মানচিত্র স্কেল-এর ধারণা (concept of map scale)
(1)মানচিত্রে যে কোনো দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব এবং ভূ-পৃষ্ঠে বা ভূমিভাগে ওই দুটি স্থানের মধ্যে প্রকৃত দূরত্বের যে অনুপাত (ratio) তাকে মানচিত্র স্কেল বলে।
(2)কোনো নির্দিষ্ট মানচিত্র বিজ্ঞানসম্মতভাবে আঁকার জন্য যে মান (standard) এবং চিত্র (picture) ঠিক করা হয়, তাকেই মানচিত্র (মান ও চিত্র) স্কেল বা মানচিত্র মাপনি (map scale) বলে।
(3)A scale is the ration between map distance and ground distance between two corresponding points or, In other words scale is the ratio between map distance and ground distance.
দ্রষ্টব্য: মানচিত্র (map): কোনো নির্দিষ্ট মাপে পৃথিবীপৃষ্ঠকে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে চিত্রায়িত করা হলে তাকে মানচিত্র (map) বলা হয়। অর্থাৎ মানচিত্র হল- মান (standard)+ চিত্র (picture) = মানচিত্র (standard picture)
মানচিত্র স্কেল-এর সূত্র-
মানচিত্র স্কেল (MS)= মানচিত্রে দুটি স্থানের দূরত্ব (MD): ভূ-পৃষ্ঠে ওই দুটি স্থানের মধ্যে প্রকৃত দূরত্ব (GD)
এখানে,
MS map scale.
MD map distance between two point.
GD-ground distance between the same two point.
উদাহরণ (example)
কোনো মানচিত্রের স্কেল হল এক সেন্টিমিটারে এক কিলোমিটার (one centimetre to a kilometre) তখন আমরা বুঝি যে, মানচিত্রে দুটি স্থান যদি এক সেন্টিমিটার ব্যবধানে বা দূরত্বে অবস্থান করে তাহলে ভূ-পৃষ্ঠে ব্য ভূ-ভাগে তাদের মধ্যে প্রকৃত দূরত্ব বা ব্যবধান হল এক কিলোমিটার। অনুরূপভাবে-
মানচিত্রে এক ইঞ্চিতে এক মাইল (one inch to a mile) লেখা থাকলে বুঝতে হবে যে, মানচিত্রে দুটি স্থান এক ইঞ্চি ব্যবধানে অবস্থান করলে ভূমিভাগে এদের মধ্যে প্রকৃত ব্যবধান বা দূরত্ব হবে এক ইঞ্চি ব্যবধানে অবস্থান করলে ভূমিভাগে এদের মধ্যে প্রকৃত ব্যবধান বা দূরত্ব হবে এক মাইল।
ধরা যাক, ভূ-পৃষ্ঠের উপর খড়াপুর শহর ও কলকাতা মহানগরের মধ্যে দূরত্ব 125 কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে খড়াপুর ও কলকাতার মধ্যে 5 সেন্টিমিটার দূরত্ব ভূ-পৃষ্ঠে 125 কিলোমিটার দূরত্বকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ মানচিত্রে 1 সেমি দূরত্ব (MD), সেটি ভূমিতে (125+5)= 25 কিমি দূরত্বকে বোঝায় (GD)। তাহদে আলোচ্য মানচিত্রের স্কেল হল । সেমিতে 25 কিমি।
স্কেল-এর প্রতীক (notation of scale) বা অনুপাত ও স্কেল-এর মধ্যে সম্পর্ক (relation between ratio and scale):
