welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ (Classification of natural flora of India)

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ(Classification of natural flora of India)


ভূমিকা :

যে সমস্ত গাছ বা উদ্ভিদ কোনো স্থানের জলবায়ু ও মৃত্তিকাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই জন্মায় ও বড়ো হয়, তাদের ওই স্থানের স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলে। যদিও ভারতের উদ্ভিদজগতকে (Flora) এককথায় ক্রান্তীয় মৌসুমি' (Tropical Monsoonal) বলা যায়, তবুও বৃষ্টিপাত, উন্নতা, বায়ুর আর্দ্রতা, ভূপ্রকৃতি, মাটি প্রভৃতির তারতম্য অনুসারে ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে বিভিন্নভাগে ভাগ করা যায়। ভারতে প্রায় 30,000 প্রজাতির উদ্ভিদ দেখা যায়। 

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে কয়েকটি উদ্ভিদ অঞ্চলে (Floristic Region) প্রথম বিভক্ত করেন হুকার (Hooker) এবং থমসন ( Thomson) 1855 সালে। এরপর সি বি ক্লার্ক (C.B. Clarke, 1898 ) এশিয়ার অংশকে 6টি উদ্ভিদ অঞ্চলে ভাগ করেছেন। 1937 সালে সি সি কালডার (C.C. Calder) ভারতের 6টি উদ্ভিদ অঞ্চলকে চিহ্নিত করেন : -
(1) উত্তর-পশ্চিম হিমালয়, (2) পূর্ব-হিমালয়, (3) সিন্ধু সমভূমি, (4) গঙ্গা সমভূমি (5) দাক্ষিণাত্য এবং (6) মালাবার অঞ্চল। ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের একটা সাধারণ শ্রেণিবিভাগ করা খুব কঠিন কাজ। বিভিন্ন উদ্ভিদবিজ্ঞানী (Botanists) ও পরিবেশবিজ্ঞানীগণ (Ecologists) বহুভাবে এর শ্রেণিবিভাগ করেছেন। এইচ জি চ্যাম্পিয়ন (H. G. Champion, 1936) ভারতে 116 রকমের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শনাক্ত করেছেন এবং তাদের মধ্যে কতগুলির উপবিভাগও রয়েছে। চ্যাম্পিয়ন-র এই শ্রেণিবিভাগের সরলীকরণ করেছেন জি এস পুরি (G. S. Puri, 1960), লেগ্রিস(Legris, 1963), চ্যাম্পিয়ন (Champion) & এস কে শেঠ (S. K. Seth, 1968), এবং এস এস নেগি (S.S. Negi, 1990)। এইসমস্ত বিশেষজ্ঞদের শ্রেণিবিভাগের ওপর নির্ভর করে ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে 5টি প্রধান ভাগে এবং 16টি উপবিভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলি হল নিম্নরূপ—

A. আর্দ্র-ক্রান্তীয় অরণ্য (Moist Tropical Forests) :


1. ক্রান্তীয় আর্দ্র চিরহরিৎ অরণ্য (Tropical Wet Evergreen Forests) : 

এই ধরনের বৈশিষ্ট্যযুক্ত বৃষ্টি অরণ্য সেইসমস্ত অঞ্চলে জন্মায় যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 250 সেন্টিমিটারের বেশি, বার্ষিক উয়তা প্রায় 25°C-27°C এবং বার্ষিক গড় আর্দ্রতা 77%-এর বেশি এবং শুষ্ক ঋতু সুস্পষ্টভাবে ছোটো। অত্যধিক উয়তা ও আর্দ্রতায় এই অরণ্যের গাছের পাতাগুলি একসঙ্গে ঝরে পড়ে না। তাই এই বনভূমির নাম চিরহরিৎ বা চিরসবুজ (Evergreen) অরণ্য। এই অরণ্যের গাছগুলি দীর্ঘ, খুব ঘন, বহুস্তরযুক্ত ও মেসোফাইটিক (Mesophytic) প্রজাতির হয়। এই গাছগুলি 45 মিটার, আবার কখনো কখনো 60 মিটারেরও বেশি দীর্ঘ হয়। সূর্যের আলো দিনের বেলাতেও বৃহৎ পত্রযুক্ত এই অরণ্যের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না বলে ঘনছায়ায় মাটির ওপর বেত, বাঁশ, ফার্ন প্রভৃতি গাছ জন্মায়। বিভিন্ন প্রকারের অর্কিড (Orchids) বড়ো গাছগুলির ওপর জন্মায়।

