জরিপকার্যের ধারণা (concept of surveying)
জরিপকার্য (surveying) হলো এমনই এক কলাকৌশল (art), যার সাহায্যে কৌণিক (angular) ও রৈখিক (linear) দূরত্ব পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ করা যায় এবং যার সাহায্যে ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থানের বা বস্তুসমূহের আপেক্ষিক অবস্থান (relative position) নির্ণয় করা যায়, অর্থাৎ অন্যভাবে বলা যায় জরিপকার্য হল মানচিত্র তৈরির এক প্রকার বিজ্ঞান ও কলা (science and art), যার সাহায্যে ভূ-পৃষ্ঠের ক্ষুদ্র বা বৃহৎ যে কোনো অংশের সীমানা নির্ধারণ, অবস্থান, বিস্তার এবং ভূ-প্রকৃতি নিরূপণ করা যায়। জরিপকার্য-এর দুটি অংশ, প্রথমতঃ প্রয়োজনীয় বস্তুসমূহের পরিমাপ করা এবং পরে তার স্কেল অনুযায়ী নক্সা প্রস্তুত করা।
জরিপ কাজ বহুপ্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। প্রকৃত-পক্ষে, যেদিন থেকে সম্পত্তির সীমানা নির্ধারণ শুরু হয়, সেদিন থেকেই জরিপ কাজের জন্ম। বর্তমানে জরিপ কাজের অনেক উন্নতি হয়েছে, এমনকি বিমান থেকে ফটো এবং উপগ্রহের (GPS) সাহায্যেও জরিপ কাজ করা হচ্ছে। বর্তমান যুগে বিভিন্ন কলকারখানা, শিল্প, বন্দর, তৈল শোধনাগার, বহুমুখী নদী পরিকল্পনা, রাস্তাঘাট, রেলপথ প্রভৃতি স্থাপন ও নির্মাণে, খনিজ-সম্পদ আহরণে এবং শহর ও নগর তৈরিতে জরিপ কাজ একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। দেশ রক্ষার প্রয়োজনে এর প্রয়োজন সম্ভবত আরও অনেক বেশি।
জরিপ কাজে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাহায্য নেওয়া হয়। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে শিকল (chain), সমতল টেবিল (plane table), প্রিজম্যাটিক কম্পাস (prismatic compass), ডাম্পি লেভেল (dumpy level), থিওডোলাইট (theodolite), অ্যাবনি লেভেল (abney level), ক্লাইনোমিটার (clinometer), ইত্যাদি যন্ত্র বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
জরিপের সংজ্ঞা (definition of survey):
সঠিক পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপের মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের ওপর অবস্থিত বিভিন্ন উপাদানের আপেক্ষিক অবস্থান, আয়তন, উচ্চতা, কৌণিক ও রৈখিক দূরত্ব নির্ণয় করে মানচিত্র বা নকশা গঠনের পদ্ধতিতে জরিপ (survey) বলে।
জরিপের গুরুত্ব (importance of survey):
যে কোনো দেশের কাছে জরিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যথা-
① কোনো অঞ্চলের নকশা তৈরির ক্ষেত্রে,
② ভূমিবন্টন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে,
③ যে কোনো ধরনের উন্নয়ণমূলক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে (মৌজা মানচিত্র, বহুমুখী নদী পরিকল্পনা ইত্যাদি) প্রয়োজনীয় মানচিত্র প্রস্তুতকরণে জরিপের গুরুত্ব রয়েছে।
জিওডেটিক সার্ভে (geodetic survey):
সংজ্ঞা (definition): পৃথিবীপৃষ্ঠের বক্রতা (curvature)কে বিবেচনা করে সুবিস্তৃত অঞ্চলের জরিপ পদ্ধতিকে জিওডেটিক সার্ভে বলে।
বৈশিষ্ট্য (characteristics):
① সুবিস্তৃত এলাকার জরিপ পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া হওয়ায় পৃথিবীর বক্রতাকে বিবেচনা করা হয়।
② এই পদ্ধতিতে জরিপ এলাকার ক্ষেত্রফল অবশ্যই 100 বর্গমাইলের বেশি হয়।
③ পৃথিবীপৃষ্ঠের বক্রতার কারণে এলাকার জরিপের সময় ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থাকে, তাই জরিপের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।
④ বৃহৎ বক্রতলীয় ক্ষেত্রে জরিপ পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে জটিল ও সময়সাপেক্ষ।