মুর্শিদাবাদ জেলার ভৌগোলিক
মুর্শিদাবাদ জেলা ২৩°৪৩′৩০″ উত্তর থেকে ২৪°৫০′২০″ উত্তর এবং ৮৭°৪৯′ পূর্ব থেকে ৮৮°৪৬' পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। জেলার সমগ্র আয়তন ৫৩২৪ বর্গ কিলোমিটার। বহরমপুর জেলার সদর দপ্তর। মুর্শিদাবাদ জেলার পশ্চিমে রয়েছে বীরভূ ম এবং সাঁওতাল পরগণার অংশ, পূর্বদিকে বাংলাদেশ, দক্ষিণ দিকে নদিয়া ও উত্তরে মালদা জেলা। গঙ্গা ও পদ্মা নদী জেলার উত্তর ও পূর্ব সীমানা বরাবর প্রবাহিত এবং জলঙ্গি নদী জেলার দক্ষিণ সীমানা বরাবর প্রবাহিত।
জেলা গঠন- মুর্শিদাবাদ জেলার মোট ২৬টি ব্লক রয়েছে। এগুলি হল- বহরমপুর, ডোমকল, হরিহরপাড়া, বেলডাঙ্গা ১ ও বেলডাঙ্গা ২, জলঙ্গি, সামশেরগঞ্জ, নয়াডা, সুটি ১ ও সুটি ২. রঘুনাথগঞ্জ ১ ও রঘুনাথগঞ্জ ২. সাগরদিঘী, কান্দি, ফরাক্কা, বারওয়ান, ভরতপুর ১ ও ২, রানীনগর ১ ও ২, খারগ্রাম, মুর্শিদাবাদ জিয়াগঞ্জ, নবগ এাম, ভগবানগোলা ১ ও ২ এবং লালগোলা।
ভূমিরূপ- ভাগীরথী নদী এই জেলাকে রাঢ় এবং বাগরি এই দুটি সুস্পষ্ট বিভাগে বিভক্ত করেছে। ভাগীরথীর পশ্চিম অংশ রাঢ় ভূমি এবং পূর্ব অংশ বাগ্রি ভূমি নামে পরিচিত। মুর্শিদাবাদ জেলার অধিকাংশ ভাগীরথী ও জলঙ্গীর পলি গঠিত সমভূ মি। ভাগীরথী ও পদ্মার মধ্যবর্তী দোয়াব অঞ্চল, ভাগীরথী ও জলঙ্গীর দুই তীর বরাবর স্বাভাবিক বাঁধ অঞ্চল এবং নিম্নভূমি যেখানে নদী ও উপনদীগুলি এতটাই বাঁক নিয়েছে যে তা মূল নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ অথবা কোথাও কোথাও প্যালিও চ্যানেল (Palaco Channel) বা প্রাচীন নদীখাত হিসেবে থেকে গেছে। বর্ষাকালে এই নিম্নভূমি অঞ্চল জল প্লাবিত হয়ে বিশাল জলাভূমির সৃষ্টি করে।
নদনদী- গঙ্গা প্রধান নদী। গঙ্গার উপনদী গুলির মধ্যে রয়েছে ভাগীরথী, জলঙ্গী ও ভৈরব। জেলার উত্তরতম বিন্দুতে গঙ্গা নদী পূর্ব দিকে পদ্মা নামে প্রবাহিত হয়েছে এবং দক্ষিণ দিকে ভাগীরথী নামে প্রবাহিত হয়ে সাগরমুখী হয়েছে। ময়ূরাক্ষী নদী জেলার কান্দি মহকুমায় কিছু অংশে প্রবাহিত হয়েছে। ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি বলে ভাগীরথী নদীর জল প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জলবায়ু- মৌসুমি জলবায়ুর অধিকাংশ বৃষ্টিপাত ঘটে বর্ষাকালে জুন-সেপ্টেম্বরে। বৃষ্টিপাত ও বন্যার জলে ভৌমজল প্রাপ্তি ঘটায় ভৌমজলস্তর ভূমিভাগের ৫-১০ ফুট নীচেই পাওয়া যায়। তবে গভীর নলকূপের সাহায্যে অতিরিক্ত জল উত্তোলন করায় জলে আর্সেনিকের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় খাল, বিল ইত্যাদি থাকায় কৃষি কাজে জলের সুবিধা পাওয়া যায়।
বনভূমি- জেলায় বনভূমির পরিমাণ ২০১০-১১ খ্রীস্টাব্দে রাজ্য বনদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী ৭ লক্ষ ৭১ হাজার হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ বনাঞ্চল সামাজিক বনসৃজন এর অন্তর্গত। স্বাভাবিক বনভূমি বর্তমানে প্রায় নেই বললেই চলে। কৃষি ও বসতি বিস্তারে তা বহুদিন আগেই নিঃশেষিত হয়ে গেছে।
মৃত্তিকা- ভাগীরথীর তীরবর্তী স্বাভাবিক বাঁধ ও নিকটবর্তী নিম্নভূমিতে নবীন পলিমাটি এবং কিছুদূরে উঁচু অঞ্চলে প্রাচীন পলিমাটি দেখা যায়। ভাগীরথীর পশ্চিম অংশকে রাঢ় ভূমি হিসেবে এবং পূর্ব দিকের অংশকে বারি ভূমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বন্যাপ্রবণ ভাগীরথীর পলি সঞ্চয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার মৃত্তিকা গঠন হয়েছে। পলি সঞ্চিত মৃত্তিকা হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মাটি খুব উর্বর, উচ্চতর অংশে শক্ত কর্দম মিশ্রিত মাটি এবং নিম্নভূ মিতে পলি ও নরম কাদার মিশ্রণে গঠিত ভাগীরথীর পূর্ব দিকে সমভূমি অঞ্চল কৃষিকাজে সমৃদ্ধ।