ভারতে ক্রান্তীয় আর্দ্র চিরহরিৎ অরণ্য দেখা যায় পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিম ঢালে (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 500-1370 মিটার উচ্চে) এবং অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, উজান অসম, মণিপুর, মিজোরাম ত্রিপুরা ও আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। ভারতের প্রায় ৪% বনভূমি এই প্রকৃতির।
এই অরণ্যের গাছগুলির কাঠ খুব শক্ত, ভারী ও মজবুত বলে এর বাণিজ্যিক মূল্য খুব বেশি। কোথাও কোথাও হাতির সাহায্যে কাঠ সংগ্রহ করা হয়। এই অরণ্যে শিশু, গর্জন, রোজউড, মেহগনি, চাপলাস, আবলুস, রবার, পুন, তুন, বিশপ উড, আয়রন উড, বাঁশ, বেত প্রভৃতি জন্মায়।

2. ক্রান্তীয় প্রায় চিরহরিৎ অরণ্য (Tropical Semi-Evergreen Forests) : 

এই ধরনের অরণ্য সে সমস্ত অঞ্চলে দেখা যায় যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত 200-250 সেন্টিমিটার, বার্ষিক গড় উন্নতা 24°C-27°C এ আপেক্ষিক আর্দ্রতা থাকে 75%। এই ধরনের অরণ্য ভারতের পশ্চিম উপকূল, অসম, পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্সে পূর্ব হিমালয়ের নিম্ন ঢাল, ওড়িশা এবং আন্দামানে দেখা যায়। ভারতের প্রায় 4% বনভূমি এই প্রকৃতির।

ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য তুলনামূলকভাবে কম ঘন, কিন্তু এই অরণ্যের গাছগুলি বেশি সঙ্গলিপ্সু (বিশেষত অসমে)। কোনো কোনো জায়গায় চিরহরিৎ ও পর্ণমোচী বৃক্ষের মিশ্রণ দেখা যায়। এই অরণ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি হল শক্ত কাণ্ড, খসখসে ও পুরু গাছের ছাল, ঘন লতানো গাছ। এখানে প্রচুর পরিমানে এপিফাইট (Epiphytes) প্রজাতির গাছ জন্মায়। এই অরণ্যের বিভিন্ন প্রকার গাছগুলি হল শিমুল, রোজ উড, কদম, লরেল, কুসুম, বাঁশ প্রভৃতি যা পশ্চিমঘাট পর্বতে দেখা যায় এবং সাদা সিডার, ভারতীয় চেস্টনাট, চাঁপা, আমগাছ প্রভৃতি হিমালয় অঞ্চলে দেখা যায়।

3. ক্রান্তীয় আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য (Tropical Moist Deciduous Forests) : 


এই ধরনের অরণ্য মাঝারি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল (বার্ষিক 100-200 সেন্টিমিটার), বার্ষিক গড় উষ্ণতা প্রায় 27° সেলসিয়াস এবং বার্ষিক আপেক্ষিক গড় আর্দ্রতা 60–75% যুক্ত অঞ্চলে দেখা যায়। এই ধরনের অরণ্য পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিম ও পূর্ব ঢালে, তরাই ও ভাবর সহ শিবালিক অঞ্চল (77E- 88°E), মণিপুর ও মিজোরাম, পূর্ব মধ্যপ্রদেশের পূর্বাংশ, ছোটোনাগপুর মালভূমি, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের কিয়দংশ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে দেখা যায়। ভারতের প্রায় 37% বনভূমি এই প্রকৃতির।



