welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

জলনির্গম প্রণালী Drainage Pattern

ধারণা (Concept) জলনির্গম প্রণালী ভূমিরূপবিদ্যায় এক উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি অববাহিকায় প্রবাহিত সমস্ত নদী মিলিতভাবে যে নকশা (plan) সৃষ্

জলনির্গম প্রণালী ও গঠিত ভূমিরূপ Drainage Pattern and  Developing Landform 



● ধারণা (Concept) জলনির্গম প্রণালী ভূমিরূপবিদ্যায় এক উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি অববাহিকায় প্রবাহিত সমস্ত নদী মিলিতভাবে যে নকশা (plan) সৃষ্টি করে, তাকে জলনির্গম প্রণালী বলে। অধিকাংশ জলনির্গম প্রণালী মূলত ভূতাত্ত্বিক গঠনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হলেও অন্যান্য অনেক উপাদান জলনির্গমন প্রণালীকে প্রভাবিত করে। যেমন- (i) ভূমির প্রারম্ভিক ঢাল (Initial Slope of Land), (ii) শিলার কাঠিন্যের তারতম্য (Inequalities of rock hardness), (ill) নদী অববাহিকার যে সাম্প্রতিক ভূতাত্ত্বিক ও ভূ-গাঠনিক ইতিহাস (recent Geologic and Geomorphic history of river basin) (iv) ভূমিরূপ গঠনকারী শক্তি (diastrophism), (v) ভূমির গঠন (structure of land), (vi) বিভিন্ন প্রকার শিলার বিন্যাস (Pattern of rock arrangement)।

 উপরি উল্লিখিত কারণগুলি যেহেতু জলনির্গম প্রণালীর ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাই জলনির্গম প্রণালী বিশ্লেষণের মাধ্যম আমরা ওই অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ গঠন (internal structure) এবং শিলা লক্ষণ (lithology) জানতে পারি। জলনির্গম প্রণালীতে ‘গঠন' বা 'structure' শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ও বৃহৎ ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে নির্দেশ করার জন্যই গঠন' শব্দটি ব্যবহার করা হয়। 


এই ধরনের ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি বিশালাকৃতির ভাঁজ ও চ্যুতি থেকে অতি সূক্ষ্ম নতি, আয়াম, দারণ, স্তরায়ণ তল শিলার কাঠিনা খনিজের সংঘবান্ধতা, প্রবেশ্যতা প্রভৃতি হতে পারে। এই সমস্ত ভাত্ত্বিক গঠনের মধ্যে ভাঁজ ও চ্যুতি সেই সঙ্গে শিলার দারণ, আয়াম ও নতি জলনির্গম প্রণালীর বিন্যাসকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। নদীগুলি ভূপৃষ্ঠের উপর প্রবাহিত হওয়ার সময় ভূতাত্ত্বিক গঠনের সঙ্গে তার গতিপথের সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে চলার সৃষ্টি করে। তাই ভূতাত্ত্বিক গঠন দ্বারা জলনির্গম প্রণালীগুলি উৎপত্তি লাভ করে। আবার জলনির্গম প্রণালীগুলি নীচে শায়িত শিলা গঠনের সঙ্গে সামস্য রক্ষা করে সৃষ্টি হয়, কালে ভূ-অভ্যন্তরের শিলা গঠনের সঙ্গে খুব সুন্দরভাবে ভূপৃষ্ঠে তার প্রতিফলন ঘটায়। নদী নকশার বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন সংজ্ঞাভিত্তিক পদ্ধতি নির্ণয় করা হয়। এই পদ্ধতিগুলি মূলত চার ধরনের।
(a) নদী জালিকার অন্তর্গত নদীগুলির অভিমুখ বা দিক বিশ্লেষণ, (b) উপনীদ ও প্রধান নদীগুলির মিলনস্থলে কোণের বিশ্লেষণ, (c) দ্বিখণ্ডীকরণ অনুপাত (bifurecation ratio) নির্ণয়ের সাহায্যে, এবং (d) সামগ্রিকভাবে নদী নকশার আকৃতির বিষয়ে বর্ণনা করা যেতে পারে। অববাহিকার অন্তর্গত নদী জালিকার যে সামগ্রিক আকৃতি তৈরি হয়, তার সঙ্গে কোনো আকৃতির সাম্যস্যের ভিত্তিতে কিংবা কোনো জ্যামিতিক আকৃতির সাদৃশ্যের ভিত্তিতে নদী নকশা নির্ণয় করা হয়। যেমন গাছের সঙ্গে সামঞ্জস্যের ভিত্তিতে বৃক্ষরূপী জলনির্গমন প্রণালী আবার প্রধান নদীর সঙ্গে উপনদীগুলি সমান্তরালে অবস্থান করলে সমান্তরাল জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে। 

