মানচিত্র অঙ্কনবিদ্যার ধারণা (concept of cartography)
মানচিত্র অঙ্কনবিদ্যা বা কাটোগ্রাফি (cartography) শব্দটির। উৎপত্তি দুটি গ্রিক শব্দ থেকে। গ্রিক শব্দ কার্টেস (kartes) শব্দের অর্থ ম্যাপ বা মানচিত্র (map) এবং গ্রাফিন (graphein) শব্দের অর্থ আঁকা (write) অর্থাৎ মানচিত্র আঁকার অনুশীলন ও চর্চা হল কার্টোগ্রাফি। ম্যাপ শব্দটির উৎপত্তি লাতিন শব্দ
'ম্যাঙ্কা থেকে। যার অর্থ কাপড়। প্রাচীনকালে কাপড়, চামড়া, তুলোট কাগজের ওপর ম্যাপ বা মানচিত্র আঁকা হতো। তাই মানচিত্র অঙ্কন বিদ্যা বা বিষয়কে বলা হয় কার্টোগ্রাফি। এই বিষয়ের দ্বারা পৃথিবী বা ভূ-পৃষ্ঠ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যকে চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপনের পদ্ধতি জানা যায়।
মানচিত্র অঙ্কনবিদ্যার সংজ্ঞা (definition of cartography)
(1)মানচিত্র অঙ্কন বিদ্যাকে বলা হয় 'কার্টোগ্রাফি' (carto-graphy)। এই শাস্ত্র দ্বারা পৃথিবী বা ভূ-পৃষ্ঠ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যকে চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপনের পদ্ধতি বা কৌশল জানা যায়।
(2)The Science of constructing maps and charts. It includes the making of original survey, selection of suitable map projections and decisions of colours, layer, and visual representation is called cartography
মানচিত্র অঙ্কনবিদ্যার প্রকৃতি (nature of cartography)
মানচিত্র অঙ্কনবিদ্যা বা কাটোগ্রাফি হল মানচিত্র প্রস্তুতির চর্চা ও কৌশল। বিজ্ঞান, কৌশল ও নান্দনিক বোধের সংমিশ্রণে স্থানিক তথ্য সংগ্রহের জন্য মানচিত্র অঙ্কন করা হয়। বর্তমানে দূরসংবেদন (RS) ও GIS-এর প্রয়োগের ফলে মানচিত্র অঙ্কনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট আধুনিকীকরণ ঘটেছে। সর্বপ্রথম টলেমি পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেন। তবে গ্রিক ভৌগোলিক অ্যানাক্রি-ম্যান্ডারকে 'মানচিত্র ভূগোলের জনক' বলা হয়।
মানচিত্র অঙ্কনবিদ্যার পরিধি (scope of cartography)
প্রাকৃতিক ভূগোলের শাখারূপে ও আদি বিজ্ঞানরূপে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা স্থান পেয়েছে। এই আদি বিজ্ঞান পুরোপুরি গণিতের উপর বিশেষত গোলকীয় ত্রিকোণমিতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। গণিতের উপর নির্ভর করে মানচিত্র অঙ্কন শুরু হয়, যেখানে ভূ-পৃষ্ঠের উপাদানসমূহের অবস্থান দেখানো হয়। আবার পৃথিবীর সাপেক্ষে মহাকাশের সমস্ত জ্যোতিষ্কের অবস্থান, পরিক্রমণ পথ ইত্যাদি মানচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়। এভাবে গণিতের হাত ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা থেকে সৃষ্টি হয় মানচিত্র অঙ্কনবিদ্যা বা কার্টোগ্রাফির। গ্রিক দার্শনিক অ্যানক্রিম্যান্ডার (Anaximander) প্রথম স্কেল অনুসারে মনুষ্য বসতিযুক্ত এলাকাগুলির মানচিত্র অঙ্কন করেন। তাঁর মানচিত্র মূলতঃ 2700 খ্রিস্ট পূর্বাব্দে সুমেরীয়দের সৃষ্ট চিত্রধর্মী মানচিত্রের ওপর নির্ভর করে আঁকা। তাঁর মানচিত্রে তিনি দেখিয়েছিলেন শ্রীস ইউরেশীয়ার মধ্যস্থলে অবস্থিত এবং পৃথিবীর চারপাশ সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত। এর পর রোমান দার্শনিক ক্লদিয়াস টলেমি (Claudius Ptolemy) অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে পৃথিবীর মানচিত্র প্রথম অভঙ্কন করেন। মানচিত্র অঙ্কনবিদ্যা একটি প্রয়োগিক বিষয় হলেও এটি জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার একটি ফলশ্রুতি। গণিতশাস্ত্র ছাড়া মানচিত্র অঙ্কনবিদ্যা (কার্টোগ্রাফি) চর্চা করা যায় না। মানচিত্র অঙ্কনবিদ্যায় অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ নির্ণয় এবং দ্রাঘিমা ও সময়ের সম্পর্ক, বিশেষ ধরনের আকদি বিশিষ্ট (geoid) ত্রিমাত্রিক পৃথিবীকে কাগজে সঠিকভাবে দ্বিমাত্রিক মানচিত্রে পরিণত করা, প্রভৃতি বিষয় আলোচিত হয়। এছাড়াও মানচিত্র অঙ্কনবিদ্যায় প্রযুক্তি ও কম্পিউটারে। ব্যবহার, Global Positioning System (GPS)-এর সাহায্যে সঠিক অবস্থান নির্ণয় ইত্যাদি বিষয়গুলিকে ভবিষ্যতে আরও ভালোভাবে আলোচনা করার সুযোগ থাকবে।