গ্রানাইট ব্যাসল্ট ও চুনাপাথর ভূমিরূপ(Landforms on Granite Basalt and Limestone)
ভূমিরূপ সৃষ্টির উপর শিলার প্রভাব(Influence of Lithology on Landforms)
ধারণা (Concept)
পৃথিবী জুড়ে বিরাজমান বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের দ্বারা বা, আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের দ্বারা বিস্তীর্ণ শিলাময় অংশের উপর ক্ষয় বা সঞ্চয়ের মধ্যে দিয়ে ভূভাগের যে আকৃতি বা রূপ প্রকাশিত হয়, তাকেই ভূমিরূপ (landforms) বলে। ভূমিরূপের ক্রমউত্থান বা অবনমনের জন্য যে সমস্ত নিয়ন্ত্রকগুলির কার্যকারিতা বা কার্যকরী গুণ দায়ী সেই সমস্ত নিয়ন্ত্রকগুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রক হল শিলার গঠন। শিলার গঠন ও ভূমিরূপের নিবিড় সম্পর্ক ভূমিরূপবিদ্যার এক প্রধান আলোচ্য বিষয়। পৃথিবীর সামগ্রিক ভূভাগ মূলত তিন প্রকার শিলার সমন্বয়ে গঠিত, যথা- (a) আগ্নেয়শিলা (igneous rocks), (b) পাললিক বা স্তরীভূত শিলা (sedimentary rocks) এবং, (c) রূপান্তরিত শিলা (metamorphic rock)। পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অংশে বিরাজমান উক্ত শিলাসমূহ ও তাদের গঠনের সহিত ওই অংশের ভূমিরূপসমূহের এক নিদারুণ সম্পর্ক বর্তমান। পৃথিবীর কিছু কিছু বিশেষ অঞ্চল (যেমন-আগ্নেয় শিলাময় অঞ্চল, চুনাপাথর গঠিত অঞ্চল)-এর ভূমিরূপের স্বাতন্ত্র্য ওই অঞ্চলের শিলার দান। ভূমিরূপবিদ্যায় শিলার গঠন ও ভূমিরূপ সৃষ্টির মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণে দুই ধরনের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা যায়। নীচে এই দৃষ্টিভঙ্গি দুটি আলোচনা করা হল-
1. ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি (Historical Approach): পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের শিলার গঠন ও ভূমিরূপের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনার প্রসঙ্গে অন্যতম দৃষ্টিভঙ্গি হল ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রকার দৃষ্টিভঙ্গিতে মনে করা হয় যে সমগ্র ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় ভূ-গাঠনিক পরিবর্তন, সমুদ্রতলের পরিবর্তন বা, জলবায়ুর পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে। সামগ্রিক ভূমিরূপের এই বিবর্তন হয় ধীর ও ক্রমান্বয় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে, এই প্রকার দৃষ্টিভঙ্গিকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি বলা হয়। ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির ধারণাটি মূলত পদ্ধতিগত ভূমিরূপবিদ্যা (process geomorphology) ধারাটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। ভূমিরূপ বিজ্ঞানী উইলিয়াম মরিস ডেভিসের (W. M. Davis) মতে, "ভূমিরূপ হল শিলাগঠন, ভূভাগ পরিবর্তন বা বিবর্তনকারী শক্তি ও ক্ষয়ের পর্যায় যা সময়ের সামগ্রিক ফলাফল" (landform is a function of structure, process and stage)। এই প্রকার দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক অর্থে, শিলার গঠন বলতে শিলার সমন্বয় এবং শিলার গুণাবলিকে বর্ণনা করা হয়েছে।
2. ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ামূলক দৃষ্টিভঙ্গি (Functional Approach): পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের শিলাসমূহের গঠন ও ভূমিরূপের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণে থাকা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি হল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ামূলক দৃষ্টিভঙ্গি। যে প্রকার দৃষ্টিভঙ্গিতে মনে করা হয় যে সমগ্র ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় ভূভাগ ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এই প্রকার দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম প্রবস্তা ছিলেন জে টি. হ্যাক (1. T. Hack)। হ্যাকের মতে, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বা অঞ্চলের ভূমিরূপের পার্থক্য মূলত ওই সমস্ত অংশ বা অঞ্চলের শিলার কাঠিন্যতার তারতম্যের জন্য ঘটে থাকে। ভূমিরূপবিদ্যার মৌলিক ধারণার আলোচনা করতে গিয়ে উইলিয়াম ডি. ধনবারি (W. M. Thornbury, 1969) বলেছিলেন যে. "ভূমিরূপের বিবর্তনে ভূতাত্ত্বিক গঠনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে এবং এই প্রকার গঠন ভূপৃষ্ঠের উপরের গঠনের উপর প্রতিফলিত হয়" (Geologic structure is a dominant controlling factor in the evolution of landforms and is reflected in them).