এই অরণ্যের গাছের পাতাগুলি বসন্তের শেষে ও গ্রীষ্মের শুরুতে 6-8 সপ্তাহের জন্য ঝরে যায়, কারণ এইসময় আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। এইসময়ে ভৌমজলস্তরও নেমে যায়। বর্ষাকাল শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এই গাছগুলির সবুজ পাতা আবার গজিয়ে ওঠে। এই অরণ্যের বৈশিষ্ট্য হল বিভিন্ন প্রজাতির বহুস্তরযুক্ত বৃক্ষের সমন্বয়।
এই অরণ্য খুবই মূল্যবান, কারণ এর কাঠ ও অন্যান্য উপজাত দ্রব্যের বাণিজ্যিক মূল্য বেশি। এই অরণ্যের প্রধান গাছগুলি হল শাল, সেগুন, বাদাম, ধূপ, কোকো, রোজ উড, শিমুল, আমলকি, অর্জুন, আবলুস, চন্দন, জাম, বাঁশ প্রভৃতি। এই অরণ্য থেকে কাঠ সংগ্রহ করা সহজ কারণ একই প্রজাতির বৃক্ষ পাশাপাশি জন্মায়। এই অরণ্য যদিও চিরহরিৎ অরণ্য অপেক্ষা বেশি অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করছে কিন্তু বর্তমানে এই অরণ্যের অনেকটা অঞ্চল কৃষিকাজের জন্য পরিষ্কার করা হয়েছে।

4. উপকূলীয় বনভূমি (Lit teral and Swamp Forests ) :


 এই ধরনের অরণ্য বদ্বীপ, খাঁড়ি, জোয়ার প্রভাবিত অঞ্চলে দেখা যায়। তাই এই অরণ্যের নাম Delta বা Tidal Forest. উপকূলীয় বনভূমি সমুদ্র উপকূল (swamp) বরাবর গড়ে উঠেছে। এই বনভূমি গঙ্গা, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা এবং কাবেরীর বদ্বীপ এলাকায় গড়ে উঠেছে। এখানকার গাছগুলি মিষ্টি ও নোনা জলে বৃদ্ধি পায়। ঘন ম্যানগ্রোভ (Mangroves) অরণ্য, উপকূলরেখা বরাবর আবৃত খাঁড়ি (backwaters, লেগুন), নোনা জলাভূমি এইসব অঞ্চলে গড়ে উঠেছে এবং মোট 6,740 বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে যা পৃথিবীর ম্যানগ্রোভ অরণ্যের প্রায় 7%। ভারতের প্রায় 0-6% বনভূমি এই প্রকৃতির। এই অরণ্যের কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত ও ঘনতম ম্যানগ্রোভ অরণ্য হল সুন্দরবন (Sunderban) যা গঙ্গা বদ্বীপে সৃষ্টি হয়েছে। সুন্দরবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গাছ হল সুন্দরি যা সুন্দরবনে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এই অরণ্যের কাঠ শক্ত ও মজবুত যা গৃহনির্মাণ ও নৌকাতৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। এই অরণ্যের প্রধান গাংগুলি হল সুন্দরি, গরান, গেঁওয়া, ক্যাওড়া, হোগলা, গোলপাতা প্রভৃতি। তা ছাড়া এই বনভূমিতে মধু ও মোম পাওয়া যায়।

B. শুষ্ক ক্রান্তীয় অরণ্য (Dry Tropical Forest) :


5. ক্রান্তীয় শুষ্ক চিরহরিৎ অরণ্য (Tropical Dry Evergreen Forests) : 


