welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

তরঙ্গ বিযুক্তি Wave Discontinuity

সাধারণত ভূ - অভ্যন্তরের মধ্য দিয়ে যখন ' P ' ও ' S ' তরঙ্গের প্রবাহ ঘটে তখন আলোক তরঙ্গের মতো প্রতিফলন ও প্রতিসরণ ঘটে । অর্থাৎ এক ঘনত্বের শিলাস্তর থেকে

তরঙ্গ বিযুক্তি Wave Discontinuity 

সাধারণত ভূ - অভ্যন্তরের মধ্য দিয়ে যখন ' P ' ও ' S ' তরঙ্গের প্রবাহ ঘটে তখন আলোক তরঙ্গের মতো প্রতিফলন ও প্রতিসরণ ঘটে । অর্থাৎ এক ঘনত্বের শিলাস্তর থেকে অন্য ঘনত্বের স্তরে প্রবাহের সময় ' P ' ও ' S ' তরঙ্গের গতিপথ পরিবর্তিত হয় , একে তরঙ্গ বিযুক্তি ( wave discontinuity ) বলে । অন্যভাবে বলা যায় যে , বিভিন্ন উপাদানের তারতম্য অনুসারে ভূ - অভ্যন্তরের স্তর ভাগগুলি একে অপরের সঙ্গে সূক্ষ্ম সীমারেখায় মিলিত হয়েছে , যাতে দুটি স্তরের মধ্যে সহজে পার্থক্য করা যায় । সেই কাল্পনিক সীমারেখাকে বিযুক্তি রেখা বলে । এই রেখাগুলি বিভিন্ন গভীরতায় অবস্থান করে ।এই রেখাগুলির আপেক্ষিক ঘনত্বও বিভিন্ন প্রকারের হয় । এই বিযুক্তি তরঙ্গের গতির ওপর নির্ভর করে । তরঙ্গের গতি আবার পদার্থের ভৌত ধর্মের উপর নির্ভর করে । এভাবে প্রতিফলন ও প্রতিসরণের কোণের মান থেকে ভূ - অভ্যন্তরের পদার্থের বৈশিষ্ট্য জানা যায় । তাছাড়া ভূ - কম্পন তরঙ্গ বিভিন্ন স্তরের বিযুক্তিগুলির সীমারেখা চিনতে সাহায্য করে । নীচে কয়েকটি প্রধান বিযুক্তিতল বা রেখা সম্বন্ধে আলোচনা করা হল-


 ( 1 ) কনরাড বিযুক্তি ( Conrad Discontinuity ) 

ভূত্বকের সিয়াল ( SIAL ) এবং সিমা ( SIMA ) স্তরের সংযোগস্থলে এই বিযুক্তি অবস্থিত । অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানী ডি . কনরাড ( V. Conrad ) 1925 সালে এর পরিচিতি ঘটান এবং তাঁর নাম অনুসারে একে কনরাড বিযুক্তি ( Conrad discontinuity ) বলা হয় । শিলাস্তরের উপরের অংশের গ্রানাইট জাতীয় শিলা এবং এর নীচে অংশের ব্যাসল্ট জাতীয় শিলা স্তরের মধ্যে একটি বিচ্ছেদ হল লক্ষ করা যায় । এটি কনরাড বিযুক্তি নামে পরিচিত । এই বিযুক্তি তল ভূত্বককে দুটি ভাগে ভাগ করেছে । যথা- ( a ) মহাদেশীয় ভূত্বক এবং ( b ) মহাসাগরীয়ক । এটি প্রকৃত পক্ষে হালকা গ্রানাইট এবং ভারী ব্যাসন্ট শিলার সীমারেখা । ' P ' তরলের গতিবেগ এখানে হঠাৎ করে বেড়ে সেকেন্ডে 6 কিমি থেকে প্রায় 6.5 কিমিতে পরিণত হয় । মহাদেশে এই বিযুক্তিতলের অবস্থান 15-20 কিনির নীচে । কিন্তু সমুদ্রতলে এটি অনুপস্থিত । এই রেখা বরাবর চুকম্প তরঙ্গের গতি - প্রকৃতি পরিবর্তিত হয় ।

(2) মোহোরোভিসিক বিযুক্তিত discontinuity ) 

