তুলনামূলক রৈখিক স্কেল-এর গঠন (construction of comparative linear scale)
ভূমিকা (introduction)
বিভিন্ন একক স্কেলের একটির সাথে অপরটির তুলনা করার জন্য যে স্কেল অঙ্কন করা হয় তাকে তুলনামূলক স্কেল বলে। তুলনামূলক স্কেল মাইলের সাথে কিলোমিটার, ফুটের সাথে মিটার, মাইলের সাথে ভার্স্ট (Versts), গজের সাথে লি (Li), ③ কিলোমিটারের সাথে রি (Ri) প্রভৃতি স্কেলের তুলনা দেখানোর জন্য অঙ্কন করা হয়। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পদ্ধতির হিসেব④ প্রচলিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে F.P.S পদ্ধতি, ফ্রান্সে C.G.S. পদ্ধতি, চীনদেশে লি এবং জাপান দেশে রি (Ri) পদ্ধতি প্রচলিত। এরূপ খালে এক দেশের মানচিত্র অন্য দেশের মানুষের ব্যবহারের সুবিধার জন্য মানচিত্রে তুলনামূলক স্কেল ব্যবহার করতে হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ও পরে যখন এক দেশের সেনাবাহিনী ভিন্ন একক (unit) প্রচলিত দেশে গিয়ে উপনীত হয় তখন থেকেই তুলনামূলক স্কেল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তুলনামূলক স্কেল ও সরল রৈখিক স্কেল কেবলমাত্র ভিন্ন মাপের দুই বা ততোধিক স্কেলের মধ্যস্থিত সম্পর্ক তুলনা করার জন্য এ স্কেলের প্রচলন। সুতরাং তুলনামূলক স্কেল কখনই দুইটি স্কেলের দৈর্ঘ্যের চেয়ে কম হবে না।
সংজ্ঞা (definition)
সি. জি. এস. ও এফ. পি. এস. পদ্ধতির দুটি এককের মধ্যে তুলনা করার জন্য একটি সরলরেখার উভয়দিকে যে রৈখিক স্কেল অঙ্কন করা হয় তাকে তুলনামূলক রৈখিক স্কেল (comparative linear scale) বা যৌগিক রৈখিক স্কেল (composite linear scale) বলে ।
বৈশিষ্ট্য (characteristics):
(1)দুটি স্কেলের স্কেল-সূচক ভগ্নাংশ (R.F.) একই থাকে।(2)সি. জি. এস. এবং এফ. পি. এস. পদ্ধতির দুটি স্কেল একটি সরলরেখার ওপর প্রতিস্থাপিত করা হয়।
(3)এই প্রকার স্কেল সাধারণত অনুভূমিকভাবে অঙ্কন করা হয়।
(4)দুটি স্কেলের (দুটি রৈখিক স্কেল) 'শূন্য' সরলরেখার একই বিন্দু অবস্থান করে।
(5)দুটি স্কেলের সমান সংখ্যক ও সমান সংখ্যাগত মান (মুখ্যভাগ ও গৌণভাগের ক্ষেত্রে) একই থাকে।
সুবিধা (advantages):
① তুলনামূলক রৈখিক স্কেলের সাহায্যে একটি দেশের মানচিত্রের সঙ্গে অন্য দেশের মানচিত্রের পরিমাপের তুলনা করা সহজ হয়। প্রথমে সামরিক প্রয়োজনে কেবলমাত্র ইউরোপ ও আমেরিকায় ব্যবহৃত হলেও পরে সকল দেশে এর ব্যবহার শুরু হয়।
