welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের ধারণা (concept of topographical map)

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের ধারণা (concept of topographical map)


পৃথিবী পৃষ্ঠের বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যেমন- ভূমিরূপ, নদ-নটা, উদ্ভিদ ইত্যাদি এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদান যেমন-জনবসতি, পথঘাট, সেতু, টেলিফোন, ইলেকট্রিক লাইন ইত্যাদি বিষয়গুলিকে নানা ধরনের প্রতীক চিহুগুলির মাধ্যমে মানচিত্রে তুলে ধরা হয়। ঐ প্রতীক চিতুগুলির মাধ্যমে কোনও স্থান বা অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ বা উপাদানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক পরিবেশ বা উপাদানের সম্পর্ক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হয়। এছাড়া এই দুই প্রকার উপাদানগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক খোঁজা হয় ও তার ব্যাখ্যা করা হয়। সুতরাং যে মানচিত্রে ভূ-পৃষ্ঠের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানগুলি বিভিন্ন প্রচলিত প্রতীক চিহ্ণের ব্যবহারের মাধ্যমে চিত্রায়িত করা হয় সেই মানচিত্রকে ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র বা টপোগ্রাফিক্যাল ম্যাপ বা স্থান বিবরণীমূলক মানচিত্র বলে।

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের সংজ্ঞা (definition of topographical map)

① 'topography' কথাটি একটি গ্রিক শব্দ, যা 'topos' যার অর্থ 'স্থান' এবং 'graphy' যার অর্থ 'বর্ণনা'-এই দুটি গ্রীক শব্দের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ 'topo-graphical' শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল 'স্থান বিবরণী। সুতরাং 'topographical map' বলতে এমন এক মানচিত্রকে বোঝায় যা নির্দিষ্ট স্কেলে এবং অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমার ভিত্তিতে অঙ্কিত এবং যাতে ভূ-পৃষ্ঠের সমস্ত প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানগুলি বিভিন্ন প্রচলিত প্রতীক চিহ্নের সাহায্যে নির্দিষ্ট অবস্থানে প্রদর্শন করা হয়।

② যখন কোনো নির্দিষ্ট অক্ষাংশিক ও দ্রাঘিমাংশিক অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানগুলিকে বিভিন্ন প্রচলিত প্রতীক চিছু ব্যবহারের মাধ্যমে উপযুক্ত স্কেলে, জ্যামিতিক গাণিতিক পদ্ধতিতে চিত্রায়িত করা হয় তখন তাকে ভূরৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র বা স্থানীয় বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র বলে।

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র পাঠের প্রয়োজনীয়তা (need of study of topographical map)

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র বা টপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্রে কোনো অঞ্চল সম্পর্কে খুঁটিনাটি সমস্ত তথ্য দেওয়া থাকে। তাই শুধুমাত্র ভূগোল শাস্ত্রে নয়, অন্যান্য বহু ক্ষেত্রেও উপোমানচিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন-

অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমার ভিত্তিতে কোনো স্থানের অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়।

কোনো অঞ্চলের প্রশাসনিক সীমানা অর্থাৎ কোনো রাজ্য, জেলা ও মহকুমার অন্তর্গত স্থানসমূহ সে সম্পর্কে জানা যায়

এই মানচিত্রের সাহায্যে কোনো অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ও ভূমিরূপের বৈশিষ্ট্য, বিশেষত ভূমির উচ্চতা, ভূমির ঢালের পরিমাণ ও দিক, ভূমির বন্ধুরতা প্রভৃতি সম্পর্কে বিশদভাবে জানা হয়।

টপোমানচিত্র থেকে ভূপ্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে কোনো অঞ্চলের জল নির্গম প্রণালী, নদী বিন্যাস, নদীর গতিপথ, খাল, হ্রদ, পুকুর, জলাশয় প্রভৃতি; অরণ্যের বিস্তার, প্রকৃতি (সংরক্ষিকত, সুরক্ষিত কিংবা উন্মুক্ত) ও উদ্ভিদ প্রজাতি ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা যায়।