এই ধরনের বৈশিষ্ট্য যুক্ত অরণ্য গড়ে উঠেছে তামিলনাড়ু উপকূল বরাবর যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 100 সেন্টিমিটার এবং বেশিরভাগ বৃষ্টিপাত উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর দ্বারা অক্টোবর-ডিসেম্বরের মধ্যে সংগঠিত হয়। এখানকার বার্ষিক গড় উয়তা 28°C এবং বার্ষিক গড় আর্দ্রতা 75% । এই অঞ্চল ক্রান্তীয় শুষ্ক চিরহরিৎ অরণ্য দ্বারা আবৃত। এই অরণ্য গড়ে ওঠার জন্য ঋতুগত বৃষ্টিপাতের বন্টনই দায়ী। এখানে বেশিরভাগ বৃষ্টিপাত শীতকালে হয়। এই অরণ্যের মুখ্য বৈশিষ্ট্য হল স্বল্প উচ্চতা বিশিষ্ট গাছ যা সাধারণত 12 মিটার উঁচু এবং সম্পূর্ণ চাঁদোয়ার মতো আবৃত, বাঁশ ও ঘাসের দুর্লভ উপস্থিতি ইত্যাদি। এই অরণ্যের প্রধান গাছ হল জাম, কোকো, রিঠা, তেঁতুল, নিম, মুকুন্দ, তাল, গামারি, বেত ইত্যাদি। ভারতের প্রায় 0-2% অরণ্য এই প্রকৃতির। এই অরণ্যের বেশির ভাগ অঞ্চল কৃষিকাজ এবং কাজুবাদাম চাষের জন্য পরিষ্কার করা হয়েছে।

6. ক্রান্তীয় শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য (Tropical Dry Deciduous Forests) :

 এই ধরনের অরণ্য আর্দ্র, পর্ণমোচী অরণ্যের মতো এবং শুষ্ক ঋতুতে গাছের পাতা ঝরে যায়। এই দুই অরণ্যের মধ্যে পার্থক্য হল ক্রান্তীয় শুষ্ক পর্ণমোচী বৃক্ষ অরণ্যের গাছগুলি তুলনামূলকভাবে কম বৃষ্টিযুক্ত (বার্ষিক 100 150 সেন্টিমিটার) অঞ্চলে জন্মায়। এই অরণ্য অনেকটা মিশ্র প্রকৃতির—আর্দ্র ঋতুতে এটি আর্দ্র পর্ণমোচী হিসেবে এবং শুষ্ক ঋতুতে কাঁটাঝোপের আকার ধারণ করে। এই অরণ্যের বৈশিষ্ট্য হল ঘনসন্নিবদ্ধ গাছের অবস্থান ও অসমান চাঁদোয়া, বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের মিশ্রণ এবং উচ্চতা 20 মিটার ও তার বেশি। অরণ্যের ভিতরে ভূমিতলে যথেষ্ট সূর্যালোক পৌঁছোয় বলে বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস ও লতানো গাছের বিকাশ ঘটে। ক্রান্তীয় শুষ্ক পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য ভারতের এক বিশাল অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করছে। রাজস্থান, পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এবং পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া এই অরণ্য উত্তর থেকে দক্ষিণে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অরণ্যের প্রধান গাছগুলি

হল সেগুন, রোজ উড়, শিরীষ, বাঁশ ইত্যাদি। কৃষিকাজের উদ্দেশ্যে এই অরণ্যের একট বিশাল অংশ পরিষ্কার করা হয়েছে এবং এই অরণ্য কিছু সমস্যার, যেমন—বৃক্ষচ্ছেদন, অতিরিক্ত পশুচারণ এবং দাবানলের সম্মুখীন।

7. ক্রান্তীয় কাঁটাঝোপের অরণ্য (Tropical Thorn Forests) :


 যে সমস্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম ( 75 সেন্টিমিটারের কম), আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ কম (50%-এর কম) এবং উষ্ণতা খুব বেশি ( 25°C-30°C), সেখানে ঘন অরণ্য গড়ে ওঠার সুযোগ খুব কম বলে ক্রান্তীয় কাঁটাজাতীয় ঝোপ দেখা যায়। এখানকার গাছগুলির উচ্চতা কম (6-10 মিটার উচ্চতা সর্বাধিক) এবং প্রশস্তভাবে ও বিক্ষিপ্তভাবে জন্মায়। বাবলাজাতীয় গাছ এখানকার প্রধান বৃক্ষ। ইউফরবিয়াস গাছও (Euphorbias) উল্লেখযোগ্য। ভারতীয় বন্য খেজুর গাছ সাধারণত আৰ্দ্ৰ নীচু জায়গায় জন্মায়। বর্ষাকালে কিছু ঘাসও জন্মায়।