ইলনির্গমন প্রণালী মূলত কোনো অববাহিকা অঞ্চলে নদী উৎপত্তির সম্ভাবনা থেকেই সৃষ্টি হয়। নদী জলধারা উৎপত্তি লাভ করে এবং সামান্য ভূ-আন্দোলনে তা প্রভাবিত হয়। তাই অভ্যন্তরীণ গঠনের সমস্ত বৈশিষ্ট্য নদীর প্রবাহপথকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং দুর্বল অববাহিকা অঞ্চলের উপর দিয়ে নদী ভালোভাবে প্রবাহিত হয়। কারণ অববাহিকার চ্যুতি, পারণ এবং দুর্বল শিলাস্তরকে লক্ষ্য করে নদী এগিয়ে চলে। সুতরাং অভ্যন্তরীণ গঠনের দ্বারা নদী জালিকা বিস্তারে জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে।
                
              

                     পরিশেষে বলা যায় যে, যে অববাহিকার প্রথন যত সুক্ষ্ম, সেই অববাহিকাতে নদী সৃষ্টির সম্ভাবনা তত বেশি এবং সেই অববাহিকার নদীর ঘনত্ব তত বেশি। 

★বিভিন্ন ধরনের জলনির্গম প্রণালী Different Drainage Patterns 


যেহেতু জলনির্গম প্রণালী বিভিন্ন কারণের দ্বারা প্রভাবিত হয়, সেইজনা জলনির্গমন প্রণালীর সাহায্যে ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ গঠনের সম্পর্ক এবং শিলা লক্ষণের (lithology) প্রভাব সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা লক্ষ করা যায়। ভূবৈচিত্র্য সূচক মানচিত্রে এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের নদী বিন্যাসের আকৃতির তারতম্য অনুসারে জলনির্গম প্রণালীকে 11টি ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে এগুলি সম্বন্ধে আলোচনা। করা হল 

বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালী (Dendritic Drainage Pattern) 

=> জলনির্গম প্রণালীর এটি একটি উল্লেখযোগ্য ভাগ। এই ল্যাটিন শব্দ Dendron-এর অর্থ হল গাছ। এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী আর্দ্র জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলে গড়ে উঠতে দেখা যায়। অর্থাৎ আর্দ্র জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলে ডালপালাযুক্ত গাছের আকৃতি-বিশিষ্ট যে জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে তাকে বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালী বলে। নদী অববাহিকার শিলাস্তর অনুভূমিক হলে গঠনের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না বললে চলে। শিলাস্তরে গঠন যদি একই প্রকৃতির হয় অর্থাৎ গঠনে কোনো বৈষম্য না। থাকে, তাহলে সেই নদী অববাহিকায় প্রায় সর্বত্র জলনির্গম প্রণালীর উৎপত্তি হতে পারে। অর্থাৎ উপনদীর উৎপত্তি লক্ষ করা যায়। বৃহ্মৰূপী জলনির্গম প্রনালী 
                       পিকচার 1 বৃক্ষরুপি জলনির্গম প্রণালী


■ বৈশিষ্ট্য (Characteristics) : (i) এই ধরনের জলনির্গম প্রণালীতে প্রধান নদীর সঙ্গে উপনদীগুলি অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন দিক থেকে এসে মিলিত হয়। অর্থাৎ এই ধরনের নদী নকশায় উপনদীগুলি মূলত সূক্ষ্মকোণে প্রধান অনুগামী নদীর সঙ্গে এসে পড়ে। (ii) এই ধরনের নদী বিন্যাস এককভাবে কোনো নিয়ন্ত্রণ লক্ষ করা যায় না। (iii) ভূপৃষ্ঠের যে সমস্ত স্থানে একই ধরনের শিলার অবস্থান লক্ষ করা যায় কিংবা ভূমিভাগ একই ধরনের শিলা দ্বারা গঠিত সেখানে শিলার ক্ষয় প্রতিরোধ করার ক্ষমতা একই বলে সেই সমস্ত স্থানে এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী গড়ে উঠেছে। তাই ভারতের ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চল নিস্ (gneiss) শিলা দ্বারা গঠিত বলে এখানে বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালী গড়ে উঠেছে। (iv) পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলের জলবায়ু আর্দ্র প্রকৃতির সেই সমস্ত স্থানে এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে। (v) যে অঞ্চলে ভূমির ঢাল একটি নির্দিষ্ট দিকে থাকে সেখানে এই ধরনের নদী নকশা গড়ে ওঠে। (vi) প্রধান অনুগামী নদী এবং তার উপনদীগুলির মস্তকমুখী ক্ষয় করে থাকে বলে, প্রধান নদী সহ উপনদীগুলির দৈর্ঘ্য ক্রমশ বেড়ে যায়। (vii) প্রধান নদীর দুই দিকে যদি শিলার ক্ষয় প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আলাদা হয় তাহলে প্রধান নদীর দুপাশে উপনদীগুলির বিস্তার ভিন্ন প্রকৃতির হবে, অর্থাৎ একদিকে কম অন্যদিকে বেশি বিস্তার লক্ষ করা যাবে। (viii) এই ধরনের নদী উৎপত্তি ব্যবস্থায় প্রথম পর্যায়ে উপনদীর সংখ্যা কম থাকার ফলে নদী বিন্যাস উন্মুক্ত (open) থাকে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে উপনদী এবং তার শাখা-প্রশাখা বেড়ে যাওয়ার ফলে নদীবিন্যাস আবদ্ধ (closed) প্রকৃতির হয়। সেই সঙ্গে শাখাগুলির পর পরের মধ্যে অধিগ্রহণ করে পরিণত বিন্যাস গঠন করে। 

