তফসিলি জাতি (Scheduled Caste) :
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে সাংবিধানিকভাবে ভারতের সংরক্ষণ নীতি চালু হয় জাতিগতভাবে পিছিয়ে পড়া জাতি উপজাতি নিয়ে। রাজনৈতিক তাগিদ এবং সামাজিক বৈষম্যের কারনে পরবর্তীকালে অধিকতর জাতি ও উপজাতি শ্রেণীকে সংরক্ষণএর আওতায় নিয়ে আসা হয়। কোন কোন জাতি তপশিলী জাতি ভুক্ত হবে তাতে রাজ্যভিত্তিক ভোগান্তর হয়ে থাকে। এরুপ জাতিভুক্ত মানুষজন বসতিস্থান হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত জনসংখ্যা হলেও বহু ক্ষেত্রে তারা জেলা, রাজ্য ছাড়িয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন আর্থসামাজিক কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে তফসিলি জাতিভুক্ত জনসংখ্যা বন্টন দেশে বিভিন্ন সময়ের জনগণনায় ধরা পড়েছে।
জাতভিত্তিক জনসংখ্যা বন্টন ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান সাম্প্রতিককালে তৈরি হয় না। সর্বশেষ নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান বিস্তারিত ভাবে প্রস্তুত হয়েছিল প্রায় নয় দশক আগে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ১৯৩১ এর জনগণনায়। উক্ত জনগণনায় ব্রাহ্মণ, অব্রাহ্মণ এবং মুসলিম জনসংখ্যা এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন জাতি সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা গণনা করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন ভারতে জনসংখ্যার অভূতপূর্ব বিচলন ঘটে সীমান্ত অতিক্রম করে। পৌরায়ন ও শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গেও এই বিচলন বৃদ্ধি পায়। জাতপাত ভিত্তিক শোষনও আলগা হতে থাকে। শিক্ষার অগ্রগতি ও রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়ে মানুষ নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন অনেক বেশি।
ভারতে জাত ব্যবস্থা বহু প্রাচীন। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে জাত ভিত্তিক বিভাগ বহু প্রচলিত। বৈদিক যুগে চতুঃবর্ণ সৃষ্টি হয়েছিল কর্ম বিভাজনের উদ্দেশ্যে। ব্রাহ্মণ ধর্ম চর্চার জন্য, ক্ষত্রিয় নাগরিক সুরক্ষার দায়িত্ব, বৈশ্য ব্যবসা-বাণিজ্য ও সম্পন্ন কৃষি কাজের জন্য, শূদ্র কৃষি ও সেবামূলক কাজের জন্য, এভাবে বিভাজন হয়। পরবর্তীকালে এই জাতি বিভাজনের সুযোগ নিয়ে উচ্চবর্ণ ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় ও নিম্নবর্ণ শূদ্র সৃষ্টি করা হয়। বৈশ্যগণ এর মাঝামাঝি থাকেন। নমশূদ্রগণ সবার শেষে থাকেন আউটকাস্ট বা বহিঃজাতি হিসেবে এই জাতিভেদের বাইরে যারা, যেসব কাজ উচ্চ ও নিম্নবর্ণের মানুষরা করবেন না সেই কাজগুলো তাদেরকে করতে হয়। এভাবে উচ্চবর্ণ কতৃক নিম্নবর্ণ ও অতি নিম্নবর্ণকে শোষনের সুযোগ তৈরী হয়। সৃষ্টি হয় জাতপাত ভিত্তিক সংঘাত। বসতি বিন্যাসেও এর প্রভাব পড়ে। আধুনিককালে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় রাজনীতিও অনেক ক্ষেত্রে জাতপাত নির্ভর হয়ে পড়েছে। সাংবিধানিকভাবে প্রশাসনও জাতপাত নির্ভর সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেছেন। যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক মাপকাঠি বেধে দেওয়া হয়নি, তাই জাতিগতভাবে নিম্নবর্গের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য, যে বৈষম্য একদা প্রবল ছিল জাতিগত ভাবে উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণ মানুষের মধ্যে।
পূর্বে প্রদত্ত তালিকা অনুসারে দেখা যায়, তফসিলি জাতিভুক্ত জনসংখ্যা সর্বাধিক রয়েছে উত্তর প্রদেশে কোটি ৫১ লক্ষ্য ৩৮ হাজার, যা ওই রাজ্যের জনসংখ্যার ২১.১৫ শতাংশ দ্বিতীয় স্থানে পশ্চিমবঙ্গ, ১ কোটি ৮৪ লক্ষ ৫০ হাজার জনসংখ্যা, যা এই রাজ্যের জনসংখ্যার ২৩.০২ শতাংশ, তৃতীয় বিহার ১ কোটি ৩০ লাখ হাজার যা এই রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৫.৭২ শতাংশ চতুর্থ স্থানে অন্ধ্রপ্রদেশ ১ কোটি ৩০ লক্ষ্য ৩১ হাজ জনসংখ্যার হার এই রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৬.১৯ শতাংশ, পঞ্চম স্থানে তামিলনাড়ু, জনসংখ্যা ১ কোটি ১৮ ৮ হাজার যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ, মহারাষ্ট্র, ৮৮২ হাজার জন জাতি। যা রাজ্যের ১০.৩০ শতাংশ। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রাজ্যের মধ্যে রয়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, কাটিক, পাঞ্জাব, ওড়িয়া ও হরিয়ানা ইত্যাদি।
ভারতবর্ষের মোট তফসিলি জাতিভুক্ত জনসংখ্যা ২০০১ সালের আদমসুমারী অনুযায়ী ১৬ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৬ হাজার।