রেডিয়েশন পদ্ধতি (radiation method)
রেডিয়েশন পদ্ধতি (radiation method)
রেডিয়েশন পদ্ধতিতে প্লেন টেবিল জরিপ সম্পন্ন করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করিতে হবে-
ধাপ-1: জরিপ ক্ষেত্রটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করো ও বিভিন্ন বস্তু বা স্টেশন চিহ্নিত করো। ট্র্যাভার্সের জন্য স্টেশনগুলিকে A, B, C, D ইত্যাদি নামাঙ্কিত গ্রাউন্ড পিন দিয়ে চিহ্নিত করো। জরিপ ক্ষেত্রে মোটামুটি মাঝখানে একটি পর্যবেক্ষণ স্টেশন (ধরা যাক, P) চিহ্নিত করো যেখান থেকে মাঠের সব স্টেশন বা বস্তুকে সুস্পষ্টভাবে দেখা যায় এবং বস্তু বা স্টেশনের দূরত্ব ফিতা দিয়ে সহজেই পরিমাপ করা যায়।
ধাপ-2: তেপায়া (tripod) কে পর্যবেক্ষণ স্টেশনের স্বয়ও ওপর এমনভাবে স্থাপন করো যাতে এর মস্তক স্টেশনের ঠিক উপরে না থেকে সামান্য তফাতে থাকে। ঠিক উপরে থাকলে টেবিলে ওই বিন্দুকে কেন্দ্রস্থ করা যাবে না। তেপায়ার পায়াগুলি যেন সমান দূরে থাকে অর্থাৎ এরা যেন সমবাহু ত্রিভুজ গঠন করে। সমতল জমির ক্ষেত্রে এরূপ অবস্থায় টেবিল স্বাভাবিকভাবে লেভেল হয়ে যাবে। অসমতল ভূমিতে যে-কোনো একটি পায়াকে তির্যকভাবে অথবা radially সরালে লেভেলিং সহজ হয়। তেপায়ার উচ্চতা মোটামুটি কোমরের সমান হবে।
ধাপ-3: তোপায়ার উপর আঁকার বোর্ড বা টেবিলকে স্থাপন করো ও স্ক্রু দিয়ে আটকে দাও।
ধাপ-4: যে কোনো একটি পায়াকে তির্যক অথবা অরীয়ভাবে সরিয়ে টেবিলকে লেভেল করো। টেবিলের চারকোণে প্রান্তভাগের সমান্তরালে আড়াআড়ি ও লম্বালম্বিভাবে স্পিরিট লেভেল বসিয়ে লেভেল দেখে নাও।
ধাপ-5: পর্যবেক্ষণ বিন্দু টেবিলের কোন্ জায়গায় হতে পারে। আন্দাজ করে টেবিলের উপর আঁকার কাগজ রাখো যাতে কাগজের সবদিকে মোটামুটি সমান দৈর্ঘ্যের রেখা টানা যায়। এরপর বোর্ডপিন দিয়ে কাগজকে টেবিলের সঙ্গে আটকে দাও।
ধাপ-6:ওলন এবং-ফর্কের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ স্টেশনকে খন্বত টেবিলের উপর কেন্দ্রস্থ করো এবং অনুরূপ বিন্দুকে কাগজের উপর । নামে চিহ্নিত করো। P বিন্দুতে শক্ত করে একটি আলপিন গেঁথে দাও। তবে পিন না গেঁথেও জরিপ করা যায়।
ধাপ-7: ট্রাফ কম্পাসের সাহায্যে কাগজের একপাশে উত্তর মেরুরেখা (north line) টানো।
ধাপ-৪: অ্যালিডেডের fiducial প্রান্তকে আলতোভাবে পিনের গায়ে ঠেকিয়ে রেক্সিং রড বা বস্তুকে লক্ষ করে অ্যালিডেডকে ঘোরাতে থাকো যতক্ষণ না পর্যন্ত আই-ভেন ও অবজেক্ট ভেনের হর্স হেয়ারের মধ্যে উৎপন্ন দৃষ্টি রেখার (line of sight) সঙ্গে রেঞ্জিং রড বা বস্তু একই সরলরেখায় অবস্থান করে।
ধাপ-9: রেঞ্জিং রড বা বস্তুকে নিখুঁতভাবে দৃষ্টি রেখার সঙ্গেঙ্গ সমরেখ করার পর পর্যবেক্ষণ বিন্দু দ্ব থেকে সরলরেখা টানো (ডট ডট লাইন হইবে)। একে বস্তুর রশ্মি বলে। এভাবে প্রতিটি স্টেশনের জন্য রশ্মি টানো এবং যে রেখা যে বস্তু (গাছ, মন্দির, পাঁচিল ইত্যাদি) বা স্টেশন a, b, c ইত্যাদি নির্দেশ করে তা লেখো।
ধাপ-10 : পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রথেকে প্রতিটি বস্তু বা স্টেশনের দূরত্ব মাপো। একটি উপযুক্ত স্কেল কেটে নাও এবং রশ্মির অতিরিক্ত অংশ মুছে দাও। ট্র্যাভার্স হলে নকশায় বিন্দুগুলিকে পরপর সরলরেখায় যোগ করো।
ধাপ-11:পরিশেষে নকশার উপরে শিরোনাম, পাশে সূচক, নির্দেশিকা, রৈখিক স্কেল, উত্তর মেরুরেখা ইত্যাদি লিখবে ও আঁকবে।
প্রতিচ্ছেদন বা ত্রিভুজীকরণ পদ্ধতি (intersection or triangulations method)