②এর দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন মাপের ছবি স্কেলের মধ্যে পার্থক্য সহজে ধরা যায়।
③ এক একক থেকে অন্য এককে রূপান্তর করতে অর্থাৎ কোনো প্রকার হিসাব না করে লৈখিকভাবে (graphical) কিমি, মিটার ইত্যাদি একক থেকে মাইল, গজ, ফুট ইত্যাদি এককে পরিবর্তন সহজ হয়।
④ আঁকা ও বোঝা সহজ।
⑤ একসঙ্গে দুটি রৈখিক স্কেল অঙ্কন সম্ভব হয়।
গঠন পদ্ধতি (method of construction):
① প্রথমে সি. জি. এস, এবং এফ. পি. এস. একক অনুসারে স্কেল দুটির নির্ণীত মোট দৈর্ঘ্যের (6 সেমি এবং 3.80 ইঞ্চি) দুটি সরলরেখাকে আলাদা আলাদাভাবে টানা হল (Fig. 2.18)।
② 6 সেমি সরলরেখাটিকে জ্যামিতিক পদ্ধতিতে ৪টি মুখ্যভাগে বিভক্ত করা হল। বাঁদিকের শেষ মুখ্যভাগটিকে অনুরূপভাবে জ্যামিতিক পদ্ধতিতে তিনটি গৌণভাগে বিভক্ত করা হল। 3.80 ইঞ্চি মাপের অঙ্কিত সরলরেখাটিকে গাণিতিক পদ্ধতিতে অর্থাৎ এক-একটি মুখ্যভাগের দৈর্ঘ্য 0.95 ইঞ্চি অনুসারে ডিভাইডারের সাহায্যে 4 টি মুখ্যভাগে বিভক্ত করা হল। (যেহেতু 0.95 ইঞ্চি মাপ সরাসরি ডায়াগোনাল স্কেল থেকে ডিভাইডারের সাহায্যে নেওয়া যায়)। বাঁদিকের প্রান্তে অবস্থিত একটি মুখ্যভাগকে জ্যামিতিক পদ্ধতিতে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হল।
③ সি.জি.এস. পদ্ধতি অনুসারে ডায়াগোনাল স্কেলের সাহায্যে 6 সেমি মাপের একটি সরলরেখা আলাদা করে অঙ্কন করা হল। ওই সরলরেখাটিকে উপরের জ্যামিতিক পদ্ধতিতে বিভাজিত মুখ্য ও গৌণ বিভাগগুলির দৈর্ঘ্য ডিভাইডারের সাহায্যে পরিমাপ করে নির্দিষ্ট সংখ্যক মুখ্য ও গৌলভবিভাজিত করা হল।
④ এরপর উক্ত ভাগ অনুসারে স্কেলটির নকশা করে ভাগ হয় নির্দিষ্ট কিমি লেখা হল। এরপর স্কেলের গা ঘেঁষে অধ্য একটু ফাঁক রেখে একটি সরলরেখা আঁকা হল। এরপ কিমি স্কেলের শূন্য মার্ককে এই সরলরেখা পর্যন্ত বধির করা হল এবং 3.80 ইঞ্চি মাপের সরলরেখাকে গাণিতিক ভাগে বিভক্ত মুখ্যভাগের মাপ (0.95 ইঞ্চি) ডিভাইডার সাহায্য নিয়ে শূন্য মার্কের ডানদিকে তিনটি ভাগ। বামদিকে একটি ভাগ চিহ্নিত করা হল।
⑤ এরপর 3.80 ইঞ্চি মাপের সরলরেখার একটি মুখ্যভাগরে জ্যামিতিক পদ্ধতিতে একটি গৌণভাগের দৈর্ঘ্য (0.32 ইথি ডিভাইডারের সাহায্যে মেপে নিয়ে শূন্য মার্কের বাঁদিয়ে মুখ্যভাগটিকে তিনটি গৌণভাগে বিভক্ত করা হল এব স্কেলটির যথাযথ নকশা করা হল। শূন্য মার্কের ডানদিকে মুখ্যভাগগুলির যথাযথ মান লিখে একেবারে ডানদিকে মাইল লেখা হল। অনুরূপভাবে, শূন্য মার্কের বামদিকে গৌণভাগগুলিতে যথাযথ লিখে শেষে মাইল লেখা হল।