প্রধানত দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে, যথা—রাজস্থান, দক্ষিণ-পশ্চিম পাঞ্জাব, পশ্চিম হরিয়ানা, কচ্ছ ও সৌরাষ্ট্রের কিছু অংশে এই অরণ্য দেখা যায়। থর মরুভূমিতে এই অরণ্য মরুসাদৃশ অরণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। এই অরণ্য পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে বিশেষ করে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুর এক বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে। এই অরণ্য ভারতের প্রায় 2.6% এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে। এই অরণ্যের প্রধান গাছগুলি হল খয়ের, নিম, বাবলা, ফণীমনসা, কাজু, বুনো খেজুর, তাল, বেরি, পলাশ ইত্যাদি।

C. পার্বত্য উপক্রান্তীয় অরণ্য (Montane Subtropical Forests) :


৪. উপক্রান্তীয় প্রশস্ত পত্রযুক্ত অরণ্য (Sub-tropical Broad Leaved Forests) : 

এই অরণ্য পূর্ব হিমালয়ে ৪৪° পূর্বদ্রাঘিমারেখায় 1000-2000 মি. উচ্চতায় অবস্থান করছে যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত। 75-200 সেন্টিমিটার, বার্ষিক গড় উষ্ণতা 18°-21° সে এবং বার্ষিক গড় আর্দ্রতা 80% হবে। এই অরণ্যে চিরহরিৎ প্রজাতির গাছের সমৃদ্ধি দেখা যায় এবং গাছগুলি লম্বা (20-30 মিটার) ও ঘন হয়। অ্যাশ ও বিচ সহ চিরহরিৎ ওক এবং চেস্টনাট এখানকার প্রধান বৃক্ষ। পাহাড়ের নীচে শাল ও ওপরে পাইন গাছ জন্মায়। লতানো গাছ এবং পরগাছা প্রজাতির বৃক্ষও এখানে দেখা যায়।
এই অরণ্য দক্ষিণ ভারতে ততটা বিস্তার লাভ করেনি। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 1,070 1,525 মিটার উচ্চতায় নীলগিরি ও পালনি পাহাড়ে যদিও এই অরণ্য দেখা যায়, এবং ভারতের প্রায় 0.4% এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে। খর্বাকৃতি আর্দ্র অরণ্য এবং ক্রান্তীয় বৃষ্টি-অরণ্যের মতো ততটা সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ নয়। পশ্চিমঘাট পর্বতের উচ্চ অংশে, যথা—মহাবালেশ্বর, সাতপুরা ও মহাকাল পর্বত, বাস্তারের উচ্চভূমি, আরাবল্লি পর্বতের মাউন্ট আবুতে এই অরণ্য দেখা যায়।

 9. উপক্রান্তীয় আর্দ্র পাইন অরণ্য (Sub-tropical Moist Pine Forests) : 


পশ্চিম হিমালয়ে 73°E-88 E দ্রাঘিমারেখায় পার্বত্য আর্দ্র অরণ্যের সমান উচ্চতায় (1,000-2,000 মিটার এই অরণ্য দেখা যায়। অরুণাচল প্রদেশের বিদ্যাদংশ, মণিপুর, মেঘালয়, নাগা ও খাসি পাহাড়ের একই উচ্চতায় এই অরণ্য দেখা যায়। চির বা চিল (chir or chil) এই অরণ্যের প্রধান গাছ যার কাঠ খুব শক্ত। এই মূল্যবান কাঠ আসবাবপত্র, বাক্স, বাড়িঘর এবং রেলের স্লিপার তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। এই গাছ রেজিন ও তার্পিন তেল তৈরির জন্যও ব্যবহৃত হয়। ভারতের প্রায় 6.6% এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে এই অরণ্য।

10. উপক্রান্তীয় শুষ্ক চিরহরিৎ অরণ্য (Sub-tropical Dry Ever- green Forests) :


