ভূমিরূপ পরিলেখ-এর গঠন ও ব্যাখ্যা(construction and interpretation of relief profiles)
ভূমিকা (introduction):
ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলিকে প্রথমে গাণিতিক বিশ্লেষণ করে জ্যামিতিক পদ্ধতিতে তার চিত্র অঙ্কন করাই হল হুরূপমিতি (morphometry)। যেমন-
পরিলেখ
বিমিশ্র পরিলেখ
অধ্যারোপিত পরিলেখ
ব্যবচ্ছেদের সূচক
নদীর ক্রমবিন্যাস প্রভৃতি।
সারিবদ্ধ পরিলেখ
অভিক্ষিপ্ত পরিলেখ
আপেক্ষিক উচ্চতা
নদীর ঘনত্ব
সংজ্ঞা (definition):
① সমোন্নতি রেখা মানচিত্রে একটি সরলরেখা বরাবর উল্লম্ব ছেদনের ফলে ওই রেখা বরাবর ভূ-পৃষ্ঠের দৈর্ঘ্য ও উচ্চতাযুক্ত দ্বিমাত্রিক চিত্রকে স্থানটির পরিলেখ বা পার্শ্বচিত্র (profile) বলে।
② ভূমির উচ্চতা ও ঢাল বোঝানোর জন্য সমোন্নতি রেখার ওপর প্রস্থচ্ছেদ অঙ্কন করে সমোন্নতি রেখার মান ও অবস্থান দেখিয়ে যে চিত্র অঙ্কন করা হয় তাকে পার্শ্বচিত্র (profile) বলে।
ধরন (pattern):
পরিলেখ-এর ধরন (pattern) চার রকমের যথা-
সারিবদ্ধ পরিলেখ বা অনুক্রমিক (serial of profile)
অধ্যারোপিত পরিলেখ (superimposed profile)
অভিক্ষিপ্ত পরিলেখ (projected profile)
বিমিশ্র পরিলেখ বা যৌগিক বা আকাশ রেখা পরিলেখ (composite profile or skyline profile)
সমোন্নতি রেখার সাহায্যে পরিলেখ গঠন বা অঙ্কন পদ্ধতি (method of profile construction from contour line)
নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে পরিলেখ অঙ্কন করা হয় যথা-
Step-পরিলেখ অঙ্কন করতে হলে টোপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্রের যে অংশের পরিলেখ অঙ্কন করতে হবে সেখানে প্রথমে একটি লাইন A B অথবা X-Y অঙ্কন করতে হবে।
Step- তারপর ঐ লাইন বরাবর একটি সাদা কাগজ ভাঁজ করে রেখে তার উপর সমোন্নতি রেখাগুলি যেখানে ছেদ করেছে সেই সকল বিন্দুগুলিকে কাগজের উপর। চিহ্ণিত করে ঐ রেখাগুলির মান-লিখতে হবে।
Step-তারপর একটি গ্রাফ পেপার বা সাদা কাগজে A-B রেখাটিকে অনুভূমিকভাবে অঙ্কন করা হল। এটিকে ভিত্তি রেখা (base line) বলা হয়। এই ভিত্তি রেখা বা বাহুর উভয়দিকে দু'টি উল্লম্ব রেখা অঙ্কন করে তাতে উল্লম্ব স্কেলটি (vertical scale) দেখাতে হবে।
Step-এবার প্রথম কাগজটিতে চিহ্নিত করা মানগুলিকে উল্লম্ব রেখায় দেখানো স্কেল অনুসারে বসিয়ে চিহ্ণিত করতে হবে।
Step- এই বিন্দুগুলিকে একটি সুষম রেখার দ্বারা যুক্ত করতে হবে। এই রেখাটিই হল ঐ অঞ্চলের পরিলেখ।
Step-একই উচ্চতা বিশিষ্ট সমোন্নতি রেখা বা স্থানীয় উচ্চতা দু'টি যদি একই হয় এবং পাশাপাশি হয়, তাহলে স্কেল অনুসারে পার্শ্ববর্তী সমোন্নতি রেখার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের মধ্যবর্তী স্থান একটু উঁচু বা নিচু করে অঙ্কন করতে হয়।
Step- এইভাবে পরিলেখ অঙ্কন সম্পূর্ণ হওয়ার পর ঐ অনুভূমিক রেখাটির A ও B প্রান্তের অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ উল্লেখ যেমন করতে হয় তেমনই অনুভূমিক ও উল্লম্ব স্কেল দু'টিও উল্লেখ করতে হয়।
এইভাবে প্রাপ্ত পরিলেখটি (profile) থেকে ঐ অঞ্চলের ভূমিরূপটির সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
1/সারিবদ্ধ পরিলেখ:
টপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্রের কোন একটি বিশেষ অংশে নির্দিষ্ট উল্লেখ ব্যবধানের অনুভূমিক দূরত্বের যদি একাধিক পরিলেখ অঙ্কন করা হয় তখন তাকে সারিবদ্ধ পরিবেশ বলে।
2/অধ্যারোপিত পরিলেখ :
গাড়ি বন্ধ করিলেখ অঙ্কন করার পর একটি বৃত্তি বহুর উপর সব কয়টি পরিলেখের যদি এক টির ওপর আরেকটি কে একই সঙ্গে আরোপিত করা হয় তাকে অধ্যারোপিত পরিলেখ বলে ।
বৈশিষ্ট্য:
1. একই উচ্চতা বিশিষ্ট শীর্ষ দেশ গুলি চিহ্নিত করা হয়
2. ভূমিরূপ এর উত্থান সম্বন্ধে জানা যায়.
3. ভূমিরূপটি এক ক্ষয়চএ বিশিষ্ট না বহু ক্ষয়চক্র বিশিষ্ট তা জানা যায়.
4. একসঙ্গে বিভিন্ন উচ্চতা যুক্ত অংশগুলি চিহ্নিত করা যায়.
3/ অভিক্ষিপ্ত পরিলেখ:
সারিবদ্ধ ও পরিলেখ গুলিকে যখন একই বৃত্তি বাহুর মধ্যে এনে প্রথম পরিল একটি অঙ্কন করে তার ওপর দ্বিতীয় অংশ অঙ্কন করা হয় তখন অভিক্ষিপ্ত পরিলেখের সৃষ্টি হয়। ভূ-প্রকৃতিগত পার্থক্য এই অভিক্ষেপের খুব সহজে ধরা পড়ে।।
4/ বিমিস্র করলে:
যে অংশটি সারিবদ্ধ পরিলেখ অঙ্কন করা হয়েছে এ অংশটির নিমিশ্রণ করলে অঙ্কন করলে দূর থেকে যেমন দিগন্তকে দেখা যায়। এক্ষেত্রে ও সেই ধরনের একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়।। সারিবদ্ধ পরিলে একটি থেকে অঙ্কিত অধ্যা প্রকৃত পরিল একটি উচ্চতম অংশগুলিকে যখন একটি সুসংর রেখা দ্বারা শ্রীযুক্ত করা হয় তখন তাকে বিমিস্র পরিলেখ বলে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পরী লেখের শুধুমাত্র উচ্চতম অংশগুলি দৃশ্যমান। এই পরীলেকের sky line profile বলে। কতগুলি পাশাপাশি অঞ্চলে যদি বীমিত্র পড়লে কম্পন করা হয় তাহলে একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি সম্বন্ধে বিশেষ ধারণা করা যায়।