welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

মাটি সৃষ্টির প্রত্যক্ষ উপাদান(Active Factors of Soil Formation)

মাটি সৃষ্টির প্রত্যক্ষ উপাদান(Active Factors of Soil Formation)


জলবায়ু (Climate)

মাটি গঠনের উপাদানগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল জলবায়ু। জলবায়ুর বিভিন্নতায় মাটির ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য (physical and chemical proporties)ও ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে (1) বৃষ্টিপাত এবং (ii) উয়তা মাটি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।

(i) বৃষ্টিপাত (Railfall): জলবায়ুর অন্যতম উপাদান হল বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিপাতের পরিমাণগত পার্থক্যের জন্য মাটির যৌত প্রক্রিয়ার পরিমাণ বিভিন্ন হয়। ফলে বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার মাটির সৃষ্টি হয়। যে সমস্ত অঞ্চলে জলবায়ু আর্দ্র ও নাতিশীতোয় প্রকৃতির সেখানে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার জন্য মাটির ধৌত প্রক্রিয়া (leaching) খুব বেশি হয়। ফলে মাটির উপরিস্তর থেকে সহজে দ্রবণীয় খনিজ পদার্থগুলি অপসারিত হয় এবং মাটির প্রকৃতি অম্লধর্মী হয়। আবার মেরু বা মরুপ্রায় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার জন্য ধৌত প্রক্রিয়া বেশি হয় না। ফলে মাটির উপরিস্তর থেকে দ্রবণীয় খনিজ পদার্থগুলি সহজে অপসারিত হয় না। কিন্তু ক্যালসিয়াম ধৌত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ স্তর থেকে অপসারিত হয়ে ৪ স্তরে জমা হয়।

(ii) উদ্ভুতা (Terperature): উয়তা বিভিন্নভাবে মাটির গুণাগুণকে প্রভাবিত করে। উন্নতার ওপর মাটির রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি (speed) নির্ভর করে। লক্ষ করা গেছে যে মাটির রাসায়নিক প্রক্রিয়ার গতি প্রতি 10° সেলসিয়াস উন্নতা বৃদ্ধিতে দ্বিগুণ হয়। বৃষ্টিপাত ও উদ্বুতার তারতম্যের জন্য বিভিন্ন জলবায়ুতে বিভিন্ন প্রকার আঞ্চলিক মাটির প্রাধান্য দেখা যায়। উদ্বু-আর্দ্র জলবায়ুতে অম্লধর্মী ল্যাটেরাইট মাটি, নাতিশীতোয় আর্দ্র জলবায়ুতে পডজল মাটি এবং উয়-আর্দ্র নাতিশীতোয় জলবায়ুতে চারনোজেম মাটি শুষ্ক মরু অঞ্চলে ক্ষারধর্মী লবণাক্ত বা ক্ষারকীয় মাটি সৃষ্টি হয়।

(iii) আর্দ্রতা (Humidity): মাটির সৃষ্টির সক্রিয় নিয়ন্ত্রকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জলবায়ু। এই জলবায়ুর উপাদানগুলির মধ্যে অন্যতম হল আর্দ্রতা। জলের সাহায্যে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় পদার্থের স্থানান্তর মাটির স্তর সৃষ্টিতে সাহায্য করে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে আর্দ্রতা বেশি বলে, সেখানে মাটির স্তর পুরু। কিন্তু উদ্বু মরু অঞ্চলে আর্দ্রতার পরিমাণ কম বলে মাটির স্তরবিন্যাস সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ থেকে নীচের দিকে 10-15 সেমির মধ্যে স্তর শেষ হয়ে যায়। আর্দ্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিলার আবহবিকারের পরিমাণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে আবহবিকার যথেষ্ট গভীরে পৌঁছায়। তাই উদ্বু-আর্দ্র নিরক্ষীয় অঞ্চলে মাটির গভীরতা বেশি। সেই সঙ্গে মাটিতে বিভিন্ন প্রকার কাদা কলয়ডের উৎপত্তি আর্দ্রতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার আর্দ্রতার সঙ্গে এলুভিয়েশন প্রক্রিয়া নিবিড় সম্পর্কযুক্ত। আর্দ্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এলুভিয়েশন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে pH মান ও ক্ষারক সম্পৃক্তি কমে যায়। আর্দ্রতা কমলে ব্যাকটেরিয়া, অ্যালগি ও বিশেষ করে ফাঙ্গির সংখ্যা ও সক্রিয়তা কমে যায়। মাটি গঠনে যে প্রাণীগুলি অংশগ্রহণ করে তাদের মধ্যে কেঁচো আর্দ্রতা পছন্দ করে কিন্তু উই কিংবা পিঁপড়ে আর্দ্রতা পছন্দ করে না। মাটির মধ্যে আর্দ্রতার চলাচলের মাধ্যমে, মাটির স্তরের অন্তর্গত বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ ও শিলাচূর্ণের ওঠানামা ঘটে বলে, একে মাটি বিজ্ঞানীরা পদার্থ ও বস্তুকণার চলাচলের মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

