মাপচিত্রের ধারণা (concept of cartograms)
পরিবাখ্যান চিত্রে রূপায়ণকে মাপচিত্র বা কার্টেগ্রাম (cartogram) এসে। কার্টেগ্রামও কার্টেগ্রাফির (cartography) অংশ, কার্নেগ্রাফি হল মানচিত্র অভগনের বিজ্ঞান ও কলা। ভূগোলবিদরা মানচিত্রে উড়ির ভৌগোলিক পরিসংখ্যান দেখিয়ে থাকেন। পরিসংখ্যান ও তার বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে মানচিত্রকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হা। যেমন, ভূ-প্রাকৃতিক মানচিত্র, জলবায়ু সংক্রান্ত মানচিত্র, বিভিন্ন বস্তু বা দ্রব্যের বন্টন দেখাতে বন্টন মানচিত্র ও নক্সা ইত্যাদি। অর্থাৎ বিভিন্ন তথ্যকে চিত্রের আকারে বা চিত্র, ছবি, চিহ্ন প্রভৃতির দ্বারা ভূগোলে বিভিন্ন চিত্র, মানচিত্র অঙ্কন করা হয়। এই ধরনের চিত্রসহ মানচিত্র, চিহ্নযুক্ত মানচিত্র, স্বন্তচিত্র প্রভৃতিকে কাটোগ্রামস বলে। ভূগোলের বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক, জনসংখ্যা, সামাজিক প্রকৃতির তথ্যসমূহকে বিস্তৃতিসহ বোঝানোর জন্য কার্টোগ্রামস ব্যবহৃত হয়। যন্ত্রগণকের (computer) ব্যবহার কার্টোগ্রাম প্রস্তুত করার পদ্মতিকে যেমন উন্নতি করছে তেমনি নানা ধরনের ছায়াপাত, চিহ্ন, বর্ণ প্রভৃতির ব্যবহারের দ্বারা কাটোগ্রাম প্রস্তুত করার পদ্ধতিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। যে ব্যক্তি মাপচিত্র এবং মানচিত্র প্রস্তুত করেন তাঁকে মানচিত্র অঙ্কনবিদ (carto-grapher) বলে। আর চিত্রে প্রকাশিত পরিসংখ্যানকে বলে কার্টোগ্রাফ (cartographs)
Map = মানচিত্র
Cartographer = মানচিত্র অঙ্কনবিদ
Cartogram = পরিসংখ্যান চিত্র বা মাপচিত্র
Cartographs = চিত্রে প্রকাশিত পরিসংখ্যান
মাপচিত্রের সংজ্ঞা (definition of cartogram)
(1)cartogram শব্দটি karte ও diagramma-এই দুটি ইংরেজি শব্দ থেকে এসেছে। karte-র অর্থ হল ম্যাপ বা মানচিত্র এবং diagramma-র অর্থ হল চিত্র বা নকশা।
(2)কার্টেগ্রামস হল মানচিত্রে অঙ্কিত নকশা। অন্যভাবে বলা যায়, যখন ভৌগোলিক রাশি তথ্যকে রং, বিন্দু, রেখা, বৃত্ত, ছায়াপাত প্রভৃতি চিহ্ন দ্বারা সরলীকৃত নকশা বা চিত্ররূপে মানচিত্রে উপস্থাপন করা হয়, তখন তাকে মাপচিত্র বা কার্টোগ্রাম বলে।)
(3)cartogram is the diagrammatic representation of statistical data.
