অঞ্চলের তাৎপর্ব (Significance of Region):
পৃথিবীর অঞ্চলকে সাধারণীকরণ করে তার গঠনগত ব্যাখ্যা, আঞ্চলিক রীতি বিশ্লেষণ, এমনকি অঞ্চলকেন্দ্রিক সমস্ত ধরনের গবেষণা বর্তমানে ভূগোল চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিমুখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে অঞ্চলের তাৎপর্যগুলিকে আলোচনা করা হল।
স্পষ্ট ধারণা (Clear idea):
পৃথিবীতে প্রতিটি অঞ্চলের কাঠামোই অতীত থেকে আজ পর্যন্ত মানব সভ্যতার বহুমুখী বিবর্তনের ধারায় স্বতন্ত্রভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই কর্মকৌশলকেন্দ্রিক আর্থসামাজিক পরিস্থিতির ধারাবাহিকতা উপলব্ধির মাধ্যমে অঞ্চল নামক বিষয়টি (গঠনগত এবং কার্যকরী দিক থেকে) আমাদের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এইভাবে, বিগত পঞ্চাশ বছরে, অঞ্চলের যাবতীয় ধারণাগুলিও পূর্বের তুলনায় যথেষ্ট পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন-অতীতে ভৌগোলিকদের কাছে অঞ্চলের বস্তুগত ধারণাটি সর্বাধিক প্রাধান্য পেলেও, বর্তমানে অঞ্চলের বিষয়মুখী ধারণাটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সঠিকভাবে ভূমিব্যবহার (Proper land use):
পার্থিব অঞ্চল মাত্রই সেখানে বহুমুখী ভূমিব্যবহার প্রণালী গড়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অঞ্চলের প্রকৃতি তথা আঞ্চলিক গঠন-কাঠামোকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে না পারলে এই ধরনের ভূমিব্যবহার প্রণালীতে যথেষ্ট অসঙ্গতি দেখা দিতে পারে। সেই কারণে, অঞ্চলের স্পষ্ট ধারণা সঠিক ভূমিব্যবহার প্রণালী গড়ে তুলতে যথেষ্ট সহায়ক হয়।
ভৌগোলিক সীমানা নির্ধারণ (Determining the geographical boundaries):
পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দিক থেকে সমস্ত অঞ্চলেরই সূক্ষ্ম বা স্পষ্ট কোনো নির্ধারিত সীমানা থাকে। তাই, সঠিক অঞ্চলের ধারণা শুধু প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলিরই নয়, বরং প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলির সাথে অন্যান্য ক্রিয়ামূলক অঞ্চলগুলির সীমানা নির্ধারণে যথেষ্ট সহযোগী হয়ে ওঠে।
সমস্যা নির্ধারণ (Determining the problems):
উন্নয়নমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে ভৌগোলিকরা দুট বিশেষ অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন, যথা-উন্নত অঞ্চল এবং পশ্চাত্পদ অঞ্চল। বিভিন্ন অঞ্চল বিশারদ উন্নত অঞ্চলের সাপেক্ষে পশ্চাদপদ অঞ্চলগুলির তুলনা প্রসঙ্গে বেশকিছু সমস্যাকে চিহ্নিত করেন। এর ফলে অঞ্চলের। সম্ভাবনামূলক একাধিক বিষয় যেকোনো দেশের আর্থসামাজিক কাঠামোয় দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
আঞ্চলিক পরিকল্পনা (Regional planning):
সাধারণত একটি দেশের অর্থনৈতিক-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে একাধিক উপযুক্ত পরিকল্পনার সাহায্য নেওয়া হয়। কাজেই সঠিকভাবে যে-কোনও ধরনের পরিকল্পনার। বাস্তবায়ন ঘটাতে অঞ্চল সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা একান্ত আবশ্যক।
সম্পর্ক নির্ধারণ (Determining relationship):
সমস্ত অঞ্চলের মধ্যেই প্রাকৃতিক ও ক্রিয়াশীর উপাদানগুলির মধ্যে একটি পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া বা যোগসূত্র গড়ে উঠতে দেখা যায়। অঞ্চল নির্ধারণের মধ্য দিয়ে এই ধরনের সম্পর্ক অনুধাবন আরও সহজ হয়ে ওঠে।
উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Developmental decision making):
সঠিক ধারণার ওপর ভিত্তি করাবিভিন্ন পরিকল্পনাবিদ অঞ্চলের সীমাবদ্ধতা এবং ভবিষ্যতের চাহিদাগুলিকে উপলব্ধি করে একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন আঞ্চলিক স্তরে একাধিক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এর ফলে, অঞ্চলকেন্দ্রিক উন্নয়নমূলক বেশ কিছু কর্মসূচিকে সুন্দর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে দ্রুত প্রয়োগযোগ্য করে তোলা যায়।
গবেষণা (Research):
পরিশেষে বলা যায়, যে সমস্ত অঞ্চলবিদ তথা পরিকল্পনাবিদ বিভিন্ন স্তরে গবেষণায় লিপ্ত রয়েছেন, তাঁদের কাছে অঞ্চলের ধারণাটি যথেষ্ট তাৎপর্য বহন করে।