এই অরণ্য ভাবর, শিবালিক পর্বতশ্রেণি এবং হিমালয় পর্বতের পশ্চিমাংশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 1000 মিটার উচ্চতায় অবস্থান করছে। এখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 50-100 সেন্টিমিটার। বৃষ্টিপাত ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে হয়। গ্রীষ্মকালে পর্যাপ্ত উষ্ণতা পায়। শীতকালে উন্নতা মাঝে মাঝে হিমাঙ্কের নীচে নেমে গিয়ে তুষারপাত হয়। ক্ষুদ্রাকার চিরহরিৎ বৃক্ষ ও ঝোপ, কাঁটাগাছ, ঔষধি এবং ঘাস সহ এই অরণ্য প্রধানত গুল্মময়। এই অরণ্যের প্রধান গাছ হল জলপাই, খেজুর প্রজাতির গাছ। এই অরণ্য দেশের প্রায় 2.5% এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে।

D. পার্বত্য নাতিশীতোয় বনভূমি (Montane Temperate Forests) :


 11. পার্বত্য আর্দ্র নাতিশীতোয় বনভূমি (Montane Wet Temperate Forest) :


এই ধরনের অরণ্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 1800-3000 মিটার উচ্চতায় দেখা যায় যেখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 150-300 সেন্টিমিটার, বার্ষিক গড় উষ্ণতা 11°C-14°C এবং আপেক্ষিক গড় আর্দ্রতা ৪০%-এর বেশি। এই অরণ্য প্রধানত তামিলনাড়ু ও কেরালার উঁচু পাহাড়গুলিতে এবং পূর্ব হিমালয় অঞ্চলে (88°E দ্রাঘিমার পূর্বে) বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, সিকিম, নাগাল্যান্ডের পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায়। এই অরণ্যের গাছগুলি ঘনসন্নিবিষ্ট, কাণ্ডগুলি ক্ষুদ্রাকৃতি এবং কাণ্ডগুলির বেড় বেশি হয়। পাতাগুলি ঘন ও গোলাকার হয়। শাখাপ্রশাখাগুলি মস, ফার্ন এবং অন্যান্য পরগাছা প্রজাতির বৃক্ষ দ্বারা আবৃত থাকে। লতানো গাছগুলি সাধারণত কাষ্ঠল হয়। গাছগুলির উচ্চতা 6 মিটারের বেশি হয় না। প্রধান গাছ হল দেবদারু, ভারতীয় চেস্টনাট, বার্চ, তাল, নাল পাই ওক, হেমলক ইত্যাদি। এই বনভূমির নিম্নাংশে ছোটো আকারের বাঁশের ঘন জঙ্গল লক্ষ করা যায়। এই অরণ্য ভারতের প্রায় 3.6% এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে।

12. হিমালয়ের আর্দ্র নাতিশীতোষ অরণ্য (Himalayan Moist Temperate Forests) :


 হিমালয় পর্বতের নাতিশীতোয় বলয়ে 1500 3600 মিটার উচ্চতায় যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 150-250 সেন্টিমিটার, সেখানে এই অরণ্য দেখা যায়। এই অরণ্য কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, দার্জিলিং এবং সিকিম-হিমালয়ে বিস্তৃত। এই অরণ্যে প্রধানত সরলবর্গীয় প্রকৃতির বৃক্ষ দেখা যায় যার বেশিরভাগই 30-50 মিটার দীর্ঘ হয়। আর্দ্রতার জন্য পূর্বদিকে প্রধানত প্রশস্ত পত্র বু চিরহরিৎ বৃক্ষের সঙ্গে সরলবর্গীয় বৃক্ষের মিশ্রণ দেখা যায়। প্রধান বৃক্ষ হল পাইন, সিডার, রূপালি ফাৱ, স্থূস ইত্যাদি। গাছগুলি লম্বা এবং এই অঞ্চলে ভূমিতল গুল্মময় হয় এবং ওক, রোডোডেনড্রন, লরেল এবং বাঁশগাছ জন্মায়। তুলনামূলকভাবে শুষ্কতর পশ্চিমাংশে যেখানে বৃষ্টিপাত 115-180 সেন্টিমিটার বিশেষত 80° দ্রাঘিমার পশ্চিমে দেবদারু প্রধান বৃক্ষ (যার কাঠ শক্ত ও মজবুত) দেখা যায়। এই কাঠ প্রধানত নির্মাণকার্যে ও রেলের স্লিপার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই অরণ্য দেশের 3.4% এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে।