ভূত্বক ও গুরুমণ্ডলের মধ্যে একই বিযুক্তি অবস্থিত । ভূ - কম্পীয় পদ্ধতির সাহায্যে জানা যায় যে , মহাদেশীয় ভূ - ভাগের তলদেশ ও মহাসাগরের তলদেশের মধ্যে । বিভিন্ন দিক দিয়ে অনেক পার্থক্য রয়েছে । এই দুই তলদেশের মধ্যে গভীরতার পার্থক্য যথাক্রমে 32 ও 3 , P তরঙ্গের গতিবেগের পার্থক্য যথাযথ 7 ও ৪ আবার তলে উপস্থিত পদার্থের যথাক্রমে কম ঘনত্বযুক্ত ও খুবই অল্প মাত্রায় ব্যাসন্ট এবং উভয় তলদেশের মধ্যে রাসায়নিক গঠনের পার্থক্য লক্ষ করা গেছে । এই ব্যাসন্ট স্তরের নীচের অংশই তার পরবর্তী ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ম্যান্টেল শিলাস্তরের ( mantle rock ) সাথে সুনির্দিষ্ট সীমানা নির্দেশ করে । এই পরিবর্তন প্রথম লক্ষ করেন যুগোস্লাভিয়ার বিখ্যাত ভূবিজ্ঞানী এ . মোহোরোভিসিক 1909 সালে । তাঁর নাম অনুসারে এই বিযুক্তিতলের নাম হয় মোহোরোভিসিক বিযুক্তিতল ( Mohorovisic discontinuity ) । ভূ - অভ্যন্তরের এইরকম প্রথম বিচ্যুতি ধরা পড়ে মহাদেশে 35 কিমি এবং সমুদ্রতলে 5-10 কিমি গভীরতায় । এই পরিবর্তন বা বিযুক্তির কারণ ভূত্বক থেকে গুরুমণ্ডলের ঘনত্বের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি । এই ভূত্বক ও গুরুমণ্ডলের সীমারেখা নির্দেশক । এখানে উভয় তরঙ্গের গতিবেগ কিছুটা বেড়ে যায় ।

(3) গুটেনবার্গ বিযুক্তি ( Gutenberg Discontinuity)

 ভূ - অভ্যন্তরে মোহোরোভিসিক বিযুক্তি থেকে 2900 কিমি গভীরতায় গুরুমণ্ডল ও কেন্দ্রমণ্ডলের মধ্যে ইউশার্ট গুটেনবার্গ বিযুক্তি তল অবস্থিত । মোহোবিযুক্তি থেকে 410 কিমি গভীরতা পর্যন্ত স্তরটি গুটেনবার্গ স্তর নামে পরিচিত । অর্থাৎ ভূকম্পের গতিতে অনুরূপ আর একটি বিযুক্তিতল লক্ষ করা যায় 2900 কিমির নীচে , যাকে সর্বপ্রথম জার্মান অধ্যাপক বিজ্ঞানী তথা ভূকম্পবিদ , গুটেনবার্গ 1897 সালে চিহ্নিত করেন বলে এর নাম অনুসারে গুটেনবার্গ বিযুক্তিতল ( Gutenberg discontinuity ) বলা হয় । কিন্তু পরবর্তী সময় অর্থাৎ 1912 সালে প্রফেসর বেনো গুটেনবার্গ এই বিচ্ছেদ তল বৈজ্ঞানিক যুক্তি সহকারে ব্যাখ্যা করেন । বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল ও নিম্ন গুরুমণ্ডলের মধ্যে এই বিযুক্তি রেখাটি অবস্থিত । এই অংশে তরঙ্গের প্রবাহ বিলুপ্ত হয় , এবং P তরঙ্গের গতিবেগ কমে যায় । এটি প্রকৃতপক্ষে গুরুমণ্ডল ও কেন্দ্রমণ্ডলের সীমানা নির্দেশক । ভূগর্ভে চাপে ও তাপে শিলার কিছু অংশ গলে গিয়ে স্তরটি সাস্ত্র অবস্থায় পরিণত হয় । অর্থাৎ শিলার ঘনত্ব কমে যায় । তাই ' P ' তরঙ্গের গতিবেগ কমে যায় । তাই এই স্তরকে স্বল্প গ তিবেগ সম্পন্ন অঞ্চল বলা হয় । একে অনেকে ওল্ডহাম বিযুক্তি রেখাও বলে । এই স্তরের আপেক্ষিক ঘনত্ব 5.5-10 গ্রাম / ঘন সেমি ।

 ( 4 ) র‍্যাপিটি বিযুক্তি ( Rapiti Discontinuity ) 

গুরুমণ্ডল দুটি ভাগে বিভক্ত যথা ঊর্ধ্বগুরুমণ্ডল ( ক্রোফেসিমা ) ও নিম্ন গুরুমণ্ডল ( নিফেসিমা ) । এই ঊর্ধ্বগুরুমণ্ডল ও নিম্নগুরুমণ্ডলের মধ্যবর্তী সীমানায় উপস্থিত র‍্যাপিটি বিযুক্তি । ভূবিজ্ঞানী র‍্যাপিটি এই বিযুক্তি তলটি আবিষ্কার করেন । এই রেখাটি ভূপৃষ্ঠ থেকে 700 কিমি গভীরতায় অবস্থিত । এই স্তরের আপেক্ষিক ঘনত্ব 4.3 গ্রাম / ঘন সেমি । 

( 5) লেম্যান বিযুক্তি ( Lehman Discontinuity ) 

এই বিচ্ছেদ তলটি কেন্দ্রমণ্ডলের বহিঃ ও অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডলের মধ্যে অবস্থিত । এই তলটি 1936 সালে ডেনমার্কের ভূকম্পবিদ ইঙ্গে লেম্যান 5150 কিমি গভীরতায় সন্ধান পান যা লেম্যান বিযুক্তি নামে পরিচিত । এই স্তরটি সান্দ্র প্রকৃতির । এই তলে P তরঙ্গের গতিবেগ বাড়তে দেখা যায় । এই তলের আপেক্ষিক ঘনত্ব 12.3-13.3 গ্রাম / ঘন সেমি ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01