নিরক্ষীয় চিরসবুজ অরণ্যের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য
নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 10° অক্ষরেখা পর্যন্ত অর্থাৎ 10° উত্তর থেকে 10° দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে নিরক্ষীয় চিরসবুজ অরণ্য লক্ষ করা যায়। । নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের চিরসবুজ অরণ্যের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
[1] বৈচিত্র্যময় প্রজাতি :
এই বনভূমি অসংখ্য প্রজাতির গাছে পরিপূর্ণ। এত বেশি সংখ্যক প্রজাতি অন্য কোনো বনাঞলে দেখা যায় না। এই অরণ্যাঞ্চলে কয়েক হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মায়।
[2] উদ্ভিদের দ্রুত বৃদ্ধি :
সমস্ত উদ্ভিদ খুব দ্রুত জন্মায় ও দ্রুত বাড়ে। কয়েক দিনের মধ্যে গাছগুলি দু-এক মিটার বেড়ে যায়।
[3] চিরগোধূলি অঞ্চল :
বনভূমি অত্যধিক ঘন এবং জঙ্গলে পরিপূর্ণ। বনভূমি এত ঘন যে, সূর্যালোক মাটি পর্যন্ত পৌঁছোতে পারে না। স্থানে স্থানে দিনের বেলায় যেন রাতের অন্ধকার নেমে আসে। তাই, এই বনাঞ্চলকে চিরগোধূলি অঞ্চল (Land of Eternal Twilight) বলে।
[4] আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে বনভূমি :
এই বনভূমি আর্দ্র ও স্যাতসেঁতে, মাটি খুবই নরম। বনের মধ্যে প্রবেশ করা খুবই কষ্টসাধ্য। [5] সূর্যালোক লাভের প্রতিযোগিতা : গাছগুলি খুবই লম্বা হয়। সূর্যালোকের জন্য গাছগুলির মধ্যে এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা চলে এবং তারা দ্রুত লম্বা হয়।
6 চিরসবুজ অরণ্য:
গাছের পাতাগুলি বেশ প্রশস্ত ও লম্বা হয় এবং সারা বছর ধরে সবুজ থাকে। তাই, এই অঞ্চলের বনভূমি চিরহরিৎ অরণ্য নামে পরিচিত।
7 চাঁদোয়া সৃষ্টি:
গাছগুলি ডালপালা বিস্তার করে গায়ে গায়ে লেগে থাকে এবং খোলা ছাতার মতো চাঁদোয়া (canopy) তৈরি করে।
[8] দুর্গম অরণ্য:
বনভূমির তলদেশ লতাগুল্ম, আগাছা ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ থাকে। ফলে, বনের মধ্যে এক স্থান থেকে অন্যত্র যাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। এজন্য এই অরণ্য দুর্গম।
9 অল্প জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির অনেক গাছের অস্তিত্ব :
এই অরণ্যে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পাশাপাশি জন্মায়। প্রতি হেক্টরে প্রায় 20 থেকে 40টি প্রজাতির গাছ দেখা যায়। এজন্য গাছ নির্বাচন করা এবং তা কেটে ফেলা কষ্টসাধ্য।
10 পরগাছার অস্তিত্ব :
গাছের শাখাপ্রশাখায় অর্কিডজাতীয় পরগাছা জন্মায়। এক গাছ থেকে অন্য গাছে মোটা কাছির মতো লতানে গাছ বিস্তৃত হয়। এদের লায়না বলে। এক-একটি লায়না কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হয়।
