কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি

    জলির তেজস্ক্রিয় তত্ত্ব Radioactive Theory of Joly

      জলির তেজস্ক্রিয় তত্ত্ব Radioactive Theory of Joly

                     জন জলি (John Joly) ( 1857 - 1933 )

    আইরিশ ভূবিজ্ঞানী জন জলি( John Jolly 1857-1933 ) বিখ্যাত তেজস্ক্রিয় মৌলের তেজস্ক্রিয়তা গবেষণার জন্য । Surface History of the Earth ( 1925 ) বইতে তিনি পৃথিবীর তেজস্ক্রিয় মৌলের এবং তেজস্ক্রিয় বিকিরণে উৎপন্ন তাপপ্রবাহকে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন । তিনি গিরিজনি প্রক্রিয়ায় ভূত্বকের সম্প্রসারণ ( expansion ) ও সংকোচন ( contraction ) কে দায়ী করেন । আবার সংকোচন - প্রসারণের কারণ হিসাবে তিনি তেজস্ক্রিয় বিকিরণে উৎপন্ন তাপপ্রবাহের কথা বলেন  


    • মূল ধারণা ( Basic Ideas )


     1. জলির মতে মহাদেশীয় ভূত্বক কম ঘনত্বের শিলার স্তর দ্বারা গঠিত , তাই হালকা । আর মহাসাগরীয় অংশ বেশি ঘনত্বের সিনা স্তর দিয়ে তৈরি , তাই তুলনামূলকভাবে ভারী । জলি বিশ্বাস করতেন এই মহাদেশীয় ভূত্বকে রয়েছে সর্বাধিক তেজস্ক্রিয় খনিজ যা বিকিরণে তাপ উৎপন্ন করে চলেছে । মোটামুটি মহাদেশীয় ভূত্বকের নীচে অর্থাৎ 30 তিনি গভীরতায় এই তাপ দাঁড়ায় প্রায় 1050 ° C- এ । জলি মনে করতেন মহাদেশীয় ভূত্বক তথা সিয়ালের সর্বোচ্চ গভীরতা 30 কিমি । 


    2. সিয়াল স্তরে তাপ উৎপন্ন হলেও এই তাপ সিয়ালে সঞ্চিত থাকে না । এই তাপ তাপশক্তিরূপে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সিমা স্তরে চালান হয়ে যায় । সিমা স্তর এই তাপ আবন্ধ রেখে শক্তির আধাররূপে কাজ করে । তবে সামুদ্রিক ভূত্বক যেহেতু সিমা স্তর দিয়ে গঠিত , তাই সামান্য তাপ সমুদ্রের জলে পরিবাহিত হয় । এইভাবে সিমা স্তরে ক্রমশই তাপের সঞ্চার ঘটে এবং এই তাপে একটা সময় সিমা গঠনকারী প্রধান উপাদান ব্যাসল্ট শিলাকেও গলিয়ে দেয় । তবে এই ঘটনাটা খুব সহজে ঘটে না । কারণ ব্যাসন্টের গলনাঙ্ক হল 1150 ° C আর সিমার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে 1050 ° C সুতরাং আরও কিছু প্রায় 100 ° C ) তাপমাত্রা বৃদ্ধি দরকার । জলির মতে তেজস্ক্রিয় বিকিরণে এই তাপ আসতে পারে তবে তার জন্য দরকার অন্তত 3.3 কোটি বছর । 


    3. সুতরাং দীর্ঘকালীন তেজস্ক্রিয় বিকিরণে একটা সময় সিমা গলে যাবে এবং আয়তনে বেড়ে হালকা হবে । ফলে সিমার উপর ভাসমান সিয়াল স্তর ক্রমশ সিমার মধ্যে ডুবতে থাকবে । কালক্রমে সিয়াল অংশ উপত্যকা বা মহীখাত গঠন করবে । একে সমুদ্রের অগ্রগমন কাল         ( Period of Transgression of Sea ) বলে ।