মুর্শিদাবাদের জনসংখ্যা- ২০১১ এর সেন্সাস অনুযায়ী মুর্শিদাবাদের জনসংখ্যা ৭১ লক্ষ ২ হাজার ৪৩০। এর মধ্যে ৩৬ লক্ষ ২৯ হাজার ৫৯৫ পুরুষ এবং ৩৪ লক্ষ ৭২ হাজার ৮৩৫ নারী জনসংখ্যা অর্থাৎ পুরুষের তুলনায় নারী জনসংখ্যা এখানেও কম। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বিগত ১০ বছরের হিসেবে দুই শতাংশের কাছাকাছি।
ভূমির ব্যবহার ও উপজীবিকা- জেলায় মোট কৃষি ভূমির পরিমাণ ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯৫৮ হেক্টর, বনভূ মির পরিমাণ ৭৭১ হেক্টর, পতিত জমির পরিমাণ ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৭৬১ হেক্টর।
কৃষিকাজ- জেলার অধিকাংশ লোক অর্থাৎ প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কৃষিজীবি। কৃষিকার্যই মূল জীবিকা এবং অর্থনীতির প্রধান উৎস। মুর্শিদাবাদ জেলায় ধান, গম, ডাল, তৈলবীজ প্রভৃতি খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়। এছাড়া চটকলের জন্য পাট উৎপন্ন হয়।
পশুপালন গবাদি পশুর সংখ্যা জেলায় ১০ লক্ষ ১৭ হাজার ১৮০, মহিষের সংখ্যা ১ লক্ষ ১ হাজার ৬১৯, এছাড়া ছাগলের সংখ্যা ১৪ লক্ষ ২ হাজার ৯২৯, শুকরের সংখ্যা ২৬ হাজার ৫৪০। বহু লোক গবাদিপশু পালন করে জীবিকা অর্জন করেন।
পরিবহন- জেলার ভেতর দিয়ে ৩৩০ কিলোমিটার রেলপথ চলে গিয়েছে। সড়ক পথের মধ্যে জাতীয় রাজপথ ১৪৪.৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ, রাজ্য সড়কপথ ২৩৬ কিলোমিটার, জেলা সড়ক পথ ৪০৩ কিলোমিটার, অন্যান্য গ্রামীণ সড়ক পথ ৪৩৬ কিলোমিটার।
শিল্প- মুর্শিদাবাদ জেলা শিল্পের প্রসারের অভাব রয়েছে। রেজিষ্ট্রিভুক্ত শিল্প ইউনিট এর সংখ্যা এক শতও নয় এবং ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিক সংখ্যা ৫ হাজারের মত। তবে অ-রেজিস্ট্রিভুক্ত ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সংখ্যা ১০ সহস্রাধিক।
জেলায় ক্ষুদ্র শিল্পের মধ্যে বজ্রকলের সংখ্যা ৩টি। মুর্শিবাদের সিল্ক খুব বিখ্যাত এবং সিল্ক বস্তুকলের সংখ টা ১৬ টি। তৈরি পোশাক প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৪টি, কাঠ ও কাষ্ঠ শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ১৩টি, রাসায়নিক ইউনিটের সংখ্যা ২৮টি, চর্মদ্রব্য প্রস্তুত ইউনিটের সংখ্যা ৮৫টি, রাবার ও প্লাস্টিক এবং পেট্রো পণ্য উৎপাদন ইউনিট এর সংখ্যা ১০ টি, ধাতবদ্রব্য যেমন ইস্পাত নির্ভর ইউনিট ১০ টি এবং ইলেকট্রিক ও পরিবহন যন্ত্রাংশ তৈরি ইউনিট সংখ্যা ১২টি। মুর্শিদাবাদে রয়েছে ফারাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এন. টি. পি. সি. বা ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন এর দায়িত্বে রয়েছে সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
মুর্শিদাবাদে পর্যটন শিল্প সম্ভাবনাময়। হাজার দুয়ারী প্রাসাদ, ইমামবারা, কাট্টা মসজিদ, মতিঝিল, ধীরপ্রবাহী ভাগিরথী নদীপথ দর্শনে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে। পর্যটন পরিকাঠামোর আরো উন্নতি করতে পারলে মুর্শিদাবাদের পর্যটন শিল্পের উন্নতি ঘটবে।
.jpg)
.jpg)
.jpg)
.jpg)
.jpg)