ভূতাত্ত্বিক সময়ের মানদণ্ড অনুসারে ভারতের জীববৈচিত্র্য Biodiversity of India according to Geological Time Scales
পৃথিবীর বিভিন্ন বয়সের জীববৈচিত্র্যের ধরন ছিল ভিন্ন ভিন্ন । আবার সব জায়গায় সব জীবেরও সন্ধান পাওয়া যায়নি । ভারতের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয় । ভারতীয় উপমহাদেশের উৎপত্তি ও গঠন এবং স্থানান্তর যুগে যুগে যেমনভাবে হয়েছে সেভাবে জীববৈচিত্র্যও তৈরি হয়েছে । শিলাস্তরে সজ্জিত বিভিন্ন ধরনের ফসিল অনুসন্ধান ও তার গঠন অধ্যয়ন করে এ সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানা যায় । এই তথ্য আলোচনা করলে দেখতে পাওয়া যায় সমস্ত যুগে বা উপযুগে ভারতে উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের বিস্তার ছিল না । কোনো কোনো বিশেষ যুগে অধিক মাত্রায় ছিল ।
★প্যালিওজোয়িক যুগ ( Paleozoic Era )
1. প্যালিওজোয়িক যুগে ভারতের বেশ কয়েকটি অংশে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবাশ্ম পাওয়া গেছে । ক্যামব্রিয়ান , অর্ডোভিসিয়ান ও সিলুরিয়ান উপযুগের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে পশ্চিম পাঞ্জাবের লবণ পর্বত অঞ্চলে ( বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ) ।
2 . হিমাচল প্রদেশের স্পিটি নদীর উপত্যকা অপর উল্লেখযোগ্য জীবাশ্ম অঞ্চল । এই অংশের বিভিন্ন যুগে প্রচুর জাবায় পাওয়া গেছে । মনে করা হয় এই অনলটি টেথিস মহীপাতের অন্তর্ভুক্ত
3. তৃতীয় উল্লেখযোগ্য অঞ্চলটি হল কাশ্মীর । এটিও টেথিস মহীখাতের অন্তর্ভুক্ত । এই অঞ্চলে অর্ডোভিসিয়ান , সিধুরিয়ান ও জেভোনিয়ান উপযুগের জীবাশ্ম ( fossil ) পাওয়া গেছে ।
4. ভারতের উত্তর হিমালয় অঞ্চলে কার্বনিফেরাস ও পার্সিয়ান উপযুগে সামুদ্রিক অবক্ষেপ পাওয়া গেছে ।
5. উপদ্বীনীয় ভারতীয় অংশে অবশ্য প্যালিওজোয়িক যুগের তেমন জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া যায়নি । এই আশে কেবল পার্সিয়ান উপযুগের অবক্ষেপ পাওয়া গেছে , তবে এই অবক্ষেপ সমুদ্রের ন্যয় , নদীজাতীয় ।
★মেসোজোয়িক যুগ ( Mesozoic Era )
1. ভারতের মেসোজোধিক উপযুগ বেশ বৈচিত্র্যময় । এই যুগে ভারতের প্রাচীনতম অংশ অর্থাৎ মধ্যভারত তৈরি হয় ।। এই অংশের বিবর্তন ও জীববৈচিত্রা উভয়ই বৈচিত্র্যময় ।
2. ভারতবর্ষের স্থলভাগ ও ভাগ হি সম্পূর্ণ আলাদা । হিমালয় পর্বতের কোনো চিহ্ন তখন ছিল না । দক্ষিণ ভারত ছিল গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশ বিশেষ । এর মাঝে ছিল বিশাল টেথিস মহীখাত । এই সময় ছিল না আরবসাগর বা বঙ্গোপসাগর ।
3. ক্রিটেসিয়াস উপযুগে দক্ষিণ ভারতের উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল আমেয়োচ্ছ্বাস । বিহারের সাঁওতাল পরগনা বা রাজমহল অদল এবং দক্ষিণ ভারতের বহু জায়গায় এই যুগের বিভিন্ন সময়ে অগ্ন্যুৎপাত হতে দেখা যায় । অগ্ন্যুৎপাতের 1691 ডেকানট্র্যাপের ( deccan trap ) সৃষ্টি হয়
