স্কেল-এর ধারণা (concept of scale)
তোমরা ছাত্রছাত্রীরা ছোটবেলা থেকেই স্কেল দিয়ে খাতায় মার্জিন। টানো, ফুটবল মাঠের চিত্র আঁকো, জ্যামিতি আঁকো। তোমরা তিনরকম স্কেল (কাঠের, প্লাস্টিক ও ইস্পাত নির্মিত) ব্যবহার করেছো। এই স্কেলগুলি 6 ইঞ্চি এবং 1 ফুট দৈর্ঘ্যের হয়।
সাধারণভাবে ইংরেজি শব্দ 'scale' এর বাংলা হল 'মাপনি' বা 'দৈর্ঘ্য পরিমাপক দণ্ড'। কিন্তু ভূগোল বিষয়ে আঁকার জন্য এই স্কেল ব্যবহৃত হলেও ভূগোলের ছাত্রছাত্রী বা ভৌগোলিকগণ আরও এক প্রকার 'স্কেল' ব্যবহার করেন। ভূগোলে স্কেল হল 'দুটি দূরত্বের অনুপাত', যাকে অনুসরণ করে মানচিত্র অঙ্কন করা হয়। এখন প্রশ্ন হল কোন দুটি দূরত্বের অনুপাতকে বোঝানো হল? উত্তরে বলা যায় সমগ্র পৃথিবী বা মহাদেশ, দেশ, রাজ্য বা অঞ্চলের ওপর অবস্থিত যে কোনো দুটি দূরবর্তী স্থানকে তাদের অন্তর্বর্তী দূরত্ব অনুসরণ করে নিখুঁতভাবে সাদা খাতায় বা কাগজে আঁকা সম্ভব নয়। মনে করো কলকাতা থেকে খড়াপুরের বাস্তব দূরত্ব প্রায় 125 কিমি। এখন যদি তোমাদের সাদা খাতায় পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে এঁকে কলকাতা আর খড়গপুর দেখাতে বলা হয়, তাহলে ঐ খাতায় 125 কিমি দূরত্ব এঁকে দেখানো সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে কলকাতা ও খড়গপুরের দূরত্বকে নির্দিষ্ট অনুপাতে ছোটো করে অঙ্কন করতে হবে, তবেই খাতায় এঁকে দেখানো সম্ভব হবে অর্থাৎ ভূমি ভাগের ওপর যে কোনো দুটি স্থানের মধ্যবর্তী প্রকৃত দূরত্ব অপেক্ষা খাতায় অঙ্কিত ঐ দুটি স্থান নির্দেশক বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্ব একটা নির্দিষ্ট অনুপাত অনুযায়ী ছোটো হয়। এই অনুপাতটাই হল ব্যবহারিক ভূগোলের 'স্কেল' (scale)। অর্থাৎ বাস্তবে কোনো মহাদেশ, দেশ বা অঞ্চলের প্রকৃত দৈর্ঘ্য বা ক্ষেত্রফলকে ছোটো বা বড়ো করার পদ্ধতি হল স্কেল। সংক্ষেপে বলা যায় স্কেল হল দুটি দূরত্বের অনুপাত (ratio) বা সম্পর্ক (relationship) উদাহরণস্বরূপ মানচিত্রের স্কেল কলকাতা থেকে খড়াপুর) যদি 1 সেমিতে 125 কিমি হয়, তবে বুঝতে হবে, মানচিত্রে (সাদা খাতা বা কাগজ) যে দূরত্ব 1 সেমি, সেটি বাস্তবে বা ভূমিতে 125 কিমির সমান। অর্থাৎ, কলকাতা থেকে খড়াপুরের দূরত্বকে মানচিত্রে 1 সেমিতে দেখানো হচ্ছে। সুতরাং এক্ষেত্রে স্কেল হল মানচিত্র দূরত্ব (খাতায়): ভূমিভাগের দূরত্ব অর্থাৎ 1 সেমি 125 কিমি। স্কেলের এই অনুপাতকে ভগ্নাংশের আকারেও প্রকাশ করা হয়। অথবা 1 সেমিতে 125 কিমি বলা যায়। মানচিত্রে দুটি স্থানের দূরত্ব বলতে স্থান দুটির সরলরৈখিক দূরত্বকেই বোঝায়। কোনো বক্ররেখার দূরত্ব নয়।
স্কেল-এর অর্থ (meaning of scale)
ইংরেজি শব্দ scale যার সাধারণ অর্থ 'মানদণ্ড' বা 'মাপনি'। স্কেল অনুসারে মানচিত্র আঁকতে হয়। প্রধানত 'স্কেল' কথাটির দুটি অর্থ আছে। যথা-
①আভিধানিক (dictionary) অর্থ এবং
② ভূগোলশাস্ত্রসম্মত (geographical) অর্থ
(1)আভিধানিক অর্থ: 'স্কেল' কথাটির আভিধানিক অর্থ (অর্থাৎ অভিধান বা ডিকশনারিতে দেওয়া মানে) হল দাঁড়িপাল্লা। চলতি কথায় 'স্কেল' বলতে আমরা বুঝি 'বুলার' (ruler)। যেমন জ্যামিতি বাক্সের ছয় ইঞ্চি স্কেল বা ছয় ইঞ্চি বুলার। এছাড়াও 'স্কেল' বলতে আমরা বুঝি মাপনি। অর্থাৎ যার সাহায্যে কোনো কিছুর মাপ নেওয়া বা, যা দিয়ে মাপা হয়। এক্ষেত্রে 'স্কেল' হল পরিমাপের যন্ত্র। সাধারণভাবে স্কেল বলতে পরিমাপের যন্ত্রকে বোঝায়, যেমন- বুলার, ফিতে, দাঁড়িপাল্লা, শিকল ইত্যাদি।
(2)ভূগোলশাস্ত্রসম্মত অর্থ:'স্কেল' কথাটির ভূগোল-শাস্ত্রসম্মত অর্থ হল ভূ-পৃষ্ঠে যে কোনো দুটি স্থানের প্রকৃত দূরত্ব এবং মানচিত্রে ওই দুটি স্থানের আপাত দূরত্বের মধ্যে অনুপাত। এই অনুপাতকে নানাভাবে প্রকাশ করা যায়।মানচিত্র যাঁরাই ব্যবহার করেন, যেমন যাঁরা জরিপ করেন, যাঁরা ইঞ্জিনিয়ার, যাঁরা ভূ-বিজ্ঞানী ইত্যাদি, তাঁদের সবাই 'স্কেল' কথাটিকে এই অর্থে ব্যবহার করে থাকেন। সাধারণভাবে ভুগোলে স্কেল বলাতে একমাত্র মানচিত্র স্কেলকে বোঝায়।