এই পদ্ধতিতে দুটি স্টেশন (station) বা অবস্থান থেকে বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। যাতে দুটি স্থান থেকেই বস্তুসমূহ স্পষ্ট দেখা যায়। যন্ত্রাংশের স্থান পরিবর্তন করে এই জরিপ করা হয়। দুটি স্থান থেকে লক্ষ্যবস্তু দেখা যায়। যে দুটি স্টেশন বিন্দু নেওয়া হয় তাদের সংযোগকারী বাহুকে ভিত্তিবাহু (base line) বলে। এই পদ্ধতিতে ভিত্তিবাহুর প্রত্যক্ষ পরিমাপ নেওয়া হয়। প্রথম স্টেশনে প্রথমে সমতল টেবিল বসিয়ে লক্ষ্যবস্তুগলিকে দূরত্ব অনুযায়ী স্কেলে ফেলে সাদা কাগজে আঁকতে হয়। এরপর দ্বিতীয় স্টেশনে বসিয়ে অনুরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। ভিত্তিরেখা বরাবর লক্ষ্যবস্তুগুলি চিহ্নিত করা হয়। রে (ray) বা লাইনের মাধ্যমে স্কেল অনুযায়ী চিহ্নিত করা হয় ফলে দুটি স্টেশন থেকে 'রে' গুলি পরস্পরকে প্রতিচ্ছেদ করে (Fig. 7.57 দেখো)।
অনুপ্রস্থগমন বা ট্র্যাভার্সকরণ পদ্ধতি (traversing method)
দুটি নির্দিষ্ট স্টেশনের মধ্যবর্তী লক্ষ্যবস্তু গ্রহণের উদ্দেশ্যে ভিত্তিবাহু (base line) বরাবর প্লেন টেবিল স্থাপনে অসুবিধা থাকলে বা দূরবর্তী স্টেশন দুটি পরম্পর দেখা না গেলে সেখানে সুবিধামত জায়গায় প্লেন টেবিলটি বসিয়ে অনুপ্রস্থগমন বা ট্র্যাভার্সকরণ এর মাধ্যমে যে জরিপ করা হয় তাকে traversin বলে। এই পদ্ধতিতে অবশ্যই যাচাই রেখা (check line) ব্যবহার করা হয়। লক্ষ্যবস্তু গ্রহণের ক্ষেত্রে radiation, intersection যে কোনো প্রক্রিয়া ব্যবহার করা যায়।
পুনঃছেদন বা রিসেক্সন পদ্ধতি (resection method)
মানচিত্রে পূর্ব চিহ্নিত লক্ষ্যবস্তুর যদি মধ্যবর্তী কোনো বস্তু নিতে হয় তবে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এই জরিপের ক্ষেত্রে এমন জায়গায় প্লেন টেবিলটি বসান হয় যেখান থেকে সমস্ত লক্ষ্যবস্তু অধিক পরিমাণে ও সঠিকভাবে কোনোরূপ বাধা ছাড়া দেখা যায়। এই পদ্ধতিতে সবার প্রথমে radiation পদ্ধতি অনুযায়ী নীচের জায়গা বা অবস্থান নির্ণয় করতে হবে। কোনো জানা/জ্ঞাত বিন্দু থেকে অবস্থান পর্যন্ত ও অজানা বিন্দু পর্যন্ত রে (ray) বা রেখা টানতে হবে স্কেল অনুযায়ী। এটি ঠিক প্রতিছেদন পদ্ধতির (intersection method) বিপরীত। স্টেশনে টেবিলটি বসাবার পর দিক বিন্যাস ঠিকমতো করতে হয়। ড্রয়িং শীটে কোনো স্টেশন বিন্দু ও জরিপ ক্ষেত্রে অনুরূপ স্টেশন বিন্দুটি সংযোজন দৃষ্টিরেখা সমতল টেবিল অধিকৃত ড্রয়িং শীটের অভিষ্ট স্টেশনবিন্দুটি দিয়ে অতিক্রম করে। এই অবস্থাই হল রিসেশন পদ্ধতির মূল ভিত্তি। রিসেকশন পদ্ধতি তিন প্রকার। যথা-
(1)পশ্চারেখা পদ্ধতি (backray method): এটি অতি সহজ ও সরল পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে স্টেশনটি এমনভাবে নির্দিষ্ট হয় যাতে। তা থেকে দুটি পূর্ব নির্দিষ্ট স্টেশন দৃশ্যমান হয়। পূর্বে দুটি নির্দিষ্ট স্টেশন ও তার যে কোনো একটি থেকে সমতল টেবিল স্টেশন বিন্দুর দিকে অঙ্কিত একটি রেখাংশ ড্রয়িং শীটে দেখান হয়।
(2)দ্বি-বিন্দু সমস্যা (two point problem): এই পদ্ধতিতে প্লেন টেবিল বা সমতল টেবিল অধিকৃত বিন্দু থেকে অপর দুটি স্টেশন বিন্দু রেখা যায় তার অবস্থানও ড্রয়িং শীটে দেখান হয়।
(3)ত্রি-বিন্দু সমস্যা (three point problem): এই পদ্ধতিতে প্লেন টেবিল বা সমতল টেবিল অধিকৃত বিন্দু থেকে অপর তিনটি স্টেশন বিন্দু দেখা যায় তার অবস্থানও ড্রয়িং কাগজে দেখান হয়।