welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

নদীর পর্যায় ক্রম নির্ণয় ও দ্বি-বিভাজন অনুপাত (stream ordering and bifurcation ratio)

নদীর পর্যায় ক্রম নির্ণয় ও দ্বি-বিভাজন অনুপাত (stream ordering and bifurcation ratio)


ধারণা (Concept)

নদী প্রবাহ বিশ্লেষণের জন্য মূল নদী এবং উপনদীগুলোর সমন্বয়ে গঠিত এলাকাকে কয়েকটি পর্যায় ক্রমে (order) বিভক্ত করাকে নদী পর্যায় ক্রম বলে। নদী পর্যায় ক্রম বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি নদী অববাহিকার গঠন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জল প্রকৌশলী Robert E. Horton 1945 সালে সে দেশের একটি নদী অববাহিকাকে কেন্দ্র করে গবেষণা পরিচালনার সময় সব নদীর পর্যায় ক্রম সম্বন্ধে ধারণা দেন।

হটন একটি নদী অববাহিকা এলাকায় বিভিন্ন নদীর সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে হর্টন নদীগুলোর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সম্পর্ক নির্ধারণ করেন। তিনি প্রথমে সম্পূর্ণ অববাহিকা এলাকার সব কয়টি নদীকে কয়েকটি পর্যায় অনুসারে বিভক্ত করেন। এই নির্দিষ্ট পর্যায়গুলোকে নদী পর্যায় ক্রম (stream Ordering) বলা হয়।

নদীর মোহনা থেকে উৎসের দিকে উপনদী ও প্র-উপনদীর সংখ্যা বাড়তে থাকে ও সঙ্গম বরাবর দ্বি-বিভাজিত হতে থাকে। বিভিন্ন পর্যায়ের নদীতে হর্টন সেই দ্বি-বিভাজিত নদীগুলির বৃদ্ধির হার নির্ণয়ের জন্য একটি সূত্র তৈরি করেন। একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের নদীর সহিত পরবর্তী উচ্চ পর্যায়ের নদীর সংখ্যার অনুপাতকে দ্বি-বিভাজন অনুপাত (Bifurcation Ratio) বলা হয়।

নদী পর্যায় ক্রমের সংজ্ঞা(definition of stream ordering)

একটি নদী অববাহিকার নদীখাতগুলিকে তাদের পারস্পরিক মিলন সম্পর্কিত চরিত্র অনুযায়ী পর্যায়-ক্রমিকভাবে উচ্চ শ্রেণিতে অন্তর্ভূক্ত করাকে নদীখাতের ② ক্রম (stream ordering) বলা হয়।

কোনো একটি নদীর অববাহিকার মধ্যে প্রধান নদী ও তার উপনদীগুলিকে ক্রমানুযায়ী স্থিরিকৃত করাকেই নদীর ক্রমবিন্যাস (stream odering) বলা হয়। 1914 সালে Gravelius প্রথম নদীর এই ক্রমবিন্যাসকে দেখাবার চেষ্টা করেন।

নদী প্রবাহ বিশ্লেষণের জন্য মূল নদী এবং উপনদীগুলোর সমন্বয়ে গঠিত এলাকাকে কয়েকটি পর্যায় ক্রমে (order) বিভক্ত করাকে নদী পর্যায়কম (stream ordering বলে।

"Stream order is delined as a measure of the position of a stream in the hierarch of tributaris-J. P. Miller (1969).

নদী পর্যায় ক্রমের গুরুত্ব(importance of stream ordering)

1945 সালে হর্টন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি নদী অববাহিকারে কেন্দ্রকরে নদীর পর্যায়ক্রম সম্পর্কে সর্বপ্রথম তাঁর গবেষণা কার্য পরিচালনা করেন। তাঁর মতে-

নদী অববাহিকার প্রতিটি অংশের একটি নিজস্ব একটি ভূ-রূপমিতিক বৈশিষ্ট্য থাকে, সে সম্পর্কে জানা যায়।

নদী অববাহিকার গঠন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়।

হাইড্রোলজিক চলকগুলির সঙ্গে নদীখাত ক্রমের সম্পর নির্ণয় করা যায়। অর্থাৎ নদী অববাহিকার ক্ষেত্রফলের ওপর নদী ক্রমের সংখ্যা এবং নদীর গড় জলপ্রবাহ, বার্ষিক সর্বোচ্চ জলপ্রবাহ নির্ভর করে। অববাহিকা বড়ো হলে নদীক্রমের সংখ্যা বেশি হয় এবং সেখানে নদীর গড় জলপ্রবাহ, বার্ষিক সর্বোচ্চ জলপ্রবাহও বেশি হয়।

