কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি

    সম্পদ ও দ্বন্দ্ব (Resources and Conflict)

     সম্পদ ও দ্বন্দ্ব (Resources and Conflict) 

    সম্পদ অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকৃতির দান, বিশেষত সেই সম্পদ যদি খনিজ ধাতব/অধাতব ও জ্বালানি সম্পদ হয়, যেমন- 

    আকরিক লোহা, খনিজ তেল, তামা, হিরে ইত্যাদি। তবে এই সমস্ত সম্পদ হল আঞ্চলিক সম্পদ (localised resources) এবং পৃথিবীর বহু দেশ তাদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে, যেমন— ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র (খনিজ তেল); সিয়েরা লিওন (হিরে), কঙ্গো (সোনা, তামা, কোবাল্ট) ইত্যাদি খনিজ দ্রব্য আহরণ ও রপ্তানিরপ র বিশেষ ভাবে নির্ভর করে।

     পৃথিবীতে খনিজ সম্পদের আহরণ ও ব্যবহারের ধরণ লক্ষ করলে দেখা যায় যে অন্য লাভজনক বিকল্প অর্থনৈতিক উদ্যোগ নেই বলে, যেখানেই কোনো দেশ তার খনিজ সম্পদকে অতিরিক্ত আহরণ করে তার নিজস্ব অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেছে, সেখানেই প্রতিবেশী বা অন্য কোনো দেশ ওই খনিজ সম্পদের ওপর তার অধিকার দাবী করে, যে-কোনো অজুহাতে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। যেমন— ইরাক-কুয়েত এর যুদ্ধ (1990)। এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের মূল কারণ ছিল ঋণগ্রস্ত ইরাক খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ কুয়েত-এর তেল সম্পদ ব্যবহার করে নিজেদের দেনার ভার কমাতে চেয়েছিল। আবার 2019 সালের মে-জুন মাসে পারস্য উপসাগরে খনিজ তেলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে আমেরিকা এবং ব্রিটেন ইরানের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। ইরানের তেলের ট্যাঙ্কার ব্রিটেন পাকড়াও করে। ইরান-ও গোপনে আমেরিকার গুপ্তচর ড্রোনকে গুলি করে নামায় বলে অভিযোগ করা হয়।


    মধ্য এশিয়াতে খনিজ দ্বন্দ্বের মূল কারণ যেমন খনিজ তেলের ওপর অধিকার দাবী, তেমনই আফ্রিকার অ্যাঙ্গোলা-লাইবেরিয়া এবং সিয়েরা লিওন-এ দ্বন্দ্বের মূল খনিজ হল হিরে বা ডায়মন্ড (diamond)। 

    এখানে সিয়েরা লিওনের হিরের খনি থেকে বেআইনি ভাবে হিরে তোলা হয়। সেই হিরে গোপনে বিশ্বের বাজারে বিক্রি করে টাকা তোলা হয়। ওই টাকার একটা বড়ো "অংশ দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র কেনা হয় এবং অ্যাঙ্গোলা ও আশপাশের এলাকার গৃহযুদ্ধে ওই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই কারণে সিয়েরা লিওনের হিরে এত রক্তপাতের কারণ বলে, বিশ্ব বাজারে ওই হিরের নামকরণ হয়েছে “ব্লাড ডায়মন্ড" (Blood diamond)।


    1960-70-এর দশকে পাপুয়া নিউগিনি ও বোগেনভিল দ্বীপ-এর অধিবাসীদের মধ্যে “প্যাংগুনা” (Panguna) তামার খনি থেকে তামা ও সোনা তোলার বিরুদ্ধে প্রবল জনরোষ ও বিক্ষোভ শুরু হয়। কারণ বাইরে থেকে প্রচুর শ্রমিক এই খনিতে কাজের জন্য আসা শুরু করে। যে কারণে নানা অসামাজিক কাজের উৎপাত আরম্ভ হয়। প্রায় 20 বছরের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের ফলে এখানে তামা ও সোনা আহরণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

    আবার বিগত দু-দশক ( 2000 সাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত সময়ে) চিন দক্ষিণ চিন সাগরে তার আধিপত্য বজায় রাখার জন্য যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তার মূল উদ্দেশ্য হল দক্ষিণ চিন সাগর-এর মহীসোপান অঞ্চলে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিপুল ভান্ডার আছে, চিন এই সম্পদ হাত ছাড়া করতে চায় না। এই কারণে ভিয়েতনাম-এর সঙ্গে চিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে।


    একই ভাবে 1867 সালে USA রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা কিনে নিয়েছিল তার কারণ শুধু রাজনৈতিক নয়। আলাস্কা খনিজ সম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ অঞ্চল। বর্তমানে USA আলাস্কা থেকে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণ করে। এখানে সোনা, রুপো প্রভৃতি ধাতুর বিপুল ভান্ডার আছে। সুতরাং খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধি এবং দ্বন্দ্বের যুগ্ম কারণ।

    নবীনতর পূর্বতন

    نموذج الاتصال