মহীসঞ্চরণ তত্ত্বের আলোকে পর্বত সৃষ্টি Orogeny Continental Drift Theory
Orogeny কথাটির অর্থ হল পর্বত সৃষ্টির পর্যায় বা ধাপ । একই সঙ্গে পর্বতের উত্থান এবং বিভিন্ন সময়ে উত্থিত পর্বতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের স্থানীয় নিম্নভূমিতে পলি সম্বনয় এবং তাদের উত্থানও এই বিষয়টির অন্তর্গত । এখনও ভূতত্ত্ববিদদের মধ্যে যে বিতর্ক চলতে থাকে তা হল — কোনো নির্দিষ্ট সময়ে Drogeny পর্ব ঘটে থাকে না , যে কোনো সময় এই পর্ব চলতে থাকে ।
প্রাচীনকালে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে , সমগ্র পৃথিবীর ওপর Matamorphism এবং Magnetism- এর পর্বগুলি কতকগুলি উত্থান পর্বের দ্বারা বিভক্ত । আবার অনেকে মনে করেন যে , পর্বতসৃষ্টি অনবরত চলতে থাকে , কিন্তু তা বিভিন্ন স্থানে ঘটে থাকে । আবার কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন যে পর্বত সৃষ্টি হল কতকগুলি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া যা প্রধান এবং স্থানীয় অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে । ফলস্বরূপ এই পর্যায়গুলির ঘটনা অনুসারে তাদের নামকরণ করা হয়েছে । এইগুলি হল--
( a ) শিল্পীভবন পর্যায় ( period of lithogenesis )
( b ) গিরিজনি পর্যায় ( period of orogenesis )
( c ) উন্নয়ন পর্যায় (period of glyptogenesis )
ভূ - সংস্থানের এই উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বা রূপ হল ভলিািল পর্বত । বিভিন্ন ভূ - সংস্থানিক মডেলে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করা হয়েছে । ওয়েগনারের মহীসঞ্চরণ মডেলটিও পর্বত সৃষ্টির ব্যাখ্যা প্রদান করে । ওয়েগনার তাঁর মহীসঞ্চরণ তত্ত্বে মহাদেশগুলির চলনের দ্বারা ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির এক ধরনের প্রক্রিয়া উদাহরণসহ উল্লেখ করেছেন ।
এই প্রসলো ডুবিজ্ঞানী Steers তার অস্থির পৃথিবী ( Unstable Earth ) প্রস্থে মহাদেশের শিলাস্তরের উপরের চলন এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া মহাদেশের সম্মুখভাগে সম্বিত পলিস্তরের সংকোচন সেইসলো ভগিল পর্বত সৃষ্টির প্রক্রিয়া উল্লেখ করেন ওয়েগনারের মতে এই ধরনের প্রক্রিয়ার ফলাফল দ্বারা রতি কিংবা আন্দিজ পর্বতমালার উদ্ভব ব্যাখ্যা করা যায় ।
ওয়েগনারের প্রস্তাবিত মহীসঞ্চরণ তত্ত্বে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির প্রক্রিয়া ও মডেল আলোচনা করা হল ওয়েগনার তাঁর মহীসন্তরণ মতবাদ তত্ত্বে মনে করেন যে মহাদেশীয় শিলান্তর হাল্কা সিয়াল। ( SIAL ) , মহাসাগরীয় শিলাস্তর ভারী সিমা ( SIMA ) স্তরের ওপরে চলমান রয়েছে । এই চলমান মহাদেশগুলি যখন মহাসমুদ্রের দিকে অগ্রসর হয় তখন মহাসাগরের উপকূল ভাগে সঞ্চিত পলিস্তরে ভাঁজের সৃষ্টি হয় ।
তুবিজ্ঞানী Wooldridge তাঁর ভূমিরূপবিদ্যা বইটিতে মন্ত্রীসঞ্চরণ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে , অগ্রবর্তী মহাদেশের চোয়ালের আঘাতে উপকূলভাগে সঞ্চিত পলিস্তর ভগিল পর্বতের সৃষ্টি করে । এই ধরনের ব্যাখ্যায় মহাদেশগুলি এগিয়ে যাওয়ার ফলে মহাসাগরের উপকূল অঞ্চলে রৈখিক মালার ন্যায় ( linear chain ) ভগিল পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা পশ্চিমমুখী অগ্রসর হওয়ার হলে সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে পলি সময় স্থানে ভাঁজ পড়ে ভগিল পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে । আবার উত্তর - পূর্বমুখী চলনের ফলে ভারত ও এশিয়ার বাকী অংশের মধ্যে নবীন ভঙ্গিল পর্বত তথা হিমালয় সৃষ্টি হয়েছে ।
সেইসঙ্গে আফ্রিকা মহাদেশে সেইভাবে উল্লেখযোগ্য অগ্রসর ছিল না বলে , উত্তর পশ্চিম আফ্রিকায় ছোটো আকৃতি Atlas পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে । অনেক ডুবিজ্ঞানী ওয়েগনারের মহীসঞ্চরণ তত্ত্বের দ্বারা পর্বত সৃষ্টির ব্যাখাকে সঠিক বলে মেনে নেয়নি । তাদের মতে
( a ) আরাবল্লী , উরাল , আপেলেশিয়ানের মতো যে সমস্ত পর্বত মহাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত তাদের ব্যাখ্যা এই তত্ত্বে হয়নি ।
( b ) আদিম কিংবা রকি পর্বতমালার অন্তর্গত বিস্তৃত গ্রানাইট স্তর বা উচ্চ হিমালয়ের সমস্ত করা যায় তার ব্যাখ্যা মেলেনি । জায়গায় গ্রানাইট শিলা লক্ষ
( c ) আবার মহাদেশীয় খণ্ডগুলি চলাচলের জন্য যে শক্তির প্রয়োজন , ওয়েগনার সেই শক্তির উৎস সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করেননি । তাই মহীরণ দ্বারা পর্বত সৃষ্টি বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে গৃহীত হয়নি ।