■ অভ্যন্তরীণ গঠনের সঙ্গে সম্পর্ক (Relation with Underlying Structure) :
কোনো অঞ্চলের নদী নকশা সেই অঞ্চলের ভূ-অভ্যস্তরে শিলাস্তরের গঠনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্ক যুক্ত। বৃক্ষরূপী জলনির্গমন ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ গঠনের সম্পর্ক রয়েছে। যেমন বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠার জন্য নীচের শিলাস্তরের গঠন প্রকৃতি এবং ভূমির প্রারম্ভিক ঢাল সমানভাবে দায়ী। অর্থাৎ ভূমিভাগ মৃদু ঢালযুক্ত। আবার যে সমস্ত অঞ্চলে শিলার ক্ষয় প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যথা আগ্নেয় ও পাললিক শিলাযুক্ত অঞ্চলে এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে সেই সঙ্গে ভূমির ঢাল একই দিকে থাকে বলে এই ধরনের নদী বিন্যাসে সাহায্য করে। ভূঅভ্যন্তরে শিলার সচ্ছিদ্রতা (porosity) ও অপ্রবেশ্যতা (permeability) এই ধরনের নদী বিন্যাসের দৈর্ঘ্য ও সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই ধরনের জলনির্গম প্রণালীর আয়তন নির্ভর করে ভূমিভাগের প্রকৃতি এবং ঢালের উপর। আবার বেশি ঢাল যুক্ত অঞ্চলে এই ধরনের নদী নকশায় প্রসস্থ কম হয় কিন্তু দৈর্ঘ্য বেশি হয়। অববাহিকায় বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের ফলে ছোটো ছোটো নালার সৃষ্টি হয়। 

জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী (Trellised Drainage Pattern) 