কোনো অঞ্চলের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা; যেমন-সড়কপথ, রেলপথ, সেতু, নদী পারাপারের ব্যবস্থা, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ লাইন প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত-ভাবে জানা যায়।

টপোমানচিত্র থেকে কোনো অঞ্চলের জনবসতির প্রকৃতি, বিন্যাস, বন্টন ও প্রকারভেদ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

উপোমানচিত্র থেকে ভূ-প্রকৃতি, নদনদী, স্বাভাবিক উদ্ভিদ প্রভৃতি, প্রাকৃতিক উপাদানগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক যেমন অনুসন্ধান করা যায় তেমনি প্রাকৃতিক উপাদানগুলির সঙ্গ্যে জনবসতি, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি সাংস্কৃতিক উপাদানগুলির মধ্যেও পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা যায়।

কোনো অঞ্চলের বন্যা, ধস, ভূমিক্ষময়, নদীপাড়ের ভাঙন প্রভৃতি পরিবেশতগত সমস্যার কারণ অনুসন্ধান করা যায়।

কোনো অঞ্চলের কৃষি, খনি, শিল্প, বনজ সম্পদ (কাঠ) সংগ্রহ প্রভৃতি বিভিন্ন অর্থনৈতিক উদ্যোগ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। ফলে টপোমানচিত্র থেকে প্রদর্শিত অঞ্চলটির সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সেখানকার অধিবাসীদের জীবিকা ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা যায়।

কোনো অঞ্চলের উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য, বিশেষ করে নতুন জনবসতি ও শিল্প স্থাপন, নদীতে বাঁধ দেওয়া ও সেচখাল খনন করা, নতুন সড়কপথ ও রেলপথ স্থাপন। প্রভৃতির জন্য উপোমানচিত্রের প্রয়োজন হয়।

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের বৈশিষ্ট্য (characteristics of topographical map)

সাধারণ মানচিত্র অপেক্ষা ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা নিচে আলোচনা করা হল-

এই জাতীয় মানচিত্র সর্বদা একটি নির্দিষ্ট স্কেলে ও অনুপাতের ভিত্তিতে অঙ্কন করা হয়।

সুনির্দিষ্ট স্কেলে আঁকা মানচিত্রগুলির অক্ষাংশগত ও দ্রাঘিমাগত নির্দিষ্ট পরিসর বা বিস্তার থাকে।

নিখুঁতভাবে জরিপ কাজের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে এই মানচিত্র আঁকা হয়। বর্তমানে আকাশ চিত্র ও উপগ্রহ চিত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে আরও নিখুঁতভাবে এই মানচিত্রকে পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা হয়।

কোনো একটি নির্দিষ্ট উপাদানের পরিবর্তে নির্বাচিত কিছু প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানের সমাবেশ এই মানচিত্রে ঘটে।

এই মানচিত্রে চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপিত তথ্যের জরিপকাল উল্লেখ থাকে। ফলে একট নির্দিষ্ট সময়কালের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যগুলি বিশ্লেষণ করা হয়।

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র প্রস্তুতকারক (maker of topographical map)

1767 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার ভারতীয় সর্বেক্ষণ বিভাগ বা সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থাটির সদর দপ্তর উত্তরাঞ্চল রাজ্যের দেরাদুন শহরে অবস্থিত। এই সংস্থার তত্ত্বাবধানে টপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্রগুলো প্রস্তুত ও প্রকাশিত হয়।

টপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র বলতে বোঝায়- প্রচলিত বিভিন্ন চিহ্নের সাহায্যে বিভিন্ন স্থানের প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়সমূহ দেখানো হয়। এই মানচিত্রের সাহায্যে পাহাড়, পর্বত মালভূমি, নদ-নদী, হ্রদ, জলাশয়, স্বাভাবিক উদ্ভিদ ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিষয় সমূহকে এবং সেই সাথে উক্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা, জনবসতি, শিল্প প্রভৃতি বৈচিত্র্যমূলক অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। তাই কোনও অঞ্চল সম্পর্কে জানতে হলে টপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01