(iv) বায়ুপ্রবাহ (Wind): অনেক সময় মাটি অপসারণের ক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। মরু অঞ্চলে তীব্র বায়ুপ্রবাহের দ্বারা বালুকণা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়, এবং সেই অঞ্চলে মাটি গঠনে সাহায্য করে। একইভাবে উপকূলবর্তী অঞ্চলে এই ঘটনা ঘটতে লক্ষ করা যায়। চিনের হোয়াং হো নদী উপত্যকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বায়ু-প্রবাহের দ্বারা সেখানে লোয়েস মাটি গঠিত হয়েছে।

জীবজগৎ (Organism)

জলবায়ুর পরেই মাটির উদ্ভবের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক হল জীবজগৎ। জীবজগতের উপাদানগুলি হল যথা- (i) স্বাভাবিক উদ্ভিদ, (ii) জীবজন্তু ও জীবাণু।

i) স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Natural Vegatation): মাটি সৃষ্টির জন্য উদ্ভিদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বড়ো গাছগুলো তারে শিকড়ের চাপে শিলার মধ্যে ফাটলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং শিলা চূর্ণীভূত হয়। ফলে শিলা চূর্ণীকরণের দ্বারা মাটি। সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর মাটির জৈব পদার্থের বা হিউমাসের পরিমাণ এবং এর রাসায়নিক বিক্রিয়া বা pH নির্ভর করে। সরলবর্গীয় অরণ্য অঞ্চলের ফার, পাইন প্রভৃতি গাছে অম্লের পরিমাণ বেশি থাকায়, সেই সমস্ত গাছের দেহাবশেষ পচে অম্লধর্মী হিউমাস সৃষ্টি হয়। সেই কারণে নাতিশীতোয় তৃণভূমি অঞ্চলে অধিক হিউমাসযুক্ত উর্বর কালো রঙের মাটি বা চারনোজেম মাটি সৃষ্টি হয়।

(ii) জীবজন্তু ও জীবাণু (Animals and Micro Organism): মাটি গঠনে প্রাণীজগতের অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য।পিঁপড়ে, কেঁচো, ইঁদুর প্রভৃতি প্রাণীরা মাটিকে খুঁড়ে গর্ত করে দেয়, ফলে মাটির বিভিন্ন স্তরের উপাদানের মধ্যে মিশ্রণ ঘটে। যা মাটির গঠন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। মাটিতে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া (bacteria), ফাঙ্গি (fungi), অ্যাকটিনোমাইসিস (actinomyces), অ্যালগি (algae) ও প্রোটোজোয়া (protozoa) প্রভৃতি জীবাণু বা Soil Microbes মাটির গুণাগুণ নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। এই সমস্ত জীবাণু মাটিতে সংযুক্ত জৈব দেহাবশেষকে বিয়োজিত করে অপরিবর্তনীয় হিউমাস সৃষ্টি করে। কেঁচো, পিঁপড়ে, উই বাদ দিয়ে প্রেইরি কুকুর শিলাস্তরকে ছিদ্র করে, মাটিতে পরিণত করে। এছাড়াও কঠিন শিলাস্তর নরম করতে সাহায্য করে। এই সমস্ত প্রাণীর দেহাবশেষ পরবর্তী সময়ে হিউমাসে পরিণত হয়ে, মাটির উপরের স্তরে অবস্থান করে। আবার যে সব মাটিতে কেঁচো বেশি সংখ্যক থাকে সেই মাটি N ও Ca সমৃদ্ধ হয় এবং সেই মাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি হয়।

এছাড়া মাটিতে N₂ বাড়াতে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে জীবাণু। লতানো জাতীয় গাছের শিকড়ে অবস্থানরত ব্যাকটেরিয়া বায়ুর N₂ শোষণ করে এবং গাছের কোশে জমা করে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01