অনুপাত ছাড়া স্কেল নির্ণয় করা যায় না। তাই অনুপাত ও স্কেল অবিভাজ্য। একটি উদাহরণের সাহায্যে অনুপাত ও স্কেল-এর মধ্যে এই নিবিড় সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ধরা যাক, একটি কাগজে পৃথিবী বা তার কোনো অংশের মানচিত্র আঁকতে হবে। তখন নিশ্চয়ই পৃথিবীকে বা তার কোনো নির্দিষ্ট অংশটিকে আমরা ছোটো করে আঁকব। বা, বলা যেতে পারে আমরা ছোটো করে আঁকতে বাধ্য হবো। কেননা পৃথিবীকে আঁকার জন্য যদি গোটা পৃথিবীর মাপের একটা কাগজ জোগাড় করতে হয়, সে তো বাস্তবে অসম্ভব ব্যাপার। এই সমস্যা সমাধান করার সবচেয়ে সহজ ও বিজ্ঞানসম্মত উপায় হল ভূ-পৃষ্ঠের উপর কোনো দুটি নির্দিষ্ট স্থানের প্রকৃত দূরত্বকে একটি পছন্দসই অনুপাতে (ratio) প্রকাশ করা। যেমন, ভূ-পৃষ্ঠের উপর কোনো দুটি নির্দিষ্ট স্থানের প্রকৃত দূরত্ব যদি হয় 1 কিলোমিটার, তাহলে ওই 1 কিলোমিটার দূরত্বা দূরত্বকে আমরা মানচিত্রে, ধরা যাক, 1 সেন্টিমিটার দূরত্বে প্রকাশ করতে পারি। সেক্ষেত্রে ভূ-পৃষ্ঠ বা ভূমির ওপর দুটি স্থানের প্রকৃত দূরত্ব (অর্থাৎ উদাহরণ অনুসারে । কিলোমিটার) এবং মানচিত্রে ওই দুটি স্থানের অনুরূপ দূরত্ব (অর্থাৎ 1 সেন্টিমিটার)-এর অনুপাত হবে 1: 1,00,000 (পড়তে হবে, ওয়ান ইজ টু ওয়ান লাখ বা এক লক্ষের সমানুপাতিক)। আমরা জানি যে, 1 লক্ষ সেন্টিমিটারে 1 কিলোমিটার।
মানচিত্রে স্কেল-এর প্রয়োগ বা প্রয়োজনীয়তা বা ব্যবহার (application or necessity or uses of scale in maps)
প্রধানত দুটি কারণে স্কেলের প্রয়োজন হয়। যথা-
[A] মানচিত্র স্কেল। যেমন-
(1)বাড়ির নক্সা তৈরি করতে, বিশেষ করে পৌরসভাতে বাড়ির নক্সা দেখাতে।
(2)মানচিত্রে স্কেল ব্যবহার করে ভূ-পৃষ্ঠে দুটি স্থানের মধ্যবর্তী দূরত্ব নির্ণয় করার ক্ষেত্রে।
(3)আবহাওয়া পরিমাপের যন্ত্র এবং জমি জরিপ-এর কাজে স্কেল ব্যবহার হয়।
(4)মানচিত্রে অঙ্কিত রেলপথ, সড়ক পথ, নদ-নদী প্রভৃতির দৈর্ঘ্য, ক্ষেত্রফল ও আয়তন পরিমাপে।
(5)মানচিত্র প্রস্তুত করতে স্কেলের প্রয়োজন হয়।
(6)মানচিত্রের আয়তন ছোটো বা বড়ো-এর ক্ষেত্রে।
(7)ভূগোলক (globe) তথা মানচিত্র অভিক্ষেপ (map projection) অঙ্গনে।
[B] ক্রমপর্যায়িত স্কেল। যেমন এটি মূলত রাশিতথ্যকে বিভিন্ন মাপচিত্র বা কার্টেগ্রাম (যেমন- স্তম্ভচিত্র, রেখা লেখচিত্র, পাই চিত্র ইত্যাদি) আঁকতে ব্যবহার করা হয়। রাশিতথ্যের মাত্রা সাধারণত বেশি হয়ে থাকে, সেগুলিকে ছোটো করে উপস্থাপনের জন্য এই স্কেলের প্রয়োজন হয়।