অভিযোজনের ধারণা (Concept of Adaptation)
• Cambridge English Dictionary-তে 'অভিযোজন' বা 'Adaptation' সম্পর্কে বলা হয়েছে— “The process of changing to suit different conditions.” অর্থাৎ, বিভিন্ন পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিকে মানিয়ে নেওয়াই হল অভিযোজন।
•1964 খ্রিস্টাব্দে বিশিষ্ট গবেষক Buffaloe বলেছেন— কোনও একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে বেঁচে থাকার এবং বংশবৃদ্ধি করার জন্য, জীবের (মানুষের) যে গঠনগত, আচরAdaptationণগত ও শারীরবৃত্তীয় স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে, তাকেই অভিযোজন বলে।
• বিখ্যাত ভূগোলবিদ টমাস স্পেনসার (T. Spencer)-এর মতে, পরিবেশে মানুষের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ হল অভিযোজন। সুতরাং, অভিযোজন কৌশলটি প্রাকৃতিক পরিবেশে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে তার সংশ্লিষ্ট পরিবেশের প্রতিকূল ও অনুকূল যাবতীয় প্রভাবকে আয়ত্ত করে, 'নিজস্ব জীবন প্রণালী' গঠনে সাহায্য করে। তাই দীর্ঘ সময়ের অবকাশে, সমগ্র পৃথিবীব্যাপী গড়ে ওঠা আদিম উপজাতি গোষ্ঠীগুলি এখনও তাদের জীবনযাত্রাকে অভিযোজনের ধারায় টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
অভিযোজনের বিভিন্ন ধাপ (Different steps of Adaptation) :
সমগ্র পৃথিবীতে মানুষের পরিবেশভিত্তিক তিন ধরনের অভিযোজনগত স্তর পরিলক্ষিত হয়, যেমন—
1. জিনগত অভিযোজন (Genetic Adaptation) :
বংশপরম্পরায় মানুষ পূর্বপুরুষের মাধ্যমে জিনগত অভিযোজন পেয়ে থাকে। পরিবেশে এই ধরনের অভিযোজনের মাধ্যমে সর্বদা যোগ্যতমের উদ্বর্তন (Survival of the fittest) ঘটে। এক্ষেত্রে "Natural Selection" একটি অন্যতম বিষয়।
* প্রসঙ্গত, মানুষের আকার, ত্বকের বর্ণ, উচ্চতা প্রভৃতি জিনগত অভিযোজনের মধ্যে পড়ে।
2. শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন (Physiological adaptation)
মানুষের এই ধরনের অভিযোজনে, বহিরাগত পরিবেশের উদ্দীপনা এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় থাকে। অভিযোজনের এই স্তরে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর মধ্যে, তার নিজস্ব পরিবেশকে মানিয়ে নেওয়ার একটি বিশেষ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। প্রসঙ্গত, মানুষের জীবনশৈলী, আত্মরক্ষা প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় অভিযোজনের অন্তর্গত।
3. ক্রমবিকাশী অভিযোজন (Developmental adaptation) :
মানুষের ক্রমবিকাশী অভিযোজনগত স্তরে পরিবেশগত পরিমণ্ডলকে আরও সহজতর করে তুলে জীবনের বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে।
অভিযোজন সংক্রান্ত তিনটি বিশেষ ধারা (Three specific Rules relating to Adaptation) :
পৃথিবীর সমগ্র জীবে অভিযোজনগত তিনটি বিশেষ ধারাকে তিনজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর নামানুসারে উল্লেখ করা হয়েছে।
যেমন ---
1. অ্যালেন-এর ধারা (Allen's Rule) :
অভিযোজনে অ্যালেন-এর ধারা অনুসারে বলা হয়, যে সকল উয়রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী হিমমণ্ডল বা শীতল অঞ্চলে বসবাস করে তাদের দেহের তাপ বিকিরণ কম হবে এবং সংশ্লিষ্ট জীবের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিও ক্ষুদ্রাকার হবে। যেমন—তুন্দ্রা অঞ্চলের অধিবাসীদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষুদ্রাকার। আবার, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পরিবেশে যে সমস্ত উয়রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী বসবাস করে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গাগুলি প্রসারিত ও দীর্ঘাকার। এদের দেহের অভ্যন্তরীণ তাপ দ্রুত বিকিরিত হতে পারে। যেমন-ক্রান্তীয় অঞ্চলের নাইলোটিক নিগ্রো জনগোষ্ঠী।
2. বার্গম্যান-এর ধারা (Bergmann's Rule) :
অভিযোজনে বার্গম্যান-এর ধারা অনুসারে বলা হয়, বহুজাতিরূপ সমন্বিত উয়রক্তের প্রাণীরা যদি উষ্ণতার মধ্যে বসবাস করে, তাদের দেহ ভর কম এবং দেহটি কৃশকায় হবে। আবার ঐ প্রাণীরা যদি শীতপ্রধান অঞ্চলে বসবাস করে, তাহলে তাদের দেহভর বেশি ও দেহটি স্থূলকায় হবে।
3.গ্লোগার-এর ধারা (Gloger's Rule) :
অভিযোজনে স্লোগার-এর ধারায় বলা হয়, যে সকল স্তন্যপায়ী প্রাণী কিংবা পক্ষী, গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে বসবাস করবে, তাদের গায়ের বর্ণ বা লোম কিংবা পালক বাদামি বর্ণের হবে। অপরদিকে, ওই সকল প্রাণী যদি শীতপ্রধান অঞ্চলে বসবাস করে তাদের গায়ের বর্ণ, লোম কিংবা পালক হালকা বাদামি বা সাদা বর্ণের হবে। এই সকল প্রাণীদের দেহরঙের পরিবর্তনে সূর্যরশ্মির পতন কোণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।