বাস্তুবিদ্যার উপবিভাগসমূহ (Sub-divisions of Ecology) :
বাস্তুবিদ্যায় বৃহৎ অর্থে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ককে ব্যাখ্যা করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন বাসস্থানে প্রত্যেকটি উদ্ভিদ প্রজাতি, প্রাণী প্রজাতি এবং প্রজাতির অন্তর্গত প্রতিটি জীবের বাস্তুতান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপ এবং বাস্তুতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলিকে সঠিকভাবে পর্যালোচনার জন্য বাস্তুবিদ্যাকে বিভিন্ন উপবিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা-
(A) অইকোলজি (Autecology) :
একটি জীব বা একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির জনসংখ্যা ও তার পরিবেশ সম্পর্কিত আলোচনাকে অইকোলজি বলা হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে এই জীব বা প্রজাতির ভৌগোলিক বণ্টন, 'টেক্সোনমিক' অবস্থান, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য, উৎপাদনশীলতা, জীবনচক্র ও তাদের আচরণ পরিবেশের সাপেক্ষে সুস্পষ্টভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়।
(B) সিনইকোলজি (Synecology) :
সমগ্র বা কোনো জীব সম্প্রদায়ের সঙ্গে তার পরিবেশের সম্পর্ক বিষয়ক আলোচনাকে সিনইকোলজি বলে। জীব সম্প্রদায়ের বাসস্থান, টেক্সোনমিক বিভাজন এবং সংগঠনের স্তরের ওপর ভিত্তি করে সিনইকোলজিকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করা যায়। যেমন-
(i) জনসংখ্যা বাস্তুবিদ্যা (Population Ecology) :
এই বাস্তুবিদ্যায় প্রজাতির বৃদ্ধি, পুষ্টি, স্তরের গঠন, বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপ, সংখ্যার হ্রাসবৃদ্ধি, জন্মহার, যোগ্যতমের উদ্বর্তন, মৃত্যুহার প্রভৃতি নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়। (It deals with the growth, trophic structure, natality, supervisership, mortality, metabolism and regulation of a population.)
(ii) গোষ্ঠী সংক্রান্ত বাস্তুবিদ্যা (Community Ecology) :
একই প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত নির্দিষ্ট বাসভূমিতে বিভিন্ন জনসংখ্যা বা গোষ্ঠীর বাস্তুবিদ্যার আলোচনাকে গোষ্ঠী সংক্রান্ত বাস্তুবিদ্যা বা Community Ecology বলে। (It deals with the ecology of different populations in the same habitat and same environ mental conditions.)
(III) বর্ণীকরণ বাস্তুবিদ্যা (Taxonomic Ecology) :
বিভিন্ন উদ্ভিদ বা প্রাণীগোষ্ঠী বা টেক্সোনমিক গ্রুপের বাস্তুবিদ্যার আলোচনাকে বর্গীকরণ বাস্তুবিদ্যা বা Taxonomic Ecology বলে। (It is concerned with the ecology of dif ferent taxonomic groups, viz. microbial ecology, mammalian ecology, insect ecology and so on. )
(iv) বাসস্থান বাস্তুবিদ্যা (Habitat Ecology) :
উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিভিন্ন প্রাকৃতিক বাসভূমিতে পরিবেশের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রকের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। পৃথিবীতে স্বাভাবিক আবাস প্রধানত চার প্রকার।
যেমন-সমুদ্র, মোহনা, মিষ্টিজল এবং স্থল। প্রতিটি আবাসস্থলে পরিবেশের নিয়ন্ত্রকগুলির দ্বারা উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি নিজ নিজ ভাবে অভিযোজনের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব বিবর্তন ঘটায়। এই আবাসস্থলের ওপর ভিত্তি করে বাস্তুবিদ্যার আলোচনাকে বাসস্থান বাস্তুবিদ্যা বলা হয়। এর বিভিন্ন উপবিভাগগুলি হল- স্বাদু জলের বাস্তুবিদ্যা, সামুদ্রিক বাস্তুবিদ্যা, লক্ষ বাস্তুবিদ্যা, অরণ্য বাস্তুবিদ্যা এবং মরু বাস্তুবিদ্যা। (It includes the study of animals and plants in dif ferent habitats. According to habitat, it can be further divided into fresh water ecology, marine ecology, terrestrial ecology, forest ecology and desert ecology.)
