প্লেন টেবিল সার্ভে (PLANE TABLE SURVEY)
সংজ্ঞা (definition)
সমতল টেবিলের সাহায্যে যে জরিপ করা হয় তাকে সমতল টেবিল জরিপ বা প্লেন টেবিল সার্ভে বলে।
বৈশিষ্ট্য (characteristics)
1.প্লেন টেবিল জরিপ এক ধরনের লৈখিক (graphical) পদ্ধতির জরিপ ব্যবস্থা যেখানে জরিপ ক্ষেত্রের অন্তর্গত খুঁটিনাটি বস্তুসমূহকে পরিমাপ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাগজে প্লট করে নকশা তৈরি করা হয়।
2.এই পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ এবং একমাত্র পদ্ধতি যার খসড়া মানচিত্রটি জরিপ ক্ষেত্রেই তৈরি করা যায়।
3.এই পদ্ধতিতে সহজেই বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র প্রস্তুত করা যায়।
4.এই জরিপ ব্যবস্থায় কোনো ফিল্ড বুক বা ফিল্ড নোট লাগে না।
5.এই জরিপের ক্ষেত্র খোলা প্রান্তর হলে ভালো হয়। কারণ,এর ফলে চারিদিক পরিস্কারভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়।
6.প্লেন টেবিল জরিপের নীতিটি সদৃশ ত্রিভুজ গঠনের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
7.এই জরিপের ক্ষেত্রে স্টেশন ও অবজেক্ট-এর মধ্যে সংযোগকারী রেখার সমান্তরাল বরাবর খাতায় অবজেক্ট এবং স্টেশনের মধ্যে ট্রেভার্স অস্ত্রব্ধপ্রেত্রহ্মপ্রভ অঙ্কন করা হয়।
8.এই পদ্ধতির দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠের ওপর অবস্থিত কোন অবজেক্টের আপেক্ষিক অবস্থান নির্ণয় করা হয়।
উপকরণ (equipment):
প্লেন টেবিল জরিপের ক্ষেত্রে যে সকল সরঞ্জাম-এর প্রয়োজন হয়, সেগুলি হল-
1.তেপায়া সহ সমতল টেবিল (The plane table with a tripod stand)
2.অ্যালিডেড (alidade)
3.ইউ ফ্রেম বা ইউ ফর্ক (U-frame বা U-fork)
4.স্পিরিট লেভেল (spirit level)
5.ট্রাফ কম্পাস (trough compass)
6.তেপায়া (tripod)
7.ওলন (plumb bob)
8.ফিল্ড গ্লাস (field Glass)
9.রেনজিং রড (ranging rod)
10.পিন (pin)
11 .কাঠের পেগ (wooden pegs)
12.এই টেপ/ ফিতা (tape)
প্লেন টেবিল জরিপে ব্যবহৃত উপকরণ (equipment use in plane table survey)
প্লেন টেবিল বা সমতল টেবিল জরিপ করার যে সকল যন্ত্রাংশগুলি ব্যবহৃত হয়, সেগুলির বিবরণ নীচে দেওয়া হল-
① তেপায়া সহ সমতল টেবিল (the plane table with a tripoid stand): প্লেন টেবিল জরিপে টেবিলটা পাইন বা সেগুন কাঠের তৈরি একটি আয়তাকার সমতল টেবিল যা দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে যথাক্রমে 40 সেমি 30 সেমি অথবা 75 সেমি 60 সেমি মাপের হয়ে থাকে। টেবিলের নীচে মাঝ বরাবর পেতলের তৈরি প্যাঁচকাটা একটি ধাতব বস্তু লাগানো থাকে যা তেপায়ার সঙ্গে আটকানো যায়। তেপায়ার সাথে টেবিলটি এমনভাবে অবস্থান করে যাতে অনুভূমিক তলের যে কোনো দিকে ঘোরানো যায় (Fig. 7.49 দেখো)।
② অ্যালিডেড, (alidade): 50 সেমি লম্বা এক বিশেষ ধরনের পেতল বা অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি বুলার (Fig. 7.50)। বুলারের প্রান্ত বরাবর 'রশ্মি' (ray) টানা হয়। বুলারের একপ্রান্তে সূক্ষ্ম লম্বা ছিদ্রের একটি ধাতব শিট অর্থাৎ আই-ভেন (eye vane) কবজা দিয়ে লাগানো থাকে। অন্য প্রান্তে একইভাবে অবজেক্ট ভেন (object vane) লাগানো থাকে। অবজেক্ট ভেনের মাঝখানে ঘোড়ার লেজের চুল বা রেশমি সূতো আটকানো থাকে, যার দ্বারা স্টেশনের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। আই ভেন থেকে অবজেক্ট ভেনের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত রেখাকে দৃষ্টি রেখা (line of sight) বলে। এই রেখা বুলারের সমান্তরাল হয়। বস্তুকে দৃষ্টি রেখার সঙ্গে সমরেখায় এনে টেবিলের ওপর এর অবস্থান নির্ণয় করতে হয় (Fig. 7.49 দেখো)।
③ইউ ফ্রেম (U-fram) অথবা ইউ ফর্ক (U-fork): সমতল টেবিলকে তেপায়ার মাধ্যমে বসানো হয়। সমতল টেবিলের মধ্যে ইউ ফ্রেম (U-fram) লাগানো হয়। এই ইউ ফ্রেমটির ফ্রেমের নীচে ওলন (plumb bob) লাগানো থাকে। কাগজের ওপর ভূমির অনুরূপ স্টেশনকে চিহ্নিত করতে ইহা ব্যবহৃত হয়।
④ স্পিরিট লেভেল (spirit level): স্পিরিট ভর্তি একটি কাঠের বা ধাতব বা কাঁচের তৈরি একটি টিউব বা নলের ন্যায় যার মধ্যে বুদবুদ (air buble) থাকে। এই বুদবুদটি নলেন ঠিক মাঝখানে এনে বুঝতে হবে টেবিল লেভেল হয়েছে। টেবিলের চারকোণে আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি এটিকে বসিয়ে এবং তেপায়ার একটি পায়াকে সরিয়ে সরিয়ে টেবিলকে লেভেল করতে হয় (Fig. 7.51 দেখো)।
⑤ট্রাফ কম্পাস (trough compass): লম্বাকৃতি কাচ-ঢাকা বাক্সে চৌম্বক শলাকা পিভটের ওপর এমন ভারসাম্য অবস্থায় রাখা থাকে যাতে শলাকাটি সহজেই ঘুরতে পারে। এই চৌম্বক শলাকাটি সর্বদা চৌম্বক উত্তর মেরু নিদশে করে। উত্তর দিক নিয়ম ও কাগজে তা আঁকার জন্য ট্রাফ কম্পাসকে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া অন্য স্টেশনে টেবিলকে দিক বরাবর স্থাপন (orientation) করার জন্যও একে ব্যবহার করা হয় (Fig. 7:52 দেখো)।
⑥ তেপায়া (tripod): মাঝখানে ছিদ্র করা ত্রিভুজাকৃতি পুরু ধাতব বস্তুর তিন দিকে লম্বা কাঠের টুকরো এমনভাবে আটকানো থাকে যে কাঠের ওই পায়াগুলিকে মেলে ধরলে ভূমিতে ত্রিভুজ গঠিত হয় (Fig. 7.49 দেখো)। তেপায়ার ওপরে টেবিলকে আটকে রেখে জরিপ করা হয়।