                   পিকচার 2 জাফরিরুপি জলনির্গম প্রণালী


প্রধান নদীর সঙ্গে পরবর্তী নদী ও বিপরা নদী মিলিত হয়ে জাফরির ন্যায় আকৃতি বিশিষ্ট যে নদী বিন্যাস গড়ে ওঠে তাকে জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী বলে। এই জলনির্গম প্রণালীতে প্রধান নদীগুলি পরস্পরের প্রায় সমান্তরালে প্রবাহিত হয় এবং সাধারণত সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত শৈলশিরাগুলিকে অতিক্রম করার সময় সমকোণে বেঁকে থাকে। এছাড়া মুখ্য উপনদীগুলি প্রধান নদীতে এবং গৌণ উপনদীগুলি মুখ্য উপনদীতে প্রায় সমকোণে মিলিত হয়। এই ধরনের নদী বিন্যাস সাধারণত একনত অথবা ভঙ্গিল ভূতাত্ত্বিক গঠনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, কারণ প্রায় প্রত্যেক নদীই শিলাস্তরের আয়াম কিংবা নতিকে অনুসরণ করে প্রবাহিত হয়। সাধারণত একনত কিংবা ভঙ্গিল ভূতাত্ত্বিক গঠনযুক্ত অঞ্চলে এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী গড়ে উঠলেও অনেক সময় সমান্তরাল চ্যুতি কিংবা সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত রৈখিক ভূমিরূপের দ্বারা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও কিছু স্থানীয় কারণের জন্যও একটি আদর্শ জাফরিরুপী নির্গম প্রণালীর সম্পূর্ণ অংশ দেখা না গেলেও কিছু অংশ লক্ষ করা যায়। সেই কারণগুলি হল—(a) ড্রামলিন কিংবা ড্রামলিনের মতো রৈখিক ও সমান্তরাল ভূমিরূপের প্রভাবে এই ধরনের বিন্যাসের সৃষ্টি হয়। (b) সমুদ্র উপকূলের দীর্ঘ সমান্তরাল বালিয়াড়ি কিংবা দুদু সমতল শিলাস্তরে জফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী লক্ষ করা যায়। (c) বহু সমান্তরাল চ্যুতির প্রভাবে এই ধরনের বিন্যাস গড়ে ওঠে। এছাড়াও (d) সমান্তরালভাবে প্রসারিত অসংখ্য দারণের প্রভাবে এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে। উপরিউক্ত কারণগুলির দ্বারা যে সমস্ত জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে সেগুলি হল—বাকযুক্ত জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী (Recoved Trellis Drainage Pattern)। পরিচালিত জাফরিরূপী (Directional Trellis Drainage Pattern) জলনির্গম প্রণালী, উপ জাফরিরুপী জল নির্গম প্রণালী (Sub-Trellis Drainage Pattern), দারণ নিয়ন্ত্রিত জাফরিরুপী প্রণালী (Joint Trellis Drainage Pattern) জাফরিৰূপী জলনির্গম ভারতের আরবর্তী পর্বতের পশ্চিম ঢালের শেষ অংশে জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী লক্ষ করা যায়। সাধারণত প্রচুর বৃষ্টিপাতযুক্ত মুলকাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসা ডালগুলি জাফরির উপর যেভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তার সঙ্গে এই জলনির্গম প্রণালীর ও ঘন চ্যুতিরেখা সম্পন্ন অঞ্চলে জাফরিরুপী জলনির্গম প্রণালী লক্ষ করা যায়। ব্রাক্ষাক্ষেত্রে দ্রাক্ষালতার সাদৃশ্য থাকায় একে Grapevine Drainages বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালেশিয়ান ভঙ্গিল পর্বতে কঠিন ও কোমল। শিলা পাশাপাশি অবস্থানের জন্য কিংবা ভারতের মধ্যপ্রদেশের বাঘেরখণ্ডের শোনা পাড় পাহাড়েও উপজাফরিরূপী ইলনির্গম প্রণালীও লক্ষ করা যায়।
■ বৈশিষ্ট্য (Characteristics) : এর বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ —(I) পরস্পরের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়। (ii) ফাটল বা দারণযুক্ত অঞ্চলে এই ধরনের নদীবিন্যাস লক্ষ করা যায়। (i) প্রধান নদীর সঙ্গে উপনদীগুলি সমকোণে বা অনেক ক্ষেত্রে সুক্ষ্মকোণে মিলিত হয়। (iv) কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে এই ধরনের নদীবিন্যাস লক্ষ করা যায়। 

■ অভ্যন্তরীণ গঠনের সঙ্গে সম্পর্ক (Relation with Underlying Structure): অভ্যন্তরীণ গঠনের সঙ্গে আয়তকার জলনির্গম প্রণালীর সম্পর্কে বলা যায় যে খুব ভালোভাবে গঠিত ও পরস্পর সমকোণে ছেদ করে এমন ফাটল বা দারণ ও চ্যুতি গঠিত শিলাস্তরে এই ধরনের নদী নকশা গড়ে ওঠে। তাই গ্রানাইট ও বেলেপাথরে খুব বেশি ফাটল থাকায় এই ধরনের কঠিন শিলার উপরে আয়তকার নদী নকশা গড়ে ওঠে। 

সমান্তরাল জলনির্গম প্রণালী (Parallel Drainage Pattern)



                picture 3 সমান্তরাল জলনির্গম প্রণালী

 এই ধরনের জলনির্গম প্রণালীতে প্রায় সম ব্যবধানে প্রবাহিত সমান্তরাল বা প্রায় সমান্তরাল নদী দেখা যায়। এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী প্রধানত অধিক ঢাল বিশিষ্ট অঞ্চলে কিংবা ভূ-গাঠনিক প্রভাবে যেখানে নদীগুলি নির্দিষ্ট দূরত্বে সমান্তরালে বা প্রায় সমান্তরাল গড়ে ওঠে। মালভূমির প্রান্তীয় খাড়াটালে অথবা শৈলশিলার অতি খাড়া ঢালে নদীগুলি নির্দিষ্ট ব্যবধান এবং সমান্তরালে প্রবাহিত হয়ে যে প্রাথমিক জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে তাকে সমান্তরাল জলনির্গম প্রণালী বলে। এই ধরনের জলনির্গম প্রণালীতে সারা বছর জল থাকে না, শুধুমাত্র আর্দ্র ঋতু ছাড়া। নীলগিরি পর্বতের পূর্ব ঢালে এবং শিবালিক পর্বতের দক্ষিণ ঢালে এই ধরনের নদী নকশা গড়ে উঠেছে। এই জলনির্গম প্রণালীর দুটি উল্লেখযোগ্য ভাগ হল। যথা- (a) উপসমান্তরাল জলনির্গম প্রণালী (sub-parallel drainage pattern) যা মাধ্যম ঢালযুক্ত অঞ্চলে দেখা যায়, (b) সহরৈখিক সমান্তরাল। জলনির্গম প্রণালী (co-linear parallel drainage pattern), যা সমান্তরাল রৈখিক বালিয়াড়ি সমান্তরাল শৈলশিরাসমূহের মধ্যে নদীগুলি পরস্পরের সমান্তরালে পরিণত হয়। সমান্তরাল জলনির্গম প্রণালী .

