মানচিত্র অভিক্ষেপ সংক্রান্ত প্রাথমিক ধারণা (basic concept related map projection)
উপবৃত্ত (ellipsoid), উপগোলক (spheroid) ও অভিগত গোলক (oblate spheroid)
উপবৃত্ত-এর ধারণা ও সংজ্ঞা(concept & definition of ellipsoid)
Ellipse কথার অর্থ হল উপবৃত্ত। উপবৃত্ত একটি দ্বিমাত্রিক বস্তু বা জ্যামিতিক আকার। এর দুটি অক্ষ (axis) থাকে- একটিকে বলে বৃহত্তম অক্ষ (major axis) অর্থাৎ যার দৈর্ঘা বেশি আর অপরটিকে বলে ক্ষুদ্রতর অক্ষ (minor axis) অর্থাৎ যার দৈর্ঘ্য কম। কোনো সমতলের উপর একটি বিন্দু যদি এমনভাবে চলমান হয় যে, ওই সমতলে অবস্থিত একটি নির্দিষ্ট বিন্দু এবং একটি নির্দিষ্ট সরলরেখা থেকে চলমান বিন্দুর দূরত্ব দুটির অনুপাত সর্বদা ধ্রুবক হয় এবং এই ধ্রুবকের মান যদি ০ থেকে বড়ো এবং 1 থেকে ছোটো হয় তবে ওই বিন্দুর সঞ্চারপথকে উপবৃত্ত (ellipse) বলে। অর্থাৎ =e, (0<e<1)।
ওই নির্দিষ্ট বিন্দুকে উপবৃত্তের নাভি (focus) এবং নির্দিষ্ট সরলরেখাকে উপবৃত্তের নিয়ামক (directrix) বলে।
নির্দিষ্ট বিন্দু ও নির্দিষ্ট সরলরেখা থেকে চলমান বিন্দুর দূরত্বদ্বয়ের অনুপাতকে উপবৃত্তের উৎকেন্দ্রতা (eccentricity) বলা হয় এবং এই ধ্রুবককে সাধারণত '' দ্বারা প্রকাশ করা হয়। উপবৃত্তের ক্ষেত্রে (0<e<1)।
উপগোলকের ধারণা ও সংজ্ঞা(concept & definition of spheroid)
যদি উপবৃত্ত (ellipse) কে যে কোনো অক্ষ বরাবর ঘোরানো বা আবর্তন করানো যায় তাহলে যে ত্রিমাত্রিকযুক্ত এক গোলাকার বন্ধু বা জ্যামিতিক আকার সৃষ্টি হয় তাকে উপগোলক (spheroid) বলে। বাস্তবে পৃথিবীর দুটো অক্ষের দৈর্ঘ্যে আলাদা- ঠিক যেভাবে উপবৃত্তের ক্ষেত্রে হয়। বিভিন্ন উপগোলকের semi major axis এবং semi minor axis-এর ব্যাসার্ধ আলাদা হয়, তার কারণ এই axis-গুলোর দৈর্ঘ্যা আলাদা হওয়ায়। যেমন- পৃথিবীর ক্ষেত্রে semi major axis-এর ব্যাসার্ধ হল নিরক্ষীয় ব্যাসার্ধ (12757 km) আর semi minor axis এর ব্যাসার্ধ হল মেরু ব্যাসার্ধ (12714 km)। কোনো একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট কোনো উপগোলক নির্বাচন করতে হয়, কারণ ওই নির্দিষ্ট উপগোলকটি ওই অঞ্চলের জিয়ডকে নিয়ে তৈরি হয়েছে। যেমন- উত্তর আমেরিকার জন্য GRS-1980, ② ভারতের জন্য Everest-1956।
অভিগত গোলকের ধারণা ও সংজ্ঞা(concept & definition of oblate spheroid)
① গোলাকার কোনো বস্তুর উত্তর-দক্ষিণ সামান্য চাপা এবং পূর্ব-পশ্চিম সামান্য ফোলা হলে তাকে বলা হয় অভিগত গোলক (oblate spheroid)
② যে গোলকের উত্তর ও দক্ষিণ দিক সামান্য চাপা এবং পূর্ব-পশ্চিম দিক সামান্য ফোলা তাকে অভিগত গোলক(oblate spheroid) বলে।
বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে জানা যায় যে, পৃথিবীর আকার ঠিক গোলাকার নয় (পৃথিবী যদি সত্যিই নিখুঁত গোলাকার হত তাহলে পৃথিবীর ব্যাস, ব্যাসার্ধ ও পরিধি সবদিকে সমান হত)। বরং পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু কিছুটা চাপা এবং মধ্যের নিরক্ষীয় কিছুটা স্ফীত। বিজ্ঞানীরা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে দেখেছেন পৃথিবীর মেরুব্যাস অপেক্ষা নিরক্ষীয় ব্যাস 43 কিমি দীর্ঘতর এবং মেরু পরিধি 51 কিমি বেশি দীর্ঘ। অতএব পৃথিবী ঠিক গোলাকার (spheroid) নয়। পৃথিবীর আকৃতি হল 'অভিগত গোলক' (oblate spheroid)। আবর্তনের ফলে গোলাকার পৃথিবীর মধ্যভাগ স্ফীত ও মেরু অঞ্চল সামান্য চাপা হয়।