(4)পরিসংখ্যানকে মানচিত্রের মধ্যে চিত্রায়িত করাকে মাপচিত্র বা কার্টোগ্রাম বলে।
মাপচিত্রের উদ্দেশ্য (objectives of cartogram)
মাপচিত্র অঙ্কনের উদ্দেশ্য হল-
(1)চিত্র দেখে এক বালকে ভৌগোলিক উপাদানের দৈশিক (spatial) অথবা কালীন (temporal) বন্টনের প্রকৃতি ম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়।
(2)চিত্রকে কার্যকারণের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করা এবং এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানো।
(3)গুণগত ও সংখ্যাগত তথ্যকে বিভিন্ন মাত্রার (dimension) দ্বারা আঁকা যায়।
(4)চিত্র থেকে আশিত উপাদানসমূহকে পরিমাপ (measure) করা যায়।
(5)রাশিতথ্যের অন্তর্নিহিত অর্থ কেবলমাত্র মাপচিত্রে নির্ভুল উপস্থাপনের দ্বারা প্রকাশ পায়।
(6)চিত্রের দৃষ্টিগোচরতা বেশি থাকায় একবার দেখে সহজেই অঞ্চলটির সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
(7)চিত্রের দ্বারা রাশিতথ্যের বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি সম্বন্দে খুব কম সময়ে সহজে ধারণা লাভ করা যায়।
মাপচিত্রের বৈশিষ্ট্য (characteristics of cartogram)
মাপচিত্র বা কাটোগ্রামস অঙ্কনের উদ্দেশ্য হল-
① সমস্ত মাপচিত্র নানা ধরনের জ্যামিতিক রূপ বা মাত্রা ফুটিয়ে তোলে।
② দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এক একটি মাত্রা নির্দেশ করে এবং এইসব মাত্রার সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের মাত্রিক চিত্র (কার্টোগ্রামস্) আঁকা হয়।
③ একটি মাত্রা (যেমন- দৈর্ঘ্য) দিয়ে একমাত্রিক চিত্র (যেমন- স্তম্ভচিত্র), দুটি মাত্রা (দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ) দিয়ে দ্বি মাত্রিক চিত্র (যেমন- পাই চিত্র), তিনটি মাত্রা (দৈর্ঘ্য, প্রখ ও উচ্চতা/গভীরতা) দিয়ে ত্রিমাত্রিক চিত্র (যেমন গোলকচিত্র) আঁকা হয়।
④ প্রতিটি চিত্র থেকে চিত্রের গুণগত ও সংখ্যাগত উন্নয় প্রকার মান বা তথ্য পাওয়া যায়।
⑤ প্রতিটি মাপচিত্র দৃষ্টিনন্দন ও মনোগ্রাহী হওয়া দরকার।
মাপচিত্রের সুবিধা এবং অসুবিধা (merits and demerits of cartogram)
সুবিধা (merit):
ভৌগোলিক রাশি তথ্যসমূহকে কার্টোগ্রাম পদ্ধতিতে উপস্থাপন করে মানচিত্র নির্মাণ করা ভৌগোলিকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থানের (graphical presentation) এই বিশেষ পদ্ধতির প্রধান সুবধিাগুলি হল-
(1)এই পদ্ধতিতে উপস্থাপিত পরিসংখ্যায় খুব সহজে বুঝতে পারা যায়, ফলে পাঠকের মনের উপর স্পষ্ট প্রভাব ফেলে।
(2)বিষয় সম্বন্ধে পূর্ব ধারণা না থাকলেও এই পদ্ধতিতে উপস্থাপিত পরিসংখ্যান পাঠক সহজেই ব্যাখ্যা করতে পারে।
(3)পরিসংখ্যানমালার মানগুলির বিশেষ কোনো ঝোঁক (trend) থাকলে কার্টোগ্রামস্-এর সাহায্যে তা জানা যায় এবং লেখচিত্রের সাহায্যে চলক গন্ধেরখাশপ্রভ এর অন্তবর্তী মান নির্ণয় করা যায়।
(4)কার্টোগ্রামস্-এর মাধ্যমে বিভিন্ন পরিসংখ্যানের মধ্যে সহজেই তুলনা করা যায়।
(5)কার্টোগ্রামস্-এর সাহায্যে পরিসংখ্যানকে সঠিকভারে উপস্থাপিত করে কোনো বস্তু বা ব্যক্তি বা জনসংখ্যার কোনো আপাত অদৃশ্য বৈশিষ্ট্যকে সহজে প্রকাশ করা যায় এবং কার্টোগ্রামস্ পূর্বাভাস (forecasting) প্রদানেও সাহায্য করে।
(6)পরিসংখ্যানগত ত্রুটি থাকলে কার্টোগ্রামস্ থেকে সহজে ধরা সম্ভব হয়।
অসুবিধা (demerit):
কার্টোগ্রামস-এর নানাবিধ সুবিধা থাকলেও এই পদ্ধতিতে পরিসংখ্যান বা রাশিতথ্যমালা প্রদর্শনের প্রধান অসুবিধাগুলি হল-
① এই পদ্ধতিতে রাশিতথ্যমালার উপস্থাপন যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ ও জটিল ব্যাপার।
② কার্টোগ্রামস্-এর মাধ্যমে রাশিতথ্যমালার সম্পূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
③ এই পদ্ধতিতে চলক-এর নির্ভুল বা যথাযথ মান অনেকক্ষেত্রে ঠিক মতো উপস্থাপিত করা যায় না।