■ বৈশিষ্ট্য (Characteristics) : এই জলনির্গম প্রণালীর প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল – (i) বড়ো শিলাযুক্ত পার্বত্য অধঞ্চালে অত্যধিক বৃষ্টিপাতের ফলে গড়ে ওঠে। (i) নদীর গতিপথে বাঁক খুব কম লক্ষ করা যায় এই ধরনের নদী নকশায়। (ii) এই ধরনের নদী নকশায় উপনদীর সংখ্যা কম থাকে। (iv) সম ঢাল বিশিষ্ট উপকূল অঞ্চলে এই ধরনের নদীবিন্যাস দেখা যায় কিংবা উচ্চভূমি অঞ্চলে সমান্তরালে অনেকগুলি নদী প্রবাহিত হলে এই ধরনের নদী নকশা দেখা যায়। ভূমিরূপের খাড়া ঢালের প্রভাব ছাড়াও গঠনের প্রভাবে সমান্তরাল জলনির্গম প্রণালী সৃষ্টি হতে পারে। কোনো এলাকায় যদি সমান্তরালভাবে কয়েকটি চ্যুতির উৎপত্তি হয় এবং সেই দুর্বল চ্যুতি রেখা বরাবর কয়েকটি বড়ো নদী সমান্তরালভাবে প্রবাহিত হতে পারে কিংবা প্রায় সমান্তরালভাবে প্রবাহিত হতে পারে। 

■ ভূমির অভ্যন্তরীণ গঠনের সঙ্গে সম্পর্ক (Relation with Underlying Structure) : শিলার কাঠিন্য ও প্রকৃতি অপেক্ষা ভূমিভাগের ঢাল এই ধরনের নদী বিন্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক ক্ষেত্রে অধিক ঢাল বিশিষ্ট অঞ্চলে শিলা –কিংবা মাটির স্তরের গায়ে ছোটো ছোটো খাতে যে সমান্তরাল জলধারার প্রবাহ দেখা যায় তা সেই গঠনের ফলে হয়।

কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রণালী (Centripetal Drainage Pattern)
যে নদীবিন্যাসে নদীগুলি অবনমিত অঞ্চলের কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রণালী বলে। অর্থাৎ নদীগুলি পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে মধ্য ভাগের নীচু অংশের দিকে বিভিন্ন দিক থেকে এসে মিলিত হয়। এই ধরনের জননির্গম প্রণালী আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে গড়ে উঠতে দেখা যায়। মরু অঞ্চলে তীব্র বায়ু প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হলে পরিবহনের ফালে ভূমিভাগ যে অবনমিত হয়, সেই অবনমিত ভূমিভাগে কেন্দ্রমুখী নদী নকশা গড়ে উঠতে পারে। অথবা চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে সিঙ্কহোলের সৃষ্টি হলে এই ধরনের নদী নকশা গড়ে ওঠে। ভারতের দেবাদুন উপত্যকা এবং নেপালের কাঠমাণ্ডু উপত্যকায় এই ধরনের নদীনকশা লক্ষ করা যায়। 

■ বৈশিষ্ট্য (Characteristics) : এর বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ —(1) ভূমিভাগটির চারদিকে উচ্চভূমি অবস্থান করাবে। (ii) এইরূপ জলনির্গম প্রণালীর মধ্য অঞ্চলে ভূমিভাগ অবনমিত হবে। (ii) জলনির্গম প্রণালীগুলি বিভিন্ন দিক থেকে এসে মিলিত হবে। (iv) এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গম প্রণালীর বিপরীত অবস্থায় গড়ে উঠবে। 


                   পিকচার 4 কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রণালী

অভ্যন্তরীণ গঠনের সঙ্গে সম্পর্ক (Relation with Underlying Structure) : পাশাপাশি উচ্চভূমির অবস্থান এবং মাঝের অংশে নিম্নভূমির অবস্থান এই ধরনের বিন্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করে। অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে এই ধরনের নদী বিন্যাস লক্ষ করা যায়। আবার নিম্ন ভাজের ফলে সৃষ্ট ভূ-গাঠনিক অববাহিকা বসে যাওয়া তৃভাগ ক্যালভেরা জ্বালামুখ প্রভৃতি অঞ্চলে গড়ে উঠতে পারে। কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রণালী 

● কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গম প্রণালী (Radial Drainage Pattern) যে জলনির্গম প্রণালীগুলি দণ্ডের ন্যায় বা সরলরেখার মতো চক্রকারে কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে প্রবাহিত হয় তাকে কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গম প্রণালী বলে। সাধারণত গম্বুজ গঠনের ঊর্ধ্বভঙ্গের চারপাশের ঢাল বেয়ে ছোটো ছোটো নদী কেন্দ্রীয় উত্তরণ ভূমিরূপ থেকে বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়। এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী গম্বুজ আকৃতির পাহাড়, আগ্নেয় শঙ্কু, ক্ষয়জাত পাহাড়, মেগা-বিউট প্রভৃতি কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে নদীগুলি চক্রের ন্যায় বিভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত হয়। মৃত আগ্নেয়গিরির উপরও এই ধরনের নদীনকশা লক্ষ করা গেছে। রাঁচি মালভূমির 'প্যাট অঞ্চলে পরেশনাথ পাহাড়ের চারপাশে এ ধরনের জলনির্গম প্রণালী দেখা যায়। হাজারিবাগ মালভূমি, পাঞ্জেং পাহাড় ও দলমা পাহাড়ের চারিদিকে এই জলনির্গম ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। শ্রীলঙ্কার মতো ক্ষুদ্র দেশের মধ্যভাগে পার্বত্য অঞ্চলের অবস্থানের জন্য এই ধরনের নদী বিন্যাস গড়ে উঠেছে। কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গম প্রণালী 

■ বৈশিষ্ট্য (Characteristics): এই ধরনের নদী নকশার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল—(i) শঙ্কু আকৃতি বা গম্বুজাকৃতি অবশিষ্ট পাহাড়, মৃত আগ্নেয়গিরি, ব্যাথোলিথ, লাকোলিন, মেগা ও বিউট, বিচ্ছিন্ন উচ্চভূমি অঞ্চল প্রভৃতি কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠার আদর্শ অঞ্চল। (ii) এইরূপ জলনির্গম প্রণালীতে উপনদীগুলি প্রধান নদীতে সূক্ষ্মকোণে মিলিত হয়। (iii) ভূমিভাগের প্রারম্ভিক ঢাল অনুসারে নদীগুলি প্রবাহিত হয় বলে এদের অনুগামী নদী বলে। (iv) এরুপ জলনির্গম প্রণালীতে নদীগুলি উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে চক্রের দণ্ডের মতো বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়। (v) উচ্চ ভূমিভাগ থেকে নদীগুলি প্রবাহিত হয় বলে, নদীর জলের স্রোত বেগ বেশি থাকে। 




                   পিকচার 5 কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গম প্রণালী


■ অভ্যন্তরীণ গঠনের সঙ্গে সম্পর্ক (Relation with Underlying Structure) : গম্বুজ গঠনে শিলাস্তরের নতি বেশি থাকে বলে, এইসব কেন্দ্রবিমুখ নদীর গতি বেশি তাই নিম্ন ক্ষয় দ্রুত হয়। ফলে শিলাস্তরে ব্যবচ্ছিন্নতার সৃষ্টি হতে পারে। অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত অঞ্চল থেকে নদীগুলি উৎপন্ন হয় বলে নদী গ্রামের সৃষ্টি হয় না। অববাহিকার উচ্চ অখল থেকে নদীগুলি উৎপত্তি লাভ করে বলে উচ্চভূমি দ্বারা সেগুলি নিয়ন্ত্রিত হয়।। 

● বিনুনীরূপী জলনির্গম প্রণালী (Braided Drainage Pattern) যে নদী বিন্যাসে শাখা নদীগুলি বিভক্ত হয়ে আবার মিলিত হয়ে পুনরায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যে ধরনের নদী বিন্যাস সৃষ্টি করে। তার আকৃতি দেখতে অনেকটা বিনুনীর মতো হয় বলে তাকে বিনুনীরূপী জলনির্গম প্রণালী বলে। এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী প্রধানত নদীর নিম্নপ্রবাহে বা সমভূমি প্রবাহে কিংবা বদ্বীপ অঞ্চলে গড়ে ওঠে। নদী যখন উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে প্রয়কার্য করে সমভূমি অঞ্চলে এসে পড়ে, তখন তার গতিবেগ কমে যায়, সেই সঙ্গে বোঝার পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন সেই বাহিত পদার্থ নদী তার গর্ভে জমা করে স্বাভাবিক বাঁধ তৈরি করে। এই বাঁধ নদীকে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত করে। পরবর্তী সময়ে এই শাখা নদীগুলি কিছুটা পথ অতিক্রম করে যখন আবার বাধা পায় তখন পুনরায় বিভক্ত হয়ে যায়। এই ধরনের নদী বিন্যাসে যখন শাখা নদীগুলি পরস্পরের সাথে মিলিত হয়, তখন তাদের মিলিত সস্থানে তাদের বেয়ে আনা পলি, বালি, কাদা প্রভৃতি জমা করে দ্বীপের ন্যায় ভূমিরূপ গড়ে তোলে। অর্থাৎ নদী তার নিম্নপ্রবাহে যখন তার বোঝাগুলি বহন করতে পারে না, তখন এই ধরনের নদী নকশা গড়ে উঠে। এছাড়াও নদী যখন সমুদ্রে মিলিত হয় অর্থাৎ মোহনার কাছে যে চড়া সৃষ্টি হয় ; এই চড়ায় এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে। তিস্তা, গঙ্গা, মহানন্দা প্রভৃতি নদীতে এই ধরনের জলনির্গম বিন্যাস গড়ে ওঠে। 

