শিলাস্তরের ভঙ্গিল গঠন (folder structure of rock bed)
ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রে ভঙ্গিল গঠনযুক্ত শিলাস্তর চিহ্নিতকরণের উপায় হল-
① ভাঁজ অক্ষের দুদিকে একই শিলাস্তরের পুনরাবৃত্তি শিলাস্তরের উপস্থিতি থাকলে।
② ভাঁজ অক্ষের দুদিকের শিলাস্তরের নতি বিপরীতমুখী হলে।
③ শিলাস্তরের উদ্ভেদের 'V'-গুলি বিপরীতমুখী হলে।
④ ঊর্ধ্বভজোর অক্ষ বরাবর প্রাচীন শিলা এবং অধোভঙ্গে নবীন শিলা অবস্থান করলে।
⑤ আয়াম রেখাগুলি ভাঁজ অক্ষের সমান্তরালে অবস্থান করলে।
⑥ অনুদৈর্ঘ্য পরবর্তী নদীগুলি আয়াম রেখার সমান্তরালে প্রবাহিত হলে।
⑦ বিপরা নদীগুলি নতির দিকে এবং নতির বিপরীত দিকে প্রবাহিত হলে।
ভাঁজের উপাদান (elements of fold):
1.ভাঁজ অক্ষ (fold axis): ভাঁজ প্রাপ্ত শিলাস্তরের সঙ্গে অক্ষতল যে রেখা বরাবর মিলিত হয় অর্থাৎ শিলার সবচেয়ে বেশি বক্রতাযুক্ত বিন্দুগুলিকে যোগ করলে নে রেখা পাওয়া যায় তাকে ভাঁজ অক্ষ বলে।
বৈশিষ্ট্য: ভাঁজ অক্ষ অনুভূমিক, উল্লম্ব অথবা হেলানো হয়।
2.অক্ষতল (axial plane): ভাঁজ প্রাপ্ত শিলাস্তরের সবচেে বেশি বক্রতাযুক্ত বিন্দুগুলিকে অনুসরণ করে শিলাস্তরে উপর থেকে নীচ পর্যন্ত কাটলে যে পৃষ্ঠ পাওয়া যায় তাকে ভাঁজের অক্ষতল বলে।
বৈশিষ্ট্য: অক্ষতল সরল অথবা বাঁকা হতে পারে এবং ভাঁজপ্রাপ্ত শিলাস্তরকে মোটামুটি একই রকম দেখতে এমন দুটো বাহুতে ভাগ করে দেয়।
3.বাহু (limb): ভাঁজ অক্ষ থেকে দুদিকে বিস্তৃত দুটি অংশ বা পার্শ্বকে ভাঁজের বায়ু বলে।
বৈশিষ্ট্য :বাহু দুটি সমান অথবা অসমান দৈর্ঘ্যের হতে পারে। সমান অথবা অসমান কোণে একই দিকে বা ভিন্ন দিকে হেলে থাকতে পারে।
4.শিলাস্তর অথবা ভাঁজের বাহুর নতি (dip of the limb): শিলাস্তর বা ভাঁজের বাহু অনুভূমিক তলের সাপেক্ষে যে অভিমুখে সূক্ষ্ম কোণে হেলে থাকে তাকে শিলান্তর বা বাহুর নতি বলে।
5.আয়াম (strike): অনুভূমিকতল শিলাস্তর বা স্তরায়ণ তলকে যে রেখা বরাবর ছেদ করে তাকে শিলাস্তরের আয়াম বলে।
বৈশিষ্ট্য: এটি সর্বদা নতি দিকের সঙ্গে অর্থাৎ শিলাস্তর যে দিকে হেলে থাকে তার সঙ্গে সমকোণে অবস্থান করে।
6.গ্রন্থিবিন্দু (hinge): শিলাস্তরে ভাঁজ পড়লে ভাঁজের বক্রতা সর্বত্র সমান হয় না। ভাঁজের যে বিন্দুতে বক্রতা সবচেয়ে বেশি সেই বিন্দুকে গ্রন্থি বিন্দু বলে। শিলাস্তরে যে এলাকায় বক্রতা সবচেয়ে বেশি হয় সেই এলাকাকে গ্রন্থি বলয় বলা হয়। একটি ভাঁজের দু'টি গ্রন্থিবিন্দুকে যোগ করলে যে রেখা পাওয়া যায় তাকে গ্রন্থিরেখা বলে। অর্থাৎ অক্ষতল যে রেখা বরাবর বেঁকে যায় সেই রেখা হল গ্রন্থি রেখা।