(v) মানবীয় বাস্তুবিদ্যা (Human Ecology) :
পরিবেশের ওপর মানুষের প্রভাব এবং সর্বোপরি মানুষের ওপর পরিবেশের প্রভাব যে বিদ্যায় আলোচনা করা হয়, তাকে মানবীয় বাস্তুবিদ্যা বা Human Ecology বলে। ব্যাপক অর্থে প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষের বিভিন্ন অবৈজ্ঞানিক ক্রিয়াকলাপের ফলে পরিবেশের বিভিন্ন অংশে বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। পরিবেশের ওপর বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব মানবীয় বাস্তুবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। (It deals with the effects of human activities on environment and vice versa.)
(vi) ব্যবহারিক বাস্তুবিদ্যা (Applied Ecology) :
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, জৈবিক পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনায় বাস্তুবিদ্যার যেসব ধারণা, রীতিনীতি প্রয়োগ করা হয়, সেই সংক্রান্ত আলোচনাকে ব্যবহারিক বাস্তুবিদ্যা বলে। (It deals with the application of ecological concepts to human needs including wildlife management, biological control, forestry and conservation of natural resources.)
(vii) রাসায়নিক বাস্তুবিদ্যা (Chemical Ecology) :
বিভিন্ন জীবের রাসায়নিক বংশগত সাদৃশ্যতাই বাস্তুবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয়। (It is concerned with the chemical affinity shown by different organisms.)
(vii) পুরাবাস্তুবিদ্যা (Palaeo Ecology) :
এই বাস্তুবিদ্যায় প্রাচীন যুগের পরিবেশগত অবস্থা এবং জীবন সম্পর্কে পর্যালোচনা করা হয়। প্যালিও-ইকোলজির আলোচনার ক্ষেত্রে Palaeontology এবং Radioactive ডেটিং বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। (It deals with the environmental conditions and life of the past ages. Palacontology and Radioactive dating have aided significantly in the study of Palaeo-Ecology)
(ix) বিবর্তনী বাস্তুবিদ্যা (Evolutionary Ecology) :
বিবর্তনী বাস্তুবিদ্যায় বিবর্তন সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা বিশেষ করে প্রজাতির স্পিসিয়েশন ও পৃথকীকরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। (It deals with the evolutionary problems like speciation and segregation.)
(x) জিন বাস্তুবিদ্যা (Gene Ecology) :
পরিবেশের সঙ্গে বিভিন্ন জিনগত পার্থক্য এবং সেই সংক্রান্ত আলোচনাকে জিন বাস্তুবিদ্যা বা Gene Ecology বলে। (A relationships of environment with genetic variability are considered in Gene Ecology.)
(xi) বাস্তু ভূবিদ্যা (Eco-Geography) :
বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির ভৌগোলিক বণ্টন বাতু ভূবিদ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয়। ব্যাপক অর্থে বায়োম সংক্রান্ত আলোচনা বাস্তু-ভূবিদ্যার (Eco-Geography) প্রধান আলোচ্য বিষয়। (It study the geographical distribution of plants and animals in different environ ments collectively called as biomes.)
(xii) পেডোলজি (Pedology) :
বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে মৃত্তিকা সৃষ্টির বিভিন্ন উপাদান ও মৃত্তিকার নিজস্ব প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক ধর্ম এই বিদ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয়। (It deals with the study of soil and refers to its nature like acidity, alkalinity, humus content, mineral content, soil type etc.)
(xiii) বাস্তুতন্ত্রের বাস্তুবিদ্যা (Ecosystem Ecology) :
বাস্তুতন্ত্রের জৈবিক উৎপাদন ও বিভিন্ন পুষ্টিস্তরে শক্তির বণ্টন সংক্রান্ত আলোচনাকে বাস্তুতন্ত্রের বাস্তুবিদ্যা বলে। (Biological productivity of an ecosystem or nature and how it can best serve the mankind encompasses Ecosystem Ecology.)