■ বৈশিষ্ট্য (Cheracteristics) : এই ধরনের জলনির্গম প্রণালীর বৈশিষ্ট্য হল—(i) এই বিন্যাস নদী নিম্নপ্রবাহ বা সমভূমি প্রবাহে লক্ষ করা যায়। (ii) সাধারণত সমভূমি প্রবাহতে যেখানে দ্বীপ গড়ে ওঠে সেখানে এই প্রণালী গড়ে ওঠে। (ii) এই ধরনের বিন্যাসের নদীতে নদী গতিবেগ খুব কম থাকে। (iv) নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে নদী খাত ভরাট হয়ে গেলে অগভীর হয়ে পড়ায় নদী বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়। 

অঙ্গুরীয় জলনির্গম প্রণালী (Annular Drainage Pattern)
সাধারণত ক্ষয়প্রাপ্ত গম্বুজ জাতীয় উচ্চভূমিকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে বলয় আকারে ঘিরে এই ধরনের বিন্যাস লক্ষ করা যায়। গম্বুজাকৃতি পাহাড়ে চক্রাকারে কয়েকটি অসমান ধাপের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীসমূহ যে আংটির মতো নকশা সৃষ্টি করে, তাকে অঙ্গুরীয় জলনির্গণ প্রণালী বলে। সাধারণত গম্বুজ গঠন ঊর্ধ্বভঙ্গ হওয়ার ফলে এর কেন্দ্রে প্রাচীন কঠিন শিলা লক্ষ করা যায়, কিন্তু এই কঠিন শিলাস্তরে বাইরে কোমল, দুর্বল এবং কম ক্ষয় প্রতিরোধী হয়। ফলে বড়ো বড়ো নদীগুলি গম্বুজের ঢাল বরাবর উপর থেকে নীচের দিকে প্রবাহিত হয়। পরবর্তী সময়ে কোমল ও দুর্বল শিলার উপর পরবর্তী উপনদী সৃষ্টি হয়। নদীগুলি ওইসব শিলাস্তরকে অবলম্বন করে ব্যবচ্ছিন্ন গম্বুজের চারপাশে আংটির মতো (ringlike) আকারে প্রবাহিত হয়। এই গম্বুজ গঠনে কেন্দ্র বিমুখ জলনির্গম প্রণালীও গড়ে উঠতে দেখা যায়। কিন্তু গম্বুজ গঠন ছাড়া অঙ্গুরীয় জলনির্গম প্রণালী লক্ষ করা যাবে না। বিহারের সোনপেট গম্বুজের চারদিকে এবং ইংল্যান্ডের উইলড্ অঞ্চলে এই ধরনের নদী নকশা দেখতে পাওয়া যায়। 

■বৈশিষ্ট্য (Characteristics) : বলয়াকার জলনির্গম প্রণালীর বৈশিষ্ট্যগুলি হল—(1) এই ধরনের নদী বিন্যাস বলয়ের মতো দেখতে হয়। (i) গম্বুজ গঠন যুক্ত অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলান্তরের অবস্থান থাকলে এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে। (im) এই ধরনের নদী বিন্যাসে শাখানদীগুলি চক্রাকারে প্রবাহিত হয়ে প্রধান নদীর সঙ্গে প্রায় সমকোণে মিলিত হয়। (iv) গম্বুজ আকৃতি পাহাড়ে প্রধান নদীগুলি চারদিকে ঘুরে ঘুরে প্রবাহিত হয়। 

• পিনেট জলনির্গম প্রণালী (Pinnate Drainage Paltern) 
এই ধরনের জলনির্গম প্রণালীর একটি পরিবর্তিত রূপ হল পিনেট জলনির্গম প্রণালী। অনেকগুলি ছোটো ছোটো উপনদীগুলি। নকশা গড়ে ওঠে তাকে পিনেট জলনির্গম প্রণালী বলে। পিনেট জলনির্গম প্রণালী দুটি খাড়া শৈলশিরার মাঝখানে যখন প্রধান নদীর সঙ্গে সূক্ষ্মকোণে মিলিত হয়ে পাখির পালকের মতো কিংবা নিমপাতার মতো আকৃতি বিশিষ্ট যে নদী অবস্থিত সংকীর্ণ উপত্যকায় সৃষ্টি হয়। সাধারণত পাশের দুটি খাড়াই শৈলশিরা থেকে আসা উপনদীগুলি সূক্ষ্মকোণে উপত্যকার প্রধান নদীর সাথে যুক্ত হয়। অনুভূমিকভাবে সজ্জিত একধরনের কম ক্ষ্যাপ্রতিরোধী শিলায় কিংবা কদম জাতীয় পলি স্তর দ্বারা গঠিত অঞ্চলে এই ধরনের ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। আবার অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলা দিয়ে গঠিত খাড়াই ঢালযুক্ত সংকীর্ণ উপত্যকায় প্রধান নদী এবং পনদী ও উপনদীগুলির গতি পথকে নিয়ন্ত্রণ করে। শোন ও নর্মদা নদীর উচ্চ উপত্যকা অঞ্চলে এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী লক্ষ করা যায়। 

■ বৈশিষ্ট্য (Characteristics): এই ধরনের জলনির্গম প্রণালীর বৈশিষ্ট্যগুলি হল—(1) উপনদীগুলির দৈর্ঘ্যা খুব ছোটো হয় এবং সেগুলি প্রধান নদীতে এসে পতিত হয়। (ii) এই ধরনের জলনির্গম প্রণালীতে খুব খাড়াই ঢালবিশিষ্ট ও = প্রধান সংকীর্ণ নদী উপত্যকা লক্ষ করা যায়। (iii) প্রধান নদীর সঙ্গে উপনদীগুলি সূক্ষ্ম কোণে মিলিত হয়। (iv) নদীগুলির আকৃতি গাছের পাতার শিরা বা উপশিরার মতো দেখতে হয়। পিনেট জলনির্গম প্রণী 


                     পিকচার 6 পিনেট জলনির্গম প্রণালী


● হেরিং বোন জলনির্গম প্রণালী (Herringbone Drainage Pattern) এই ধরনের নদী নকশার আকৃতি হেরিং মাছের কাঁটার মতো হয়। কোনো অঞ্চলের আয়াম স্খলন চ্যুতি বরাবর দু'পাশের পর্যায়ক্রমিকভাবে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর সরে গেলে এই ধরনের জলনির্গম প্রণালী গড়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে যদি চ্যুতি বরাবর প্রধান নদী প্রবাহিত হয় তাহলে তার দু'দিকের সরে যাওয়া কোমল শিলা ক্ষেত্রকে অনুসরণ করে উপনদীগুলি সৃষ্টি হবে। এই ধরনের জল নির্গম প্রণালী পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত দুটি পাশাপাশি খাড়া ঢালযুক্ত সমাপ্তরাল শৈলশ্রেণির মাঝে বিস্তৃত উপত্যকায় গড়ে ওঠে। যে জলনির্গম প্রণালীতে মানুষের বুকের পাঁজরের মতো আকৃতিবিশিষ্ট হয়, তাকে হেরিৎবোন জলনির্গম প্রণালী বলে। এক্ষেত্রে প্রধান নদী সরলরেখায় প্রবাহিত হয় এবং উপনদীগুলিও প্রায় সরলরেখার ন্যায় প্রধান নদীতে এসে পড়ে। তবে যেটা লক্ষ করা যায় সেটা হল—দুই পাশের উপনদীগুলি মুখোমুখি এসে প্রধান নদীর সঙ্গে এসে পড়ে না। উল্টো মুখে প্রবাহিত দুই পাড়ের উপনদীগুলির সরল প্রবাহ পথ, তাদের একই রেখা বরাবর মুখোমুখি প্রবাহিত না হওয়া সেই সঙ্গে প্রধান নদীর সরল প্রবাহ পথ থেকে এই জল নির্গম প্রণালীর ওপর গঠনের নিয়ন্ত্রণ বোঝা যায়। 

■ বৈশিষ্ট্য (Characteristics): (i) প্রধান নদী গভীর সংকীর্ণ উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবে। (ii) উপত্যকায় দুই পাশের খাড়া ঢাল বরাবর অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপনদী প্রধান নদীতে এসে মিলিত হবে। (iii) প্রধান নদীর সঙ্গে উপনদীগুলি প্রায় সমকোণে এসে পতিত হবে। (IV) উপনদীগুলিও মূল নদীর মতো প্রায় সরলরেখায় প্রবাহিত হয়।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01