13. হিমালয়ের শুষ্ক নাতিশীতোয় অরণ্য (Himalayan Dry Temperate Forests) :


জাঙ্গল গুল্মসহ (Xerophyte শ্রেণি) এই অরণ্য প্রধানত সরলবর্গীয় প্রকৃতির। এখানকার প্রধান বৃক্ষ হল দেবদারু, ওক, অ্যাশ, ম্যাপেল, জলপাই, সিডার ইত্যাদি। এই অরণ্য হিমালয় পর্বতশ্রেণির শুদ্ধ বলয়ে গড়ে উঠেছে যেখানে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু খুব দুর্বল ও অস্পষ্ট এবং বার্ষিক অধঃক্ষেপণের পরিমাণ 100 সেন্টিমিটারের কম। এই অরণ্য প্রধানত লাডাখ, লাহুল, ছাম্বা, কিন্নর, গাড়োয়াল ও সিকিম-হিমালয়ে দেখতে পাওয়া যায়। দেশের 0.3% এলাকা জুড়ে এই অরণ্য অবস্থানে করছে।

E. আল্পীয় অরণ্য (Alpine Forests) :


14 & 15. উপ-আল্পীয় অরণ্য ও আর্দ্র আল্পীয় ঝোপ ও গুল্ম (Sub-Alpine & Moist Alpine Serubs) : 


আল্পীয় অরণ্য হিমালয় পর্বতশ্রেণির 3,300-5,500 মিটার, এমনকি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 3,800 মিটার উচ্চতায় দেখা যায়। অবস্থান ও প্রজাতির বিভিন্নতার ওপর নির্ভর করে এই অরণ্যকে 3 ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (i) অব-আত্মীয় ঝোপ ও গ্রন্থ (Scrub) (ii) উপ-আল্পীয় (Sub-alpine) অরণ্য ও (iii) বৃক্ষ অরণ্যের ঊর্ধ্বসীমায় আত্মীয় অরণ্য ঝোপ গু এবং তৃণভূমির পাশেই অবস্থান করে। সরলবর্গীয় বৃক্ষ সহ বড়ো বড়ো ঝোপ এবং ছোটো ছোটো বক্স গাছ (Scrub) এই অরণ্যের অন্তর্ভুক্ত। এই অরণ্যে সরলবর্গীয় ও বৃহৎ পত্রযুক্ত অরণ্যের মিশ্রণ দেখা যায়। এই অরণ্যে সরলবর্গীয় বৃক্ষগুলির উচ্চতা প্রায় 30 মিটার এবং বৃহৎ পত্রযুক্ত গাছগুি উচ্চতা 10 মিটারের মতো হয়। এই অরণ্যের উল্লেখযোগ্য গাছ হল ফার, স্ক্রুস, রোডোড্রেনড্রন, ভাল ইত্যাদি। রোডোড্রেনড্রন, বার্চ, পুষ্পলতা প্রভৃতি চিরহরিৎ বৃক্ষের ঘন বিকাশ আর্দ্র আত্মীয় অৱশ্যে ঘটে থাকে। এই অরণ্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 3,000 মিটার উচ্চতা থেকে হিমরেখা পর্যন্ত দেখা যায়।

 16. শুষ্ক আল্পীয় অরণ্য (Dry Alpine Scrub ) : 


সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 3,000 মিটারের বেশি উচ্চতায় এই অরণ্য হিমালয়ের শুষ্ক বলয়ে দেখা যায় যেখানে জেরোফাইট শ্রেণির জালাল উদ্ভিদ, খর্বাকৃতি ঝোপ দেখা যায়। এই অরণ্যের প্রধান বৃক্ষ হল জুনিপার, পুষ্পলতা ইত্যাদি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01