দক্ষিণি দোলন(Southern Oscillation)
ক্রান্তীয় অঞ্চলে সমুদ্র স্রোত এবং বায়ুমন্ডলের নিম্নস্তরের বায়ুপ্রবাহের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বর্তমানে স্যাটেলাইট ইমাজারি (Satelite imagery) এবং আরো অন্যান্য গবেষণায় ক্রান্তীয় অঞ্চলে নানাবিধ বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনাবলি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। এই ঘটনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এল-নিনো (EI-Nino) এবং দক্ষিণি দোলন (South-ern Oscillation) এই দুটি ঘটনাকে একত্রে বলা হয় এনসো (ENSO) এক্ষেত্রে EN হল এল-নিনো এবং SOI হল দক্ষিণি দোলন। 1920 সালে Sir Gilbert Walker দক্ষিণি দোলন (Southern Oscillation) শব্দটি ব্যবহার করেন।
দক্ষিণি দোলন (Southern Oscillation): দক্ষিণ গোলার্ধে বিভিন্ন স্থানে খরা, বন্যা, ঝড়-ঝঞ্ঝা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের জলবায়ুগত দুর্যোগ সৃষ্টিতে ENSO ঘটনাবলির প্রভাব অপরিসীম। ENSO ঘটনার প্রভাবে জলবায়ু স্বাভাবিকের তুলনায় কোথাও আর্দ্র আবার কোথাও শুষ্ক প্রকৃতির হয়। ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে সাধারণত উদ্বুতা ও বায়ুচাপের বৈপরীত্য লক্ষ করা যায়। এই দুই অঞ্চলে উন্নতার হ্রাস বৃদ্ধি জনিত কারণে বায়ুচাপের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে। বায়ুচাপের অস্বাভাবিক পরিবর্তন হলে সমুদ্র জলের স্বাভাবিক সঞ্চালনও ব্যাহত হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে বায়ুচাপের এই ওঠানামাকে দক্ষিণি দোলন বলা হয়। বায়ুচাপের এই অস্বাভাবিক ওঠানামাকে ব্যাখ্যা করতে বিজ্ঞানীরা এক প্রকার সূচক (Index) ব্যবহার করে থাকেন। এই সূচকটি দক্ষিণি দোলন সূচক বা Southern Oscillation Index নামে পরিচিত। একে সংক্ষেপে SOI বলা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি নির্দিষ্ট অংশে বায়ুচাপের পরিমাণের উপর নির্ভর করে এই সূচক তৈরি করা হয়। এই দুটি স্থানের একটি হল তাহিতি দ্বীপ এবং অন্যটি হল অস্ট্রেলিয়ার গোট ডারউইন শহর।
SOI-এর সঙ্গে El Nino ও La Lina-এর সম্পর্ক (Relation between SOI, and El Nino/La Lina): অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া দপ্তর (Australian Bureau of Meteorology) SOI, নির্ণয়ে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির কথা বলেন। এক্ষেত্রে গাণিতিক সূত্রটি হল:
SOI=10 Pdift-Pdiffav/
SD (Pdiff)
এখানে, Pdiff হল কোনো মাসের তাহিতি অঞ্চলের গড় সামুদ্রিক চাপ এবং ওই মাসে ডারউইন শহরের গড় সামুদ্রিক চাপের পার্থক্য।
Pdiffav = প্রতিটি দিনের Pdiff মানগুলির মাসিক গড়।
SD (Pdiff) = ঐ মাসের Pdiff মানগুলির প্রমাণ বিচ্যুতি (Standard Deviation)।
10 দিয়ে গুণ করার অর্থ হল মানগুলি পূর্ণ সংখ্যায় প্রকাশ করা। সাধারণত ১০। মানগুলি35 থেকে+35-এর মধ্যে থাকে। SOI-এর মান যখন বেশি হয় তখন বায়ুচাপের পার্থক্য অনেক বেশি হয়, তাই তখন আয়ন বায়ুর চেয়েও শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ এই সময়ে লা লিনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু SOI-এর মান যখন কম হয় তখন বায়ুচাপের পার্থক্য অনেক কম হয়, ফলে আয়ন বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে, এই সময় তাই এল-নিনো অবস্থার সৃষ্টি হয়। ENSO পরিস্থিতি সম্পূর্ণ হতে হলে এল-নিনো ও লা লিনার পর্যায়ক্রমিক তথ্য প্রয়োজন। অন্যভাবে বলা যায় এল-নিনোর পক্ষে লা লিনা আসে, আবার লা লিনায় পড়ে এল-নিনো আসে। SOI ধনাত্মক হলে অর্থাৎ যে বছর SOI Positive মান দেয় সে বছর পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে উচ্চচাপ এবং ভারত মহাসাগরে নিম্নচাপ লক্ষ করা যায়। ফলে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে বৃষ্টিপাত কমে যায় এবং ভারত মহাসাগরের মৌসুমি বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়।
আবার SOI-এর মান ধনাত্মক হলে ভারত মহাসাগরে উচ্চচাপ এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় ফলে ভারত মহাসাগরে মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে বৃষ্টিপাত কমিয়ে দেয় আর পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়।