ভাঁজ-গঠনের সঙ্গ্যে ভূমিরূপের সম্পর্ক (landform in relation to Folding):
1.ভূমিরূপ ভাঁজ গঠন দ্বারা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়। ভাঁজযুদ্ধ শিলায় বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। শিলাস্তর ভাঁজপ্রাপ্ত হওয়ার পর প্রথমে, অর্থাৎ ক্ষয়চক্রের পূর্বে ঊর্ধ্বভঙ্গে শৈলশিরা (anticlinal ridge) এ অধোভঙ্গো উপত্যকা (synclinal valley) সৃষ্টি হয়।
2.অনুরূপভাবে প্রতিসম ভাঁজের উর্ধ্বভজো সমনর শৈলশিরা ও অধোভঙ্গে সমনত উপত্যকা সৃষ্টি হয়। কিন্তু অপ্রতিসম ভাঁজে শৈলশিরাও উপত্যকার একদিক খাড়াভাবে। অবস্থান করে এবং অন্যদিক মৃদুভাবে হেলে থাকে। এভাবে এইপ্রকার ভাঁজে ভৃগু গঠিত হয়।
3.অবনত ভাঁজের (plunge fold) ঊর্ধ্বভঙ্গে ক্রমশ ঢালু শৈলশিরা কিংবা স্পার এবং অধোভঙ্গে ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত ও উন্মুক্ত উপত্যকা সৃষ্টি হয়।
4.ভাঁজযুক্ত শিলাস্তরের প্রাথমিক পর্যায়ে ভূমিরূপ হিসাবে ঊর্ধ্বভঙ্গে শৈলশিরা বা পর্বত ও অধোভঙ্গে উপত্যকা সৃষ্টি হয়। এই সময়ে ভূমিরূপের বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয় না। কিন্তু ক্ষয়চক্রের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে শিলালক্ষণ জনিত কারণে দুর্বল ভাঁজ অক্ষ অংশে পরবর্তী নদী ও লম্ব অনুগামী উপনদী ঊর্ধ্বভঙ্গে গঠিত শৈলশিরাকে অধোভঙ্গের তুলনায় অতিদ্রুত ক্ষয় করতে থাকে এবং অবশেষে ঐ শৈলশিরা অংশটি উপত্যকায় পরিণত হয়। কিন্তু অধোভঙ্গ উপত্যকা সেই তুলনায় খুব কম ক্ষয় হওয়ায় এটি তখন উচ্চভূমিরূপে অবস্থান করে।
5.ভূতাত্ত্বিক গঠনের সঙ্গেঙ্গ এই ধরনের ভূমিরূপ মিল খায় না, অর্থাৎ বিপরীত সম্পর্ক নির্দেশ করে। ক্ষয়চক্রের এই পর্যায়ে ঊর্ধ্বভঙ্গে উপত্যকা ও অধোভঙ্গে শৈলশিরা গঠিত হয়। এধরনের ভূমিরূপকে বৈপরীত্য বা উল্টানো ভূমিরূপ (inverted relief or topography) বলা হয়।
6.ঊর্ধ্ববঙ্গোর শীর্ষদেশে নদীর নিম্নক্ষয়ের ফলে পরবর্তী নদী-উপত্যকার দু-পাশে সমান ঢালবিশিষ্ট ভূমিরূপের সৃষ্টি হলে সমনত শৈলশিরা (homoclinal ridge) সমনত উপত্যকা (homoclinal valley) গঠিত হয়।