     4. সমুদ্রের অগ্রগমন কালে সিমা বা ব্যাসল্ট শিলা গলে আয়তনে বাড়বে এবং পৃথিবীর পরিধি বৃদ্ধি পাবে । এতে অসম চাপ সৃষ্টি হবে । ফলে অসংখ্য ফাটল বা চ্যুতি তৈরি হবে । এই চ্যুতি বরাবর গলিত শিলা বা ম্যাগমা বাইরে বেরিয়ে মহাসাগরীয় শৈলশিরা ( Oceanic ridge ) এবং আগ্নেয় দ্বীপ ( Island arcs ) গঠন করে । 


    5. সীমান্তরে আবদ্ধ তাপ মহাসাগরীয় শৈলশিরা ও আগ্নেয় দ্বীপের মাধ্যমে পরিবেশে উন্মুক্ত হতে শুরু করে । একটা সময় সিমান্তর তাপ বিকিরণে ঠাণ্ডা হয়ে ঘনত্ব বাড়িয়ে আগের ভারী শক্ত শিলার জায়গায় ফিরে যাবে । ফলে সিমা স্তরের সংকোচন শুরু হবে । তখন মহীখাত বা জিওসিনক্লাইন - এ সঞ্চিত পলিতে পার্শ্বচাপ বাড়তে থাকবে । চাপ সহ্য করতে না পেরে একটা সময় পলিতে ভাঁজ তৈরি হবে এবং সমুদ্র বক্ষ থেকে ভঙ্গিল পর্বতরূপে উত্থিত হবে । একে সমুদ্রের পশ্চানগমন কাল ( Period of Regression of Sea ) বলে 


    • সমালোচনা ( Criticism )

     জলির তেজস্ক্রিয় বিকিরণে উৎপন্ন তাপ ও তাপীয়   প্রবাহের গননা সম্পূর্ণরূপে গণিত নির্ভর । সেই কারণে   বিজ্ঞানীমহল এই তত্ত্বকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে   গ্রহণ  রেন । তা সত্ত্বেও এই তত্ত্ব ত্রুটিমুক্ত নয় । 


    1. তেজস্ক্রিয় বিকিরণে উৎপন্ন তাপের এবং তাপের সঞ্চালনে ভূত্বকের এক অংশের সংকোচন এবং আর এক অংশের সম্প্রসারণ আদৌ সম্ভব কিনা এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা একমত নন । 


    2. 30 কিমি গভীরতা সিমা স্তরের জলিব এই ধারণা বাস্তবে সঠিক নয় । অনেক জায়গায় তা কমে 15 কিমি কিংবা বেড়ে 40 কিমি অবধি হতে পারে । বিজ্ঞানী জেফরির ( Jeffrey ) মতে সিয়ালের গভীরতা মাত্র 16 কিমি .। এই গভীরতায় তাপমাত্রা 1150 ° C- এ আসা সম্ভব নয় ।


     3. সিমা স্তরের গলন এবং পুনরায় তাপ বিকিরণে তা আগের জায়গায় ফিরে আসা একটি চক্রাকার প্রক্রিয়া — এটাই জলির তত্ত্বের মূল ভিত্তি । কিন্তু বাস্তবে সিয়াল ও সিমার পরিমাণ এক নয় । তাই বিজ্ঞানী স্টিয়ারের ( J. A. Steer ) মতে জলির এই মূল ভিত্তিটা নড়বড়ে । 


    4. জলির মতে মহাদেশগুলি ক্রমশ পশ্চিমে সরতে থাকে । এর কারণ জোয়ারি বল । কিন্তু জোয়ারি বল এতই দুর্বল তা মহাদেশের তলদেশে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না - এ তথ্য এখন অধিকাংশ বিজ্ঞানী মেনে নিয়েছেন ।

    নবীনতর পূর্বতন

    نموذج الاتصال