মানচিত্র তৈরি করার পদ্ধতি (method of map making)
কোনো জায়গার সঠিক স্কেল অনুসারে অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার দ্বারা রচিত ভূ-জালকের বিন্যাসকে ভিত্তি করে মানচিত্রের কাঠামো তৈরি করা হয়। পৃথিবীর আকার গোলাকার হওয়ায় সমতল কাগজের উপর মানচিত্র আঁকার সময় গোলাকার পৃথিবীকে কাল্পনিকভাবে টেনে, ছিঁড়ে এবং বিকৃত করে তবেই তার মানচিত্র কাগজের সমতল পৃষ্ঠের উপর আঁকা যায়। যে পদ্ধতিতে পৃথিবীর আকারকে বিকৃত করে এবং পৃথিবীর অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখাগুলোকে সমতল পৃষ্ঠে রূপান্তরিত করে মানচিত্র আঁকা হয়, তাকে বলা হয় মানচিত্র অভিক্ষেপ (map projection)। মানচিত্রের প্রতিটি চিহ্ন ও অক্ষর নির্দিষ্ট অর্থ বহন করে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভূ-পৃষ্ঠের মানচিত্র প্রস্তুত করা হয়।
ধাপ-(1) বিভিন্ন যন্ত্রের (ফিতে, চেন, কম্পাস্, ইত্যাদি) সাহায্যে। জরিপ করে মানচিত্র তৈরি করা হয়ে থাকে।
ধাপ-(2)বিমান থেকে নেওয়া আলোকচিত্র থেকে স্টিরিওম্মেদ যন্ত্রের সাহায্যে ত্রিমাত্রিক দৃশ্যপটকে দ্বিমাত্রিকে পরিণত। করে মানচিত্র আঁকা যায়।
ধাপ-(3)কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে নেওয়া দূর-সংবেদী প্রতিকূদ থেকেও মানচিত্র তৈরি করা হয়।
ধাপ-(4)কম্পিউটারে তথ্য সরবরাহ করে নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের সাহায্যে বর্তমান মানচিত্র তৈরি করা হচ্ছে।
ধাপ-(5)এছাড়া হাতে আঁকা মানচিত্র তো আছেই, যা শিল্পীর মুনশিয়ানার পরিচয় বহন করে। তবে এজাতীয় মানচিত্রে স্কেল নির্ভুল হয় না।
মানচিত্রের উপাদান (components or elements of map)
বা মানচিত্র নকশার মূলনীতি (principles of map design)
কাগজ, ব্যবহারিক স্কেল, পেন বা পেন্সিলের সাহায্যে মানচিত্র আঁকা হয়ে থাকে। কিন্তু এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে, যা মানচিত্রকে সঠিকভাবে উপস্থাপিত করে। সেগুলি হল-
(1)স্কেল (scale): মানচিত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল স্কেল। প্রকৃতপক্ষে স্কেল ছাড়া অঙ্কিত মানচিত্রের বিশেষ গুরুত্ব থাকে না, স্কেলহীন মানচিত্রকে স্কেচ ম্যাপ বলে। মানচিত্র কোন স্কেলে আঁকা রয়েছে তার উল্লেখ থাকে মানচিত্রে।
(2)অভিক্ষেপ (projection) বা গ্রিড পদ্ধতি (grid system): একটি নির্দিষ্ট অভিক্ষেপের সাহায্যে আঁকা মানচিত্রটিতে অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার মান উল্লেখ থাকে, তার ফলে জানা যায় স্থানটির অবস্থান।
(3)দিক (direction): মানচিত্রের ভিতরে বা বাইরে দিকনির্দেশক কোনো দাগ থাকে যা সাধারণত উত্তরদিক নির্দেশ করে।
(4)নির্দেশিকা বা সূচি (index/legend) মানচিত্রের ভিতরে যেসব সাংকেতিক চিহ্ন, রং, বর্ণ বা অক্ষর থাকবে তার বিবরণ থাকে মানচিত্র সূচিতে। সূচিটি মানচিত্রের নীচে ডান কিংবা বাম দিকে থাকে।
(5)বহিঃসীমারেখা (outer boundary): যে কোনো মানচিত্রের চারিদিকে সরু বা মোটা রেখা দিয়ে বহিঃসীমারেখা আঁকা হয়। সীমারেখার মধ্যে নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানচিত্র ছাড়াও এর আশেপাশের অন্যান্য এলাকার অংশ বিশেষ থাকে।
(6)শিরোনাম (heading/title): শিরোনাম মানচিত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যে এলাকার মানচিত্র অঙ্কন করা হয়েছে তা বোঝার একমাত্র উপায় শিরোনাম। মানচিত্রের বিষয়বস্তু তার শিরোনামে লেখা থাকে।
(7)অন্যান্য (others): এছাড়াও অনেক সময় মানচিত্রের চারিদিকে বর্ডার, মানচিত্রের তথ্য উৎস, তথ্য সংগ্রহের তারিখ, প্রকাশনার সাল, সমতল পৃষ্ঠ, বিষয়বস্তু নির্বাচন, অভিক্ষেপের নাম প্রভৃতি উল্লেখ থাকে। বর্তমানে GIS software-এর সাহায্যে মানচিত্রের নকশা প্রস্তুত হচ্ছে।