দ্বি-বিভাজন অনুপাতের সংজ্ঞা (definition of bifurcation ratio)

একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের নদীর সংখ্যার সহিত পরবর্তী উচ্চ পর্যায়ের নদীর সংখ্যার অনুপাতকে দ্বি-বিভাজন অনুপাত বলে।

Savindra Sing-এর ভাষায়-Bifurcation Ratio (R) which is related the breanching pattern of the drainage network, is defined as a ratio of number of streamed of a given order (NU), the number of stream of the next higher order (NU+1).of a given order (NU), the number of stream of the next higher order (NU + 1) .

হর্টন কর্তৃক (1932) প্রদত্ত সূত্র হল-R_{u} = (NU)/(NU + 1)

এখানে, R_{1} = নদীর দ্বি-বিভাজন অনুপাত।

U = নদী খাতের ক্রম/নদী পর্যায়ের ক্রম।

NU = বিবেচ্য পর্যায়ের নদীগুলোর মোট সংখ্যা। NU + 1 = পরবর্তী উচ্চতর পর্যায়ের নদীগুলোর মোট সংখ্যা।

উদাহরণ- যখন NU হল কোনো ক্রমের নদীর মোট সংখ্যা এবং NU + 1 হল পরবর্তী ক্রমের নদীর মোট সংখ্যা। যদি প্রথম ক্রমের (NU) নদীর সংখ্যা 64 হয় এবং দ্বিতীয় ক্রমের (NU + 1) নদীর সংখ্যা 16 হয়, তাহলে দ্বি-বিভাজন অনুপাত = 64/16 = 4

দ্বি-বিভাজন অনুপাতের গুরুত্ব (importance of bifurcation ratio)

জলনির্গম প্রণালীর বিভক্তিকরণ অনুপাত প্রধানত অববাহিকার আকৃতির উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে।

* ভূতাত্ত্বিক গঠনের (সমসত্ত্ব শিলার উপর গঠিত জলনির্গম প্রণালী) প্রভাবে একটি নদী অববাহিকার আকৃতি (shape) দীর্ঘায়ত হলে সুদীর্ঘ প্রধান নদীর সাথে অসংখ্য প্রথম পর্যায়ের উপনদী মিলিত হওয়ার জন্য R_{3} -এর মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় (R_{3}) এর মান 3 এর বেশি হয়।) তাহলে প্রধান নদীর নিম্নপ্রবাহে জলতল বৃদ্ধি প্রথম থেকে কম হবে, কারণ বর্ধিত প্রবাহ অধিক সময় ধরে বন্টিত হবে। অতএব R_{y} এর মান বৃদ্ধি পেলে নদী অববাহিকার ক্ষরণ, পলি পরিবহন বৃদ্ধি পায় ফলে প্লাবন হ্রাস পায়।

* অপর দিকে অসমসত্ত্ব শিলার উপর গঠিত অধিক উপনদী, প্র-উপনদীযুক্ত জলনির্গম প্রণালীর ক্ষেত্রে R_{y} এর মান কম (<3) হয়ে থাকে। অর্থাৎ নদী অববাহিকার আকৃতি দীর্ঘায়ত না হওয়ায় আপেক্ষিকভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রধান নদীর নিম্নপ্রবাহে জলপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় ফলে প্লাবন বৃদ্ধি পায়।

* পরিশেষে ধরা যাক দু'টি সম ক্ষেত্রফল ও সম দৈর্ঘ্যের নদী কিন্তু ভিন্ন আকৃতি ও দ্বি-বিভাগ অনুপাত বিশিষ্ট দুই নদী অববাহিকায় সমমাত্রা ও সমান সময় ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হল- [a] যে নদী অববাহিকার আকৃতি দীর্ঘায়ত নয় সেই নদী অববাহিকার R_{2} মান কম হয়, ফলে আপেক্ষিকভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রধান নদীর নিম্নপ্রবাহে জলপ্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। অপরপক্ষে [b] যে নদী অববাহিকার আকৃতি দীর্ঘায়ত সেই নদী অববাহিকার R বেশি হয়, ফলে বর্ধিত প্রবাহ অধিক সময় ধরে বন্টিত হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01