4. ক্রিটেসিয়াস উপযুগের শেষ দিকে টেথিস সাগরের সংকোচন ঘটে এবং হিমালয় পর্বতের উত্থানের সূচনা হয় । এই সময় ভারতীয় উপমহাদেশে সপুষ্পক উদ্ভিদের আবির্ভাব ও দ্রুত ক্রমবিকাশ হয় ।
5. দক্ষিণ ভারতের মধ্যপ্রদেশের বরাকর , ওড়িশার তালচের এবং পশ্চিমবঙ্গোর রানিগঞ্জ অঞ্চলে মসোপ্টেরিস ( glossopteris ) উদ্ভিদের আধিপত্য লক্ষ করা যায় ।
6. মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারী ও পশ্চিমবাংলার পাশ্যেৎ অঞ্চলে ডাইক্লইডিয়ম ( dicroidium ) নামে একধরনের ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে । নামে ফার্ন ও অাবা উদ্ভিদের সমাবেশ লক্ষ করা যায় ।
7. বিহারের রাজমহল , মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর , এবং পশ্চিমবাংলার দুবরাজপুর অঞ্চলে টাইলোফাইলাম ( ptylophyllum ) নামে ফার্ন ও ব্যক্তজীবী উদ্ভিদের সমাবেশ লক্ষ্য করা যায়।
৪. কেবল উদ্ভিদ নয় সম্প্রতি এক ধরনের প্রাণীর জীবাশ্ম পাওয়া গেছে ভারতের সাতপুরা - গন্ডোয়ানা বেসিন অঞ্চলে । শৃঙ্গাসাউরস ( Shringasaurus ) নামে একপ্রকার সরীসৃপের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে এই অঞ্চলে । যাদের উচ্চতা ছিল প্রায় 4 মিটার লম্বা । এরা ছিল সম্পূর্ণ তৃণভোজী ।
★সেনোজোয়িক যুগ ( Cenozoic Era )
1. সেনোজোয়িক যুগে ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যের পরিবর্তন লক্ষ করা যায় ।
2. পৃথিবীর অন্যান্য অংশের মতো এখানেও এই যুগে স্তন্যপায়ী মেরুদণ্ডী প্রাণীদের আধিপত্য লক্ষ করা যায় । মনে করা যায় হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে স্তন্যপায়ীদের বিস্তার ছিল সর্বাধিক ।
3. স্তন্যপায়ী বিবর্তনের শেষ দিকে প্লাইস্টোসিন উপযুগে মানুষের আবির্ভাব ঘটে । পৃথিবীর বহু দেশে মানুষের জীবাশ্ম পাওয়া গেলেও ভারতবর্ষে কিন্তু এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি । কিন্তু ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রস্তর নির্মিত অস্ত্র - শস্ত্র পাওয়া গেছে যা তখনকার দিনের মানুষ ব্যবহার করত বলে মনে করা হয় ।
4. সেনোজোয়িক যুগে ভারতে গুপ্তবীজী উদ্ভিদের বিস্তার ঘটে । দাক্ষিণাত্য মালভূমির লাভা অঞ্চলের স্থানে স্থানে পাললিক সঞ্চয়ের মধ্যে পাম জাতীয় গুপ্তবীজী উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে ।
5. সেনোজোয়িক যুগের শেষ দিকে কোয়াটারনারি উপযুগে নর্মদা পলিমাটি স্তর কিংবা গোদাবরী পলিমাটি স্তরে হাতি , গণ্ডার প্রভৃতি স্তন্যপায়ী প্রাণীর জীবাশ্ম পাওয়া গেছে ।
6. প্লাইস্টোসিন উপযুগের প্রথমদিকে ভারতে হিমযুগের আবির্ভাব ঘটে । ফলে শিবালিক অঞ্চলে